![ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার খাবার বিশ্রব সব বড় শহরেই স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খা ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার খাবার বিশ্রব সব বড় শহরেই স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2406111431.jpg)
সম্পাদকীয়
বিশে^র সব বড় শহরেই স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার জনপ্রিয়। তবে একমাত্র ঢাকা বাদে আর কোনো শহরের এ জাতীয় খাবার স্বস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ঢাকার পথখাবার নিয়ে নানা সমীক্ষা হয়, পরামর্শ ও সুপারিশ উঠে আসে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। ফলে, নানা বয়সী মানুষ এসব খাবার গ্রহণ করে ডায়রিয়াসহ নানা অসুখে পতিত হন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বিক্রি করা চটপটি-ফুচকা, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা শরবত ও সালাদে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) করা এক সাম্প্রতিক গবেষণায় এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭টি এলাকা থেকে এসব খাবারের ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা দলের প্রধান ড. বারি বলেন, দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিষ্কার হাত, ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে এই ধরনের জীবাণু খাবারে মিশে যাচ্ছে। বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় খাবার ও জুসে ঢুকে যাচ্ছে জীবাণু। সড়কের বিভিন্ন খাবার খেয়ে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।
প্রায় এক দশক আগে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, ঢাকায় ১০ হাজারের বেশি স্ট্রিট ফুড বা পথখাবার বিক্রেতা রয়েছে। এক দশক পরে সন্দেহাতীতভাবে সংখ্যাটি আরও বেড়েছে। সে সময়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবির গবেষণায় পথখাবারে জীবাণুর হার দেখা গিয়েছিল ৫৫ শতাংশ।
দুবছর পর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে তা উঠেছে প্রায় ৯০ শতাংশে। বেশির ভাগই পাওয়া গেছে স্কুলের সামনের পথখাবারে। স্কুলে ক্যান্টিন থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। যদি সত্যি সত্যি অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার হাত থেকে আমাদের শিশুদের বাঁচাতে চাই, তাহলে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতেই হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত তদারকি ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ কাজে আসতে পারে।
পথখাবার তৈরি ও বিক্রির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবার। তাদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসাটাই হবে নিরাপদ পথখাবার সংস্কৃতির প্রাথমিক কাজ। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ডায়রিয়া রোগী বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বিশেষ সচেতনতা ও সতকর্তার প্রয়োজন রয়েছে। ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় খাবারের পানি সরবরাহ করে থাকে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির পানির মান নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ আছে। বিশেষ করে তাদের সরবরাহ লাইনের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা থাকে। অনেক এলাকায় ওয়াসার পাইপ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লাযুক্ত এক ধরনের হলুদ পানি বের হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
পানি ফুটিয়ে পান করার কোনো বিকল্প নেই। ডায়রিয়া মোকাবিলায় এসএমসির ওর স্যালাইন অত্যন্ত কার্যকর। ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের মোকাবিলা করা মোটেও অসম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন প্রথমত, বিশেষ ঋতুতে বাড়তি স্বাস্থ্য সচেতনতা। দ্বিতীয়ত, পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা। মোটকথা, মানুষকে কেবল সচেতন করা নয়, বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করাও জরুরি।