ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন

-

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১৩ জুন ২০২৪

উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন

সম্পাদকীয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘নলেজ অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সচেঞ্জ (কিক্স)’-এর যৌথ উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী (১০-১১ জুন) ‘কিক্স বাংলাদেশ ন্যাশনাল আপটেক ফোরাম ২০২৪’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল অংশগ্রহণকারী দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলি অর্জন ও বিকাশে নতুন নতুন জ্ঞান এবং সৃজনশীল উদ্ভাবন অপরিহার্য।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১০ দেশের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে যে কোনো নীতি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি পলিসি গ্রহণের ক্ষেত্রে সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া না হয় তা হলে অনেক ক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ‘কিক্স’ তাদের যাবতীয় গবেষণা কর্মকা- পরিচালনা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এবারের বাজেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত। গবেষণার বরাদ্দ পেয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ শিক্ষা খাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, স্মার্ট ক্লাসরুম ও ল্যাব স্থাপন, আধুনিক লাইব্রেরি স্থাপন, পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা, উন্নত আবাসন ব্যবস্থা, সমসাময়িক বিষয়ে মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং সঠিক পরিকল্পনাÑউভয়ই প্রয়োজন।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতি রয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই কম। তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেকনিক্যালে পড়ে। বাংলাদেশে এই হার মাত্র ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি-সার্টিফিকেট নিয়েও বিদেশ গিয়ে নি¤œ মানের কাজ করতে হচ্ছে দক্ষতা না থাকার কারণে। দুঃখের বিষয়, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকে কম। আবার বরাদ্দকৃত অর্থের সম্পূর্ণ বিনিয়োগও হয় না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে প্রযুক্তিবিহীন ক্লাসরুম একেবারে বেমানান।

প্রতিটি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়াসহ কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের হাতে যে মোবাইল তুলে দেওয়া হয়েছিল, তা এখন আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। যেভাবেই হোক কমাতে হবে মোবাইল আসক্তি। কারিগরি ও ব্যবহারিক ক্লাস বাড়াতে হবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক ও বহুমুখী উন্নয়ন ছাড়া কোনো দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত থাকলেও গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষার বড়ই অভাব। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ও যথাযথ পাঠদান বাড়াতে পারে শিক্ষার গুণগত মান। ইউনেস্কোর পরামর্শ, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ১৮৯টি সদস্য দেশের মধ্যে যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ তার একটি।

পুরো বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের শেষ পাঁচ বছরের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর বিপরীত। সে অবস্থায় জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো বাঞ্ছনীয়।

×