
মেডিটেশন বা ভাবনা
মেডিটেশন বা ভাবনা আমরা যা বলি না কেন, এটি মনপ্রাণ শান্ত হওয়ার এক উত্তম পদ্ধতি। সকলে এটা করতে পারে। আমরা যদি প্রতিদিন একটু সময় বের করে ভাবনা করতে পারি তাহলে নিজের উপকার ব্যতীত অপকার হবে না। সবচেয়ে ভালো সময় হলো গভীর রাতে। আমরা প্রথমে পাঁচ-দশ মিনিট করে মেডিটেশন করতে পারি। পরে একটু একটু করে সময় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
বাস্তবতা হলো, দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাতে দিন পার হয়ে যায় মেডিটেশন করব কখন? তাছাড়া খালি পেটে মেডিটেশনে মন স্থির থাকে না। একজন অন্যজনকে মেডিটেশনের সুফল বোঝাতে চেষ্টা করছিল এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। সামাজিক বিধিবদ্ধ নিয়ম পালন করার জন্য আমিও গিয়েছি সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। তাদের কথোপকথন শুনে সেখানে দাঁড়াতেই প্রথম লোকটি অন্নের জন্য ছুটে গেল। লোকটি ট্যাক্সিচালক।
এক পরিবারকে সেখানে এনেছিল। কারণ সেখানে মেডিটেশন কোর্সও চলছিল। ট্যাক্সিচালক এত লোক সমাগম দেখে জানতে চাইল, এখানে কিসের আয়োজন? সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকা, বর্তমান সমাজে যা অবস্থা বিরাজ করছে সেই দিক দিয়ে চিন্তা করলে ট্যাক্সিচালকরা জানতে চাওয়াটা সঠিক। খেটে খাওয়া দিনমজুরদের ভাবনা করার তেমন সুযোগ কই? যাদের অন্নের চিন্তা নেই, পারিবারিক ঝামেলা নেই, সুখে যাদের দিন কাটছে তারাই মেডিটেশন কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারে।
মেডিটেশন বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। কোর্সটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বেশিরভাগ সময় নানা টেনশনে থাকি। দিন দিন যেন টেনশন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেনশন দূর করতে হলে মেডিটেশন বা ভাবনা করার জুতসই কারণ রয়েছে। আমরা দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে অংশগ্রহণ না করে টেনশনমুক্ত থাকার জন্য ১ ঘণ্টা বা আধাঘণ্টা মেডিটেশন করতে পারি। অতিরিক্ত টেনশন নিজেই একটি রোগ।
পরবর্তীতে এটা আরও নানাবিধ রোগবালাই টেনে আনে। টেনশনে ঘুম হয় না, ব্রেণ ঠিকমতো রেস্ট পায় না। কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও কিছু কিছু কারণে আমাদের অনেক সময় বদহজমও হতে পারে। হার্টের নানা সমস্যা দেখা দেয় একমাত্র টেনশনের কারণে। তাই চিকিৎসকের আশ্রয়ে না গিয়ে এবং ওষুধ সেবন না করে ঘরে বসে চেষ্টা করে দেখতে পারি টেনশনমুক্ত থাকার জন্য। টেনশনমুক্ত থাকা মানে রোগমুক্ত থাকা।
প্রাচীনকাল থেকে যোগব্যায়াম বা ধ্যান খুবই একটি পরিচিত বিষয়। আধুনিক যুগে চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন ‘মেডিটেশন’। এটি আপনার মনকে রাখবে শান্ত, শরীরকে রাখবে ফুরফুরে। ঘরে বসে আমরা এ অভ্যাসটা করতে পারি। শুয়ে বসে, যেভাবে ইচ্ছা করা যায়। প্রথমে মন ও শরীরে শিথিলভাব আনুন, চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন, মাথা-পা একই রেখা বরাবর রেখে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকুন। মাথা থেকে সব চিন্তা দূর করুন।
