বাংলাদেশ অপার সৌন্দর্যময় একটি দেশ। অপার সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই দেশটি সামাজিক ভাবেও একতাবদ্ধ। বাংলার গ্রামীন পরিবেশে বেড়ে উঠা যেন আশীর্বাদ স্বরুপ। গ্রামের মানুষ সহজ-সরল জীপন-যাপন করতে পছন্দ করে। একসময় গ্রামে শিক্ষার তেমন প্রসার না থাকলেও, বর্তমানে গ্রামে স্কুল, কলেজের ছড়াছড়ি। গ্রামের বেশিরভাগ প্রবীন স্বল্প শিক্ষিত হলেও তারা ছিলো সামাজিক ভাবে একতাবদ্ধ। তাদের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা দেখা যায়। গ্রামের পরিবেশ অনেক শান্তিময় হয়ে থাকে। গ্রামের বেশির ভাগ জায়গা গাছপালায় পরিপূর্ণ। গাছপালার কারনে গ্রামে ফুটে উঠেছে অন্য রকম এক সৌন্দর্য।
এখানে সামাজিক ভাবে সবাই একতাবদ্ধ থাকায়, একজন আরেকজনের বিপদে পাশে থাকে নির্দ্বিধায়। গ্রামের চায়ের দোকানগুলো রাজনৈতিক আলাপের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। রাজনীতি, সমাজনীতি, ব্যক্তি আলাপ নিয়েই চায়ের দোকান গুলো সব সময় মশগুল থাকে। খাল-বিল, নদী-নালার কারনে গ্রামের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। শহরের মডার্ন জীবনের বিপরীত জীবন বলা যায় গ্রাম্য জীবনকে। শিশু-কিশোরদের বিকেলবেলার হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলা যেনো গ্রামকে নিয়ে গেছে অনন্য মাত্রায়। সন্ধ্যা হলে পড়তে বসা, অল্প রাতে ঘুমিয়ে যাওয়া গ্রামীন জীবনকে আরো সুন্দর করে তুলে। গ্রামের মানুষ খুব বেশি স্বাস্থ্য সচেতন না।
সহজ-সরল হওয়ায় গুজব,অপপ্রচারের প্রতি একটু বেশিই বিশ্বাস থাকে। গরমের ছায়া হিসেবে গাছপালা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শীতের সন্ধ্যায় আগুন ঝালিয়ে শরীর গরম করে নেওয়া, দোকানে বসে পরিচিতদের সাথে আড্ডা দেওয়া, গ্রাম্য জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলে। গ্রীষ্মের দুপুরে শিশু-কিশোরদের পুকুরের পানিতে খেলা করা যেনো অন্যরকম এক আনন্দের অনুভূতি । গ্রামের ছেলে-মেয়েরা শহুরেদের মতো জীবন অতিবাহিত করতে পারে না। কিন্তু গ্রামের রীতিনীতি পালনে তারা পারদর্শী। গ্রামের মুক্ত বাতাসে নেওয়া প্রতিটা নিশ্বাস যেনো শান্তি- সুখময়।
শহরের কোলাহল, ধুলাবালি, শব্দের মায়াজাল থেকে বেড়িয়ে গ্রামে যাওয়াটা অনেকের কাছে এখন স্বপ্নের মতো। মৌসুমী ফল-পাকুড়ের অভাব না থাকায় পশু-পাখীরাও গ্রামকে ছেড়ে যেতে চায় না। একজন আরেকজনের সুখে -দুঃখে সর্বদা পাশে থাকাই গ্রামীন জনজীবন। উন্নত জীবনের আশায় অনেকে গ্রাম ত্যাগ করে। তারা হারিয়ে ফেলে তাদের জীবনের আসন্ন সুন্দরতম দিন গুলো। নিজের অজান্তেই নিজেকে নিয়ে যায় কোলাহল, দূষন ও মানবসৃষ্ট পরিবেশের মধ্যে। আমাদের উচিৎ গ্রামীন জীবনকে রক্ষা করা। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে এমন কাজ করা। উন্নত জীবন-যাপনের নামে হয়ত গ্রামকেও রুপান্তর করা হবে শহরে। নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে।
কিন্তু গাছ রোপনে নেই কোনো উদ্যোগ। এভাবে চলতে থাকলে গ্রাম অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে শৈশবের স্মৃতি জড়ানো-মাখানো গ্রামের চিত্র। আমাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে রক্ষা করতে গ্রাম নামক স্বর্গকে। গ্রাম রক্ষা করতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। বাংলার গ্রামীন জনপদ না থাকলে কবি,মনিষীদের কবিতা লেখা হতো না। আসুন গ্রামকে ভালোবাসি। গ্রাম রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। হারানো গ্রামীন জীবন ফিরে আসুক আবারো।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