
প্রতিনিয়ত অনলাইন জুয়ার আগ্রাসনে নাজেহাল তরুন প্রজন্ম। বিভিন্ন উপলক্ষ ঘিরে চলে জুয়ার অবাধ বিচরণ। বর্তমানে অনলাইন জুয়া সমাজিক সমস্যা রূপে আবিভূত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে জুয়ার ধরনে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ইন্টারনেটের অবাধ প্রবাহের কল্যাণে জুয়া এখন ডিজিটালাইজ হয়ে গেছে। অনলাইনে ঘরে বসে যেকোন জুয়া ধরা কিংবা খেলা যায়। বিশেষ করে অনলাইন ক্যাসিনো, আইপিএল, বিভিন্ন ক্রিকেট ও ফিটবল লীগকে কেন্দ্র করে চলে জুয়ার রমরমা আসর। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জুয়া খেলাও হাতের মুঠোয়। এক সময় চা-য়ের দোকান কিংবা গ্রাম বা শহরের মোরে মোরে জুয়াড়িরা একত্রিত হয়ে জুয়ায় অংশ নিত। তবে বর্তমানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অনলাইনের বদৌলতে যেকোন জায়গায় থেকে জুয়া ধরা যায়। তরুন প্রজন্ম সৃজনশীল কাজ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। অনেকেই শুয়ে, বসে আর মোবাইল স্ক্রলিং করে ব্যস্ত সময় পার করে। অলসতায় দিনপাত করতে কার ভালো লাগে? আর এই অলস সময়ে হরেকরকম অপকর্মে জড়িত হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই। অনলাইন জুয়া এর অন্যতম। পড়াশোনার বালাই নাই, নিজের টাকা খরচ করে খেলে জুয়া। যার কারনে অনেকেই আজ সর্বসান্ত। সঞ্চিত অর্থ ফুরিয়ে গেলে বাড়ি থেকে টাকা চুরি করে হলেও খেলে জুয়া, ধরে বাজি। দিন দিন ভয়ংকর নেশায় পরিণত হচ্ছে নিরব ঘাতক জুয়া। এই জুয়ার কবলে একবার পড়লে, ভয়ংকর জুয়ার নেশ কাটিয়ে উঠা কঠিন। নিজের সাথে নিজের দৃঢ় সংগ্রাম করতে হয়। জুয়া বড় লোভনীয় একটি নেশা।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন হয়েছে জুয়ার ধরনে। অনলাইনে জোটবদ্ধ হয়ে বা একাধিক জুয়া ধরা যায়। ইন্টারনেটের ফলে মোবাইল যেন হয়ে গেছে জুয়া খেলার উন্মুক্ত মাঠ। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রলিং করলে হরহামেশাই জুয়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। সেই সাথে অনলাইনে রয়েছে শত শত জুয়া খেলার প্লাটফর্ম এবং এগুলো প্রমোট করছে তথাকথিত তারকারা। জুয়ার প্লাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে খেলা যায়। জুয়া সেই সাথে লাইভ ক্যাসিনো ও বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস সম্প্রচার করা হয়।
তাস কিংবা লুডু তো রয়েছে সেই সাথে জুয়া ধরায় বা খেলায় এসেছে বৈচিত্র্য। কোন দল জিতবে, কয়টি গোল করবে কিংবা এক ওভারে কত রান নিবে এমনকি ক্রিকেট খেলায় প্রতি বলে বলে ধরা হয় জুয়া। তরুন সমাজে জুয়া যেন মহামারীর আকার ধারন করেছে। জুয়ার নেশায় মগ্ন এমন তরুণদের দ্বারা সমাজে অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। জুয়ার টাকা সংগ্রহ করার জন্য চুরি, ডাকাতি কিংবা ছিনতাই যেকোন অপরাধ যেন তাদের কাছে নস্যি। জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতে মমতাময়ী মা কিংবা নিজ স্ত্রীকে পর্যন্ত নির্যাতন সমাজে অহরহ দেখা যাচ্ছে। আমাদের সমাজে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে সমাজ বিধ্বংসী জুয়ার আসর বসছে নিয়মিত। কিন্তু সব দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। বর্তমানে টাকা লেনদেনের মাধ্যমও সহজ। সব মিলিয়ে দেখা যায় জুয়া খেলা এখন আরো সহজ হয়ে গেছে। বিভিন্ন কারনে হতাশ কিংবা বেকার এমন যুবক কিংবা যুবতীদের দ্বারা আমাদের সমাজে জুয়ার প্রচলন ও বিস্তার বেশী হচ্ছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া একশ্রেণীর শিক্ষার্থী দলবদ্ধ হয়ে অনলাইনের বদৌলতে জুয়ার নেশায় হাত বাড়াচ্ছে। সেই সাথে বন্ধুদের প্ররোচনায় কৌতুহলী হয়ে অনেকে জুয়ার নেশায় ডুব দেয়। এছাড়া আর্থিক লোভ তো আছেই। অনেকে আর্থিক লোভে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে জুয়া খেলায় মেতে উঠে। দিনশেষে অনেক জুয়াড়ি সব হারিয়ে নিস্তব্ধ হচ্ছে।
জুয়ার ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় সমাজের সর্বমহলের সোচ্চার হতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। মোবাইলে যেহেতু জুয়া খেলা যায় সেহেতু অভিভাবকদের উচিত নিয়মিত সন্তানের মোবাইল মনিটরিং করা। সন্তানের মধ্যে কোন অসঙ্গতি লক্ষ করলে জানার চেষ্টা করুন এবং সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। তরুণ সমাজের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে জুয়ার বিস্তার অনেকটাই কমানো সম্ভব। সেই সাথে জুয়া নামক ভয়ংকর খেলা বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন থাকবে সর্বোচ্চ স্তর থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত জুয়া বন্ধে ব্যাপক তল্লাশি ও সচেতনতামুলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। এতে হয়তো জুয়ার বিস্তার অনেকাংশে লাগব হবে। জুয়া নামক বিষফোঁড়া আমাদের বন্ধ করতে হবে। না হয় আমাদের সমাজ এবং তরুণ প্রজন্ম বিপদগামী হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে। জুয়া আমাদের সমাজে নিরবে বিষ ঢালছে। জুয়া খেলা এবং জুয়া ধরা বন্ধে অভিভাবক, সচেতন নাগরিক ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
[email protected]
প্যানেল