নিত্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। তবে এর জন্য এককভাবে শুধু টিসিবি দায়ী, এমন বলা যাবে না। দেশে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। তবে এই কার্ড তৈরির দায়িত্ব ছিল না টিসিবির হাতে। পরিবর্তে এসব উপকারভোগী নির্বাচনের দায়িত্বে ছিল তৎকালীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের হাতে। তাদের থেকে স্থানীয় পর্যায়ে ইউএনও অফিসের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি ও সিটি করপোরেশনের কাউসিলরদের মাধ্যমে কার্ডগুলো করার নির্দেশনা ছিল। এও নির্দেশ ছিল যে, ফ্যামিলি কার্ড যেন শুধু অসচ্ছল পরিবারগুলোকেই দেওয়া হয়। আর এখানেই নিয়ম বা নির্দেশনা যাই বলি না কেন, গুরুতর অনিয়ম ও ব্যত্যয় ঘটেছে। জনপ্রতিনিধিসহ কিছু স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে বিপুল সংখ্যক ফ্যামিলি কার্ড বরাদ্দ করেছে নিজেদের লোকদের মধ্যে, যাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না এখন।
এসব অভিযোগের পরিপেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে স্মার্টকার্ড তৈরির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি, যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যাচাই-বাছাই করে টিসিবির পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ লাখ স্মার্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে, যাদের কাছে টিসিবি পণ্য বিক্রি করবে ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। যেটি দুঃখজনক তা হলো, প্রয়োজনীয় যথাযথ তথ্যের অভাবে বাকি ৪৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ড স্মার্টকার্ডে রূপান্তর করা যাচ্ছে না। প্রতি পরিবারে একটি ফ্যামিলি কার্ড দেওয়ার নিয়ম থাকলেও একই পরিবারের নামে একাধিক ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে, নিয়মের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন স্বল্প আয়ের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চার দফা চিঠি দিয়েও বাকি ৪৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ডধারীর হালনাগাদ কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত পায়নি টিসিবি। ফলে, হালনাগাদ করে নতুন ফ্যামিলি তথা স্মার্টকার্ড তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এমন একটি সংস্থা যা কিছু নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুত গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় সময়ে ভোক্তা সাধারণের নিকট স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সরবরাহের ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধ করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রেখে জনগণের স্বার্থরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখাই এর লক্ষ্য। বর্তমানে চড়া মূল্যের বাজারে টিসিবি দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। ফলে, বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য কিনতে পারছেন ভোক্তারা। নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির অবস্থায় বিপুলসংখ্যক পোশাক শ্রমিকসহ এটি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত দরিদ্র ও শ্রমজীবীরা যাতে এ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে টিসিবিকে।
স্মার্টকার্ডে টিসিবির পণ্য
শীর্ষ সংবাদ: