ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার

-

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৯ জুন ২০২৪

সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার

সম্পাদকীয়

গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার দেশ বাংলাদেশী জনশক্তিকে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চাকরির বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পর দেবে। তারা এমন কোনো লোক নেবে না, যাদের জন্য দেশটিতে কোনো কাজ বা চাকরি নেই। এর মাধ্যমে যেমন অবৈধ ইমিগ্রেশন কমবে, তেমনি প্রতারণার হাত থেকেও অনেকেই রেহাই পাবে। দুই দেশের মধ্যে বিস্তৃত এবং গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী, যা মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের ওমান সরকার ইতোমধ্যে প্রায় ৯৬ হাজার অনিবন্ধিত বাংলাদেশীকে বৈধতার ঘোষণা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। ডাক্তার, প্রকৌশলী, নার্স, শিক্ষকসহ বিশেষায়িত কর্মী নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে কাতার। এছাড়াও জর্দান, মরিশাস, মাল্টা, ব্রুনেই ও কুয়েতেও বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছে। প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এ দুটি দেশে ভালো আয়ের সুযোগ বেশি। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদা বাড়ছে প্রতিবছর।

ইউরোপের অনেক দেশেও দক্ষ কর্মীর চাহিদা মেটাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। কিন্তু অনেক দেশের দূতাবাস না থাকায় ভারতে গিয়ে ভিসার আবেদন করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে  ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলার সেবা চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।
বিশ্ব শ্রমবাজারে যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দক্ষ কর্মী তৈরিতে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে দেশের সরকারি সংস্থাগুলো। যদিও দক্ষতা উন্নয়নে সরকারিভাবে বাড়ানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও বড় মাত্রায় যুক্ত হচ্ছে। তবে এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যকারিতা ও মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। অনেক প্রতিষ্ঠান ভুগছে দক্ষ প্রশিক্ষকের ঘাটতিতে। যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেলেও দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সনাতনী সরঞ্জামের মাধ্যমে। প্রশিক্ষণ খাতে অনিয়মও কম নয়।

রেমিটেন্স তথা বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের পরেই রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ। কাজেই সরকার বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে বিশেষ সক্রিয় হলে বাংলাদেশের সুনাম ও রেমিটেন্স আয় দুটোই বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধরে রাখতে চাইলে স্বচ্ছতা ও সততা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা, শ্রমশক্তি প্রেরণের বিষয়ে সামান্যতম দুর্নীতিও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধিকতর তৎপরতাই কাম্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়ার পরও বিশেষ অগ্রগতি সাধিত না হওয়া দুঃখজনক। আমরা আশা করব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তবেই উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হবে।

×