ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

দূর হোক সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১২ আগস্ট ২০২৪

দূর হোক সিন্ডিকেট

সম্পাদকীয়

শুধু কি পণ্যমূল্যের বাজার; প্রায় সর্বত্রই দেশবাসীর অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সিন্ডিকেটের। এর কুফল হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন দেশের মানুষ, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে সং¯্রবহীন সাধারণ নাগরিক। এটা ঠিক যে, সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় বাজার সিন্ডিকেটের বিষয়টি। গণ্ডায় গণ্ডায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসেছেন। তারা সবাই বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় রেখেছেন।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, সিন্ডিকেট কি এতটাই শক্তিশালী যে তাদের কাছে সরকারও অসহায়! এই বাস্তবতার অবসান চেয়েছে মানুষ। প্রতিবাদ করেছে, ক্ষোভ জানিয়েছে। সরকারও অতীতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যদি কিছু করা যায়- জিনিসপত্রের দাম যেন কমে, এমন একটা আশার আলো দেখতে শুরু করছেন মূল্যস্ফীতির চাপে ধ্বস্ত সাধারণ মানুষ।

সম্ভাবনার বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রভাবশালী ও সিন্ডিকেটের চাপমুক্ত হতে চায় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক। তিনি বলেছেন, আমরা চাপমুক্ত হতে চাই তোমাদের (শিক্ষার্থী) মাধ্যমে। তোমাদের হাত এত শক্তিশালী হয়েছে যে, তোমরা যেখানে হাত দেবে, সেখানেই সোনা ফলবে। আমরা আসলেই ব্যর্থ হয়েছি। এখন তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
রবিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ভোক্তার মহাপরিচালকের বক্তব্য একদিকে অসহায়তার ছবি সামনে টেনে এনেছে, অন্যদিকে সম্ভাবনার দ্যুতিও ছড়িয়েছে। কেননা, তিনি নতুন প্রজন্মের ওপরই ভরসার কথা বলেছেন। যে প্রজন্ম একটি সফল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লার বক্তব্য বাস্তবিকই আশা জাগায়। তিনি বলেন, আমরা এতদিন নানা ধরনের অন্যায়, অনিয়মের সঙ্গে ছিলাম। এখন শপথ করতে হবেÑ আমরা আর দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অন্যায়, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, দখলদারি করব না। এটা আমাদের মনে ধারণ করতে হবে। তারপর রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। তা না হলে আমাদের এত আত্মত্যাগ, এত জীবন, এত কান্না, বিপ্লব বৃথা হয়ে যাবে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। বিলম্বিত বোধোদয় ও সক্রিয়তার জন্য তার সাধুবাদ প্রাপ্য বটে। তার সুপারিশসমূহের ভেতর রয়েছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা টিম করে প্রতিটি শহর, জেলা, উপজেলা, পাড়া, মহল্লায় বাজার মনিটরিং করা। তবে তারা কাউকে জরিমানা করতে পারবে না। সেই সঙ্গে প্রতিটি বিক্রেতার নিত্যপণ্য ক্রয়ের রসিদ রাখা, প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানো, রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধ এবং সেটি প্রতিরোধ, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা ইত্যাদি। কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগে।

এসব বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায়, সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে পড়তে বাধ্য। সবার আগে চাই দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সেটি দৃশ্যমান হলেই মানুষ ভরসা পাবে। আমরা বলতে চাই, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নামাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়ার কাজটি আজ থেকেই শুরু হোক।

×