বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। ফলে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি খাতের ওপর নির্ভর করতে হয়। যদিও দেশজ মোট উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান কমছে। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশজুড়ে আছে কৃষি খাত। এখনো দেশের শতকরা প্রায় ৪১ শতাংশ শ্রমিক কৃষি খাতে নিয়োজিত। কৃষি খাতের অবদান কমলেও এখনো অর্থনৈতিক সংকটে সব সময় পাশে দাঁড়াচ্ছে দেশের কৃষি খাত। তাই শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া দরকার।
এক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনে ও বিপণনে জাগরণ তৈরি করা দরকার। এক্ষেত্রে নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে পরিবার প্রতি একজন করে ফলকর্মী, মৎস্য চাষি বা গাভী পালনকারী নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সে নিজ গ্রামে স্থানীয়ভাবে স্থায়ী ঠিকানায় কাজ করবে। তাদের স্বামী, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে এবং মা বাবা নিয়ে গ্রামে বাস করতে হবে। প্রয়োজনে একই পরিবারের ২ জন চাকরি পাবে।
দেশের সব উঁচু জায়গায় আয়কর প্রদানকারী প্রতি দশ জনের জন্য ১ (এক) জন ফলকর্মী নিয়োগ পাবে। ৬৮ হাজার গ্রামে নিয়োগ পাবে ১ (এক) কোটি ফলকর্মী। প্রত্যেককে যার যার গ্রামে চাকরি করতে হবে। তাদের ছেলেমেয়ে স্বামী নিয়ে গ্রামে থাকতে হবে এই শর্তে। তারা সরকারি ও উঁচু জায়গায় ফলগাছ, সবজি লাগানো, পরিচর্যা, পরিবহন ও পরিবেশন করবে। এলাকায় উৎপাদিত ফল, সবজি নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসে পাঠাবে ও তাদের আওতাধীন এলাকায় পৌঁছে দেবে কৃষকদের দামে। দেশের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশের সকল গাড়ি, ট্রেন ও ট্রাক ১টা নির্দিষ্ট পরিমাণ সিট যেমন ৪/৫টি সিট বরাদ্দ থাকবে। এসব ফল ও শাকসবজি পরিবহন ও যোগাযোগ উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট ভাড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
দেশে এক কোটি ফলকর্মী নিয়োগ দেওয়া গেলে তারা যার যার আঙিনা ও বাগানে ফল ও সবজি গাছ রোপণ করবে। এতে ১৮ কোটি মানুষ প্রতিদিন দুইশ’ মণ করে মাছ, দুধ, ফল এবং সবজি পাবে। এসব মাছ, ফল, সবজি ও দুধ প্রতিদিন ঢাকা শহর ও অন্যান্য শহরে আনার ব্যবস্থা করবে এবং সকলের কাছে ফলকর্মী দিয়ে ন্যায্য মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করবে সরকার। এসব ফল ও সবজি দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা ও খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
জুলাই ও আগস্ট মাস থেকে ২০ কোটি কলম চারা তৈরি করতে হবে। রাজশাহী, খুলনা বিভাগ হতে আম, লিচু, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল সবজি। কুমিল্লার বড়ই, সিলেটের কমলা, মাল্টা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ভালুকা ও সাভারের কাঁঠালের চারা, ফরিদপুরের খেজুরের চারা, তারাশের তালের চারা, ভোলার নারিকেলের চারা ভর্তুকি দিয়ে কিনে সারাদেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব উঁচু রাস্তার দুই পাশে এসব কলম ও ফলগাছ লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন যত কলা, পেঁপে বাগান ও লেবু বাগান আছে, তাদের কাছ থেকে যে গাছ দুই-তিন মাসের মধ্যে ফল দেবে, সেই গাছগুলো ২০০ টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে ক্রয় করে রাস্তার দুই পাশে স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় ও বিভিন্ন পার্কে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়াও সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি জায়গায়, রাস্তাঘাট, অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, খেলার মাঠ, ঈদগাহ মাঠের চারপাশে, খালিমাঠ, পার্ক, পতিত বাড়ি-পতিত জায়গায় ও জমি, বসতবাড়ি, আঙিনা, ছাদ, বারান্দা, ফুটপাত, আইল্যান্ড, নদীর পাড়, পুকুর পাড়, খাল-বিল পাড়, সেতুর আশপাশে, মন্দির, গির্জার আশপাশে কাঠগাছ লাগানো বাদ দিয়ে ফলগাছ, সবজি, ঔষধিগাছ লাগাতে হবে।
প্রত্যেকটি ফল গাছের বাগানের ভেতর পরিমাণ মতো গরুর খামার, রাজহাঁসের খামার, মুরগি, কবুতরের খামার ও কোয়েল পাখির খামার করতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে। সেই সঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও আমাদের কৃষি পণ্য রপ্তানি করা যাবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে আসা বিদেশী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এসব ফল উপহার দেওয়া যেতে পারে। জন্ম, মৃত্যু বিয়েসহ যে কোনো অনুষ্ঠানে ফলের ডালি উপহার দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। এই নীতি ও নির্দেশনা সরকারিভাবে পালন করতে হবে। দেশে জাতীয় ফল খাওয়ার দিবসও প্রচলন করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই ফল, সবজি, মাছ, দুধ, মাংসে ফরমালিন দেওয়া যাবে না।
সকল ফলকর্মী হবে নারী। প্রয়োজনে স্বামী ও ভাইদেরও ফলকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তাদের বয়সসীমা হবে ২০ হতে ৪০ বছর পর্যন্ত। ৫ম হতে ৮ম শ্রেণি পাস। প্রয়োজনে তাদের গরু পালন ও সবজি চাষের জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনাসুদে ১০ বছরের মেয়াদ ঋণ প্রদান করা যেতে পারে। ৫ বছর পর তাদের আয় থেকে ঋণের কিস্তি কর্তন করতে হবে। দেশের চৌষট্টি জেলায় আখ ও সরিষার চাষ বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
মালিক নিজে বা ফলকর্মী দিয়ে তেভাগা পদ্ধতিতে এগুলো চাষ করবে। চৌষট্টি জেলায় চিনির কারখানা ও সরিষা ভাঙানোর মেশিন স্থাপন করে জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশের চিনি ও তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। ফলগাছ, সবজি লাগানোর জন্য, পরিচর্যা, পৌঁছানো ও সরবরাহ করার জন্য সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে ২০ (বিশ) কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা