১৯৯৩ সালের পরে এই প্রথম ডুম্বুর প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত
১৯৯৩ সালের পরে এই প্রথম ডুম্বুর প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত। যার ফলে প্লাবিত হয় ফেনী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং ধীরে ধীরে আশেপাশের আরো জেলায় বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ে। বন্যাকবলিত অঞ্চলে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রেও রয়েছে কোমর সমান পানি। অনেক জায়গায় আটকা পড়েছে বিভিন্ন মানুষ। অনেকের কোনো খোঁজও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি সর্বোচ্চ উদ্ধার কার্যক্রম ও সার্বিক সেবাদান অব্যাহত রেখেছে। একইসাথে বেসরকারিভাবে সাধারণ জনগণ তাঁদের পাশে জান-প্রাণ দিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক টিম ও সামাজিক সংগঠন ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চলমান রেখেছে। এটা অত্যন্ত সুন্দর ও আশাব্যঞ্জক একটি দিক।
বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ দেওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা, তা হলো উদ্ধার কার্যক্রম। কারণ সেখানে বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও বসতভিটা বন্যার পানিতে একেবারে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। এমনকি সাধারণ হাঁটা-চলার জায়গায় পর্যন্ত নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে চলতে হচ্ছে। যারা সাঁতার পারে না, তাদের এটা অত্যন্ত ঝুঁকির বিষয়। বন্যা পরিস্থিতিতে নারীরা পড়ে যায় অতিরিক্ত ঝুঁকি এবং সংকটে। কারণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতেও তারা সবার মধ্যে স্বস্তিতে থাকতে পারে না।
এছাড়া টয়লেট-বাথরুম ও গোসল সহ নানা দিক বিবেচনায় তাদের বিশেষ সুবিধার প্রয়োজন হয়। এজন্য যারা ত্রাণ কার্যক্রম বা সার্বিক সহযোগিতার সাথে যুক্ত আছেন, তাদেরকে নারীদের প্রয়োজনের বিষয়টা বিশেষ গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। ত্রাণের প্যাকেটের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাডের ব্যবস্থা করতে পারলে নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা হয়। শিশুদের কোনো প্রকার অসুখ-বিসুখ হলে মেডিকেল কোনো সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য সরকারি বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে উপযুক্ত ডাক্তারের সঙ্কট থাকে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে অতিরিক্ত ডাক্তার মোতায়েন করে নারী ও শিশুসহ সবার স্বাস্থে্েযর কথা চিন্তা করতে হবে। এ বছরে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ফেনী তিনবার বন্যাকবলিত হয়েছে এবং সেখানে রেকর্ড পরিমাণ পানি বেড়েছে। আশা করছি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবো।
আর আমাদেরকে মনে রাখতে হবে এমন পরিস্থিতিতে মানুষ হিসেবে মানুষের দায়িত্ব হলো একে অপরের পাশে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দাঁড়ানো। এটাই হলো মনুষ্যত্বের পরিচয়। ইতোমধ্যে আমরা সবাই অনেক আন্তরিকতার সাথে কাজও শুরু করেছি। সামনে পুনর্বাসন কার্যক্রমেও সবাই একইভাবে সাড়া দেবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে