ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ

বন্ধ হোক মাফিয়াতন্ত্র শুদ্ধ হোক রাজনীতি

খালিদ ইবনে আমিন

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৩ মে ২০২৫

বন্ধ হোক মাফিয়াতন্ত্র শুদ্ধ হোক রাজনীতি

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার দায়ে বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ব্রিটিশ ভারতে উনিশ শতকের আগে এ অঞ্চলে জনগণের কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল না। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ ধর্ম বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ছায়াতলে সমবেত হয়। যা প্রতিষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর ১৮৮৫ সালে। উপমহাদেশের নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে গোটা ভারতবর্ষে কংগ্রেসের তখন জয়জয়কর অবস্থা। ভারতবাসী স্বাধীনতার নতুন স্বাদ পেতে উদগ্র। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেসের তখন একক আধিপত্য। কট্টর হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন ও উগ্র সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির ফলে মাত্র  দুই দশকের ব্যবধানে কংগ্রের আবেদন ম্লান হতে থাকে।
ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান ছিল অসাম্প্রদায়িক দর্শনে সিক্ত। ক্ষমতালোভী কিছু অসাধু ব্যক্তির কায়েমি স্বার্থের কারণে কখনো কখনো সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়েছে উভয় সম্প্রদায়, শিখ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মাঝে। ১৯০৬ সালে ভারতবর্ষের মুসলমানদের রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে ঢাকার শাহবাগে  মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নতুন এ দলটি মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশ অর্জনের লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেয়। এর মাধ্যমে নতুন আশার সঞ্চার হয়। মূলত আওয়ামী লীগের জন্ম-উৎস মুসলিম লীগের কোল থেকে। ইতিহাসের পাঠ্যধারায় আমরা জানি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। ‘পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে ‘অসুস্থ’ দেখিয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদকের পদটি বাগিয়ে নেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তান সরকার আওয়ামী লীগকে প্রথম নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া বাকশাল গঠনের সময় শেখ মুজিব নিজেই তার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব হত্যার পর আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, সাতই মার্চের ভাষণসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে শেখ মুজিবের অবদান প্রবাদতুল্য। কিন্তু কথা হলো, সাতই মার্চে যার জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে  দেশের গণমানুষ স্বাধীনতার জন্য পাগলপারা হলো, অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিলো দেশের আপামর জনসাধারণ, যার আকাশচুম্বী  জনপ্রিয়তা বিশ্বের অন্যান্য রাজনীতিবিদদের আন্দোলিত করেছে, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা যাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিও দেওয়া হয়েছিল, এমন একজন গণমুখী জাতীয় নেতাকে কেন পরিবারের মাসুম বাচ্চাটিসহ ২৬ জন নিকট আত্মীয়কে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়? কেন শেখ মুজিব নির্বংশ হলেন? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একজন লড়াকু সৈনিক কেন ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠলেন? রাজনৈতিক তৈল মর্দনে কেন নিজকে সিক্ত করলেন? নিজ সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না? এমনকি নিজ দলের দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণেও তিনি ব্যর্থ ছিলেন। ছেলে শেখ কামালের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ ছিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবের  (১৯৭২-১৯৭৫) শাসনামলে ব্যাংক ডাকাতি থেকে শুরু করে সহায়-সম্বলহীন অসহায় নিরন্ন মানুষের কম্বল চুরির মাধ্যমে যে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির অভিষেক বাংলাদেশে হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা তার গুনধর কন্যা শেখ হাসিনার সারে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে, আর্থিক খাত ধ্বংস এবং রিজার্ভ লুট করে  হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে পিতার ধারা ধরে রেখেছিল। সম্প্রতি টিআইবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার সরকারের আমলে প্রতি বছর ১০-১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। দেশের বুদ্ধিজীবী মহল মনে করেন, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষ থেকে যে পরিমাণ টাকা ব্রিটেনে পাচার করেছে, শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় তার চেয়ে বেশি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোনো নীতি ছিল না। এই মহাসত্যকে অস্বীকার করার নৈতিক ভিত্তি খোদ আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদেরও নেই। পিতা ও কন্যার শাসনকালের বৈশিষ্ট্য অভিন্ন। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি এবং দুঃশাসনের ধরন থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, এরা পিতা ও কন্যা উভয়ই বাংলাদেশকে পৈতৃক সম্পত্তি মনে করতেন।
‘উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা অপচয় বা নষ্ট হয়েছে। গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা লুটপাট করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে মূলত রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং বাড়তি খরচ দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ লুটপাট করেছে বিদায়ী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা, আমলা ও সুবিধাভোগীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার বা ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থ এডিপির মাধ্যমে খরচ হয়েছে। এডিপির মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এর ২৩-৪০ শতাংশ অপচয় ও লুটপাট হয়ে গেছে। ১৪ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চাঁদাবাজি, ঘুষ ও বাড়তি খরচের নামে চলে গেছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
শেখ মুজিবের পতনের পর তার দুর্নীতি নিয়েও শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয় পঁচাত্তরের ১৪ অক্টোবর। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি হতে ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কোনো স্টক বই ও ক্যাশ বই পাওয়া যায়নি ঢাকার রেডক্রস অফিসে। বিচারপতি সিদ্দিকী শেখ মুজিবের শাসনামলের সাড়ে তিন বছরের রেডক্রসের কার্যকলাপ সংবলিত একটি ১৬ পৃষ্ঠার ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনে  তিনি বাংলাদেশ রেডক্রসের কার্যকলাপের আংশিক চিত্র তুলে ধরেন। ওই সময় বহুল আলোচিত বিষয় ছিল ব্যাংক ডাকাতি ও রেডক্রসের কম্বল চুরি। খোদ শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের বিরুদ্ধেও ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ ছিল। শ্বেতপত্রে আওয়ামী লীগ নেতা ও রেডক্রসের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার দুর্নীতির বিবরণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য দান হিসেবে আসা অর্থ ও সাহায্য পুরোপুরি আত্মসাৎ করা হয়। গরিব মানুষের জন্য লাখ লাখ কম্বল আওয়ামী লীগ নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। রিলিফের চাল, গম, খাদ্য শস্য, বিস্কুট গাজী গোলাম মোস্তফার হাঁস-মুরগি-কুকুরের জন্যও ব্যবহার হয়েছে। শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য রেডক্রসের পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী ছিল। কিন্তু সেগুলো শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি। ফলে, না খেয়ে হাজার হাজর  শিশু মারা যায়। গাজী গোলাম মোস্তাফাও অবৈধ সম্পদ নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান এবং ১৯৮১ সালের ১৯ জানুয়ারী রাজস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় সপরিবারে নিহত হন।
আগস্ট যেন শেখ পরিবারের জন্য এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। আগস্ট মানেই ফ্যাসিবাদের পতন, অন্যায়,  অনাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিপীড়িত মানুষের গণবিজয়। একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মুজিবের পতন ঘটেছিল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট, কন্যা শেখ হাসিনার পতনও ঘটেছে সেই আগস্টের পাঁচ তারিখে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় দল হিসেবে, যেসব শাস্তির সম্মুখীন হবে সেগুলো হলোÑ
এ আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ (সত্তার, অর্থাৎ এক্ষেত্রে আ. লীগের) সদস্য হন বা সদস্য বলিয়া দাবি করেন, তাহা হইলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন এবং উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনের জন্য তিনি অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড, অথবা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। নিষিদ্ধ সত্তা সমর্থনের ক্ষেত্রে আইনের ৯ (১) উপ-ধারায় বলা হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ১৮ এর অধীন কোনো নিষিদ্ধ (সত্তাকে) সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে কাহাকেও অনুরোধ বা আহ্বান করেন, অথবা নিষিদ্ধ (সত্তাকে) সমর্থন বা উহার কর্মকাণ্ডকে গতিশীল ও উৎসাহিত করিবার উদ্দেশ্যে কোনো সভা আয়োজন, পরিচালনা বা পরিচালনায় সহায়তা করেন, অথবা বক্তৃতা প্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নিষিদ্ধ সত্তার (আ.লীগের) জন্য সমর্থন চাহিয়া অথবা উহার কর্মকাণ্ডকে সক্রিয় করিবার উদ্দেশ্যে কোনো সভায় বক্তৃতা করেন অথবা রেডিও, টেলিভিশন অথবা কোনো মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচার করেন, তাহা হইলে তিনি অপরাধ সংঘটন করিবেন। (৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) অথবা (২) এর অধীন কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন, তাহা হইলে তিনি অনধিক সাত বছর ও অন্যূন দুই বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও আরোপ করা যাইবে।