এভাবে যদি পারা না যায় তাহলে একশ’ থেকে এক পর্যন্ত উল্টো দিকে আমরা গুনতে পারি। এতেও যদি আমরা ফেল মারি তা হলে যার যার ধর্মীয় বিধিবিধান মতে বলতে পারি-‘হে মহান দয়াময় আমার মন থেকে খারাপ এবং দুশ্চিন্তা অপসারিত করে আমার ওপর শান্তি বর্ষিত করুন। ‘এভাবে নীরবে আধঘণ্টা করা গেলে মনের অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। এতে নিজেকে সতেজ অনুভূত হবে। যারা নিয়মিত নামাজ/প্রার্থনা করেন তাদের জন্য এ ব্যবস্থা আরও সহজ। নামাজে ও প্রার্থনায় মন শান্ত থাকে, নিজের মধ্যে এক উৎফুল্ল ভাব জাগ্রত হয়।
মাথায় শুধু থাকে একজন ‘মহাশক্তিশালী’ অদৃশ্যভাবে সামনে আছেন। তিনি দেখছেন ও শুনছেন। এ সময় মাথা, শরীর ও মনের মনোযোগ একই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তাই সর্বশেষ প্রার্থনায় যখন মনের সব কথা বলবেন তখন আপনা-আপনি নিজের ওপর আস্থা ফিরে আসবে। অদৃশ্যভাবে দয়াময় সাহায্য করবেন এই ভেবে আপনি হালকাবোধ অনুভব করবেন।
বিপদে যখন কেউ সাহায্য করতে আসে না, রোগ শয্যায় যখন সকলে আশা ছেড়ে দেয় তখন কি করবেন? ওই সময়ে টেনশন যেন অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরে। ইবাদত বা প্রার্থনায় টেনশনকে অপসারিত করা গেলে সব সমস্যার উপস্থিত সমাধান হয়েছে বলে মনে হয় যে ভাব কাউকে প্রকাশ করতে পারছেন না, প্রার্থনায় তা বললে মন থেকে ‘চাপ’ দূর হয়, মন হালকা হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, মনই কন্ট্রোল করে শরীরকে।
মন সুস্থ থাকলে রোগ সহজে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না। মানুষ যে মুহূর্তে যা চিন্তা করে, সেই মুহূর্তে মাথা ও শরীর থেকে হরমোন ও এনজাইম এসে সেই চিন্তা মতো কাজ করে। প্রার্থনা করলে ওই হরমোন ও এনজাইমগুলো শরীরে ভালোভাবে কাজ করে এবং শরীরকে রাখে ভালো।
আমরা অনেকে বলি, অদৃশ্য দয়াময়কে দেখতে পাই না। তাই মনেযোগ সহকারে প্রার্থনাও করতে পারি না। বাতাস আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু অনুভব করতে পারি। বিপদে পড়লে আমরা দয়াময়কে স্মরণ করি। তিনিই অদৃশ্যভাবে আমাদের সাহায্য করেন। আমরা হই বিপন্মুক্ত। পরক্ষণে আবার সেই কথা ভুলে যাই। তার একমাত্র কারণ হলো আমাদের মন ‘অস্থির’। মনকে স্থির করা গেলে সবকিছু সহসা অনুভব করা যায়।
তাই বলছিলাম, মন স্থির রাখতে টেনশনমুক্ত থাকুন এবং দয়াময়ের সাহায্য প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকুন। এতে মনোবল শতভাগ বেড়ে যাবে যদি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাস রেখে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছার চেষ্টা করি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে মন অনেকটা সতেজ হয়। তখন মনে হয়- ‘আমিই সবার রাজা, এই রাজার রাজত্বে’। চিকিৎসকরাও বলেন, আগে মন সুস্থ, তারপর শরীর সুস্থ। এতে নিরাময় আনন্দে মনপ্রাণ ভরে ওঠে। পরিশেষে সকলের নিরোগ দীর্ঘজীবন কামনা করছি।
লেখক : সাংবাদিক