
.
জনসংখ্যা যেকোনো দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক শক্তি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের হালনাগাদে সম্প্রতি উঠে এসেছে, বর্তমানে দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম এবং ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় রয়েছে। অর্থাৎ এখন কর্মক্ষমতার স্বর্ণযুগ পার করছে বাংলাদেশ। আবার জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে আমাদের লোকসংখ্যা ২৩ কোটি অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমান শ্রমশক্তির বিরাট সংখ্যাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশের জন্য এখন ডেমোগ্রাফিক ‘ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যা থেকে ‘লভ্যাংশ’ পাওয়ার সময়। এই সময় কোনো দেশে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী সবচেয়ে কম থাকে। জনমিতির পরিভাষায় ‘ডিভিডেন্ড’ বলতে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের আধিক্যকে বোঝায়। এ বয়সসীমার মানুষই সবচেয়ে কর্মক্ষম, যারা জাতীয় অথর্নীতিতে অবদান রাখতে পারেন। আর দেশে এখন এই বয়সসীমার মানুষই বেশি।
অথচ বর্তমানে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ বেকারত্বের বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন চাকরির বাজারে ছোটাছুটি করে চাকরি না পেয়ে তাদের মাঝে জন্ম নিচ্ছে হতাশা। আর হতাশা থেকে তাদের কর্মশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। একটি রাষ্ট্র কর্মক্ষম জনসংখ্যা প্রাপ্তির এমন সুযোগ খুব কমই পেয়ে থাকে। আমাদের এ সুবর্ণ সুযোগ যে কোনো মূল্যে কাজে লাগানোই যুক্তিযুক্ত। এক্ষেত্রে মূল ‘চ্যালেঞ্জ’ তরুণদের কারিগরিভাবে দক্ষ, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং যথাযথ কর্মসংস্থান গড়ে তোলা, যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলেই ঊর্ধ্বমুখী জনসংখ্যার হার জনসম্পদে রূপ নেবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী রূপরেখা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ সফল করতে হলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক।
দেশের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। দেশকে সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। দেশের জনসংখ্যাকে যদি উৎপাদনশীল কর্মকান্ডে নিয়োজিত করা যায় তবে সেই জনসংখ্যা মূল ভূখন্ডের আয়তন কমবেশি যাই হোক তা জনশক্তিতে বা জনসম্পদে পরিণত হবে। এ সম্পদ যে কোনো মূল্যবান খনিজসম্পদ থেকে অধিকতর কার্যকর। উপযুক্ত শিক্ষা ও ভালো কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারলে বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও একদিন বিশ্বের কাছে চীন-জাপানের মতো উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে বেকারত্বের হার কমানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর মতো নানা উদ্যোগ জনসংখ্যার অভিশাপকে আশীর্বাদে রূপান্তর করতে পারে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে নিজেদের সবল উপস্থিতি জানান দিতে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই।