ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিক্ষার্থীদের নতুন শপথবাক্য

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ২৫ মে ২০২৫

শিক্ষার্থীদের নতুন শপথবাক্য

‘আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না। হে মহান আল্লাহ মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন...’ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতনের পর ২০ আগস্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শপথ পরিবর্তন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এবার এসেছে স্কুল-কলেজের শপথ বদলানোর নির্দেশ। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই শপথ পাঠ করতে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে উভয় মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে। চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সব ধরনের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই ধরনের শপথবাক্য পাঠের নির্দেশনা জারি করেছে। সাধারণত ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘অ্যাসেম্বলি’ বা প্রাত্যহিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে হালকা শরীর চর্চাসহ পাঠ করানো হয় শপথবাক্য। আবার প্রতিষ্ঠানভেদে কোথাও নিজস্ব শপথ পড়ানোর ঐতিহ্য রয়েছে। তবে সব শপথের মূল বক্তব্য দেশপ্রেম। এছাড়া দেশের স্কুলগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। ২০২২ সালের আগে এ শপথটিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ করা হতো। ২০১৩ সালের আগে ‘অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না’ অংশটি বাদে বাকি শপথবাক্যটি পাঠ করা হতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাবেশে। দুদকের সুপারিশে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল শপথে ‘অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না’ অংশটি যুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শপথ বাক্য পরিবর্তন করে।
ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, শপথের উৎপত্তি প্রচলিত হয়েছে প্রাচীন ধর্মীয় রীতিনীতি থেকে। তবে দুনিয়া জুড়ে শপথ অনুষ্ঠান কিংবা শপথনামা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং আধুনিক আইনি-বিচারিক কাঠামোতেও স্বীকৃত অনুশীলনে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন ও আদালতের কার্যক্রমে শপথ পরিচালনার সংস্কৃতি চলমান। অ্যাংলো-আমেরিকান আইনি ব্যবস্থায়ও শপথ নিতে দেখা যায়। দেশপ্রেম ও নৈতিক শিক্ষার বিকাশে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শপথবাক্য শুধু পাঠ নয়, অন্তরে ধারণ করা চাই। আমরা দেখেছি অতীতে বহু জনপ্রতিনিধি শপথ নিয়েও অনৈতিক ও দেশের ক্ষতিকারক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সেবার মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল নাগরিক হয় সেই লক্ষ্যেই নতুন শপথ নেওয়ার নির্দেশনা এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

প্যানেল

×