এই আইনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে আশ্রয়দানকারীও শাস্তির সম্মুখীন হবেন। এ বিষয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৪ ধারার (১) উপ-ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি, অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন জানিয়াও বা উক্ত ব্যক্তি অপরাধী ইহা বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও, শাস্তি হইতে রক্ষা করিবার অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তিকে আশ্রয়দান করেন বা লুকাইয়া রাখেন তাহা হইলে তিনিÑ
(ক) উক্ত অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হইলে, অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও আরোপ করা যাইবে; অথবা (খ) উক্ত অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যে কোনো মেয়াদের কারাদণ্ড হইলে, অনধিক তিন বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডও আরোপ করা যাইবে। (২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আশ্রয়দান বা লুকাইয়া রাখিবার অপরাধ স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা বা মাতা কর্তৃক হইলে, এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে না। (৩) যেক্ষেত্রে কোনো সত্তা কর্তৃক আশ্রয় প্রদানের অপরাধ সংঘটিত হয়, সেইক্ষেত্রে উহার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্য কোনো নামের পদধারীর প্রতি উপ-ধারা (১) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে সমর্থ হন যে, উক্তরূপ অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছিল বা উহার সংঘটন নিবৃত্ত করিবার জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করিয়াছিলেন।
১৮. নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তালিকাভুক্তকরণ
১৮(১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণ কল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।
(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোনো ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে বা তফসিল হইতে বাদ দিতে পারিবে অথবা অন্য কোনোভাবে তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে। এ আইনের ২০ ধারার অধীনে আওয়ামী লীগের সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও জব্দ করার ক্ষমতাও পাচ্ছে সরকার।
২০ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তিকে ধারা ১৮ এর বিধান অনুসারে তালিকাভুক্ত করা হয় বা কোনো সত্তাকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহা হইলে, এই আইনে বর্ণিত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও সরকার, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, নিম্নবর্ণিত যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে, যথা:- (ক) উক্ত সত্তার কার্যালয়, যদি থাকে, বন্ধ করিয়া দিবে; (খ) ব্যাংক এবং অন্যান্য হিসাব, যদি থাকে, অবরুদ্ধ করিবে, এবং উহার সকল সম্পত্তি জব্দ বা আটক করিবে; (গ) নিষিদ্ধ সত্তার সদস্যদের দেশ ত্যাগে বাধা নিষেধ আরোপ করিবে; (ঘ) সকল প্রকার প্রচারপত্র, পোস্টার, ব্যানার অথবা মুদ্রিত, ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল বা অন্যান্য উপকরণ বাজেয়াপ্ত করিবে; এবং (ঙ) নিষিদ্ধ সত্তা কর্তৃক বা উহার পক্ষে বা সমর্থনে যে কোনো প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করিবে। (২) নিষিদ্ধ সত্তা উহার আয় ও ব্যয়ের হিসাব এতদুদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করিবে এবং আয়ের সকল উৎস প্রকাশ করিবে। (৩) যদি প্রতীয়মান হয় যে, তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সংঘঠনের সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জিত হইয়াছে অথবা এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা হইলে উক্ত সম্পত্তি আদালত কর্তৃক রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হইবে।
জুলাই-আগস্ট উত্তর রাজনৈতিক কালবৈশাখী থেকে বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো কোনো শিক্ষা নেবে কি নিজেদের শোধরাতে। নাকি দেশের জনগণ যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকবে তা সময়ই বলে দেবে।

লেখক : সাংবাদিক

প্যানেল

×