ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪

কাজী শরীফ উদ্দিন

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৮ মে ২০২৪

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪

২৯ মে বুধবার ২০২৪  আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস

আজ ২৯ মে বুধবার ২০২৪  আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এইদিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী  বিশ্বব্যাপী সকল দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদান। বিশ্বের সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে জন্ম হয় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের। এবার ৭৬ বছর (১৯৪৮-২০২৪) পূর্ণ করল। পারস্পরিক যুদ্ধ-সংঘাত কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। শান্তির জন্য যুদ্ধ-সংঘাত পরিহার করতে হয়।

বিশ্বজুড়ে ২০০৩ সাল থেকে  প্রতিবছর ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীদের মহান আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।

২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস প্রথম উদ্্যাপন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশন (আন্টসো) দিনটিকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানাইজেশনই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী।
কি নির্মম পরিহাস, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব উত্থাপনকারী ইউক্রেন এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইলের যুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গানিজেশন ২৯ মে জাতিসংঘ দিবস পালিত হলেও ইসরাইল-ফিলিস্তিন এখনো যুদ্ধে লিপ্ত। দিবসটির তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এদিন নিউইউর্ক শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সম্মানসূচক ‘ড্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদক বিতরণ করা হয়।

১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল ইরাক-ইরান শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয় বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে জাতিসংঘের পতাকাতলে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ কাজ শুরু করে। এক বছর পর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মোজাম্বিক এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে গেছে। সে সময় অর্থাৎ ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া- এ তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রমূলে আসে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সেনাবাহিনী দক্ষতা এবং সামরিক জ্ঞানে রুয়ান্ডায় বেলজিয়ান, সোমালিয়ায় আমেরিকান ও বসনিয়ায় ফ্রান্স সেনাবাহিনীকে যে টেক্কা দিতে পারে তা জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মকর্তাদের চিন্তার বাইরে ছিল।

ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তখন থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হতে থাকে। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই মূলত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ২০১০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের নারী দল পাঠায়। 
১৯৯৪ সালে আফ্রিকার রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড গ্রুপ সেখানে নিয়োজিত ছিল। প্রায় ১০০ দিনের গৃহযুদ্ধে তখন ৬ লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছিল। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে বেলজিয়ানসহ আফ্রো-ইউরোপিয়ান ব্যাটালিয়নগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করে তাদের মিশন গুটিয়ে ফেললেও বাংলাদেশের সেনাসদস্যরা বুকে সাহস নিয়ে মিশন এলাকাতেই থেকে যায়।

ফলে গণহত্যায় মৃত্যুর হার অনেক কম হয়েছিল। অবশ্য জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকেও সেখান থেকে প্রত্যাহার করতে হয়েছিল। বাংলাদেশী সৈনিকদের এমন সাহস ও দক্ষতা দেখে তখন সবাই অবাক হয়েছিল। সোমালিয়া থেকে যখন শান্তিরক্ষা মিশন গুটিয়ে নেয়, আমেরিকান সেনাদের দাবি ছিল তাদের শেষ সৈনিক সোমালিয়া না ছাড়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেনাদের তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সোমালিয়ার জনগণের হৃদয় জয় করে বাংলাদেশীরা নিজেদের অবস্থানকে সেখানে সুদৃঢ় করে নিয়েছিলেন।
স্থানীয় জনগণের আস্থা আর ভালোবাসাই জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশী সেনাদের মূল শক্তি। প্রতিটি মিশনেই বাংলাদেশীদের এ দক্ষতা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক আর সামরিক দক্ষতার জন্য যে কোনো সামরিক কমান্ডারদের কাছে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকান সেনাপতিরা বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সাহসিকতায় মুগ্ধ ও আস্থাশীল। ১৯৯৫ সালে ইউরোপের একমাত্র শান্তিরক্ষা মিশন বসনিয়ায় ফ্রান্স ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশী সেনারা তাদের জায়গায় কাজ শুরু করেন। ৩৪টি দেশের সেনাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তখন বাংলাদেশের ব্যাটালিয়নকে শান্তিরক্ষার কাজে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়েছিল।

সবারই ধারণা ছিল বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশের সেনারা ফ্রান্সের সেনাদের জায়গায় কাজ করতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যেখানে ডাচ আর ইউক্রেন সেনারা বসনিয়ার ‘সাব্রানিৎসা’ ও ‘জাপা’ নামক দুটি শহরে গণহত্যা ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশী সেনারা তাদের তুলনায় অনেক হালকা অস্ত্র নিয়েও শুধু সাহস, দক্ষতা আর দৃঢ় মনোবল দিয়ে বসনিয়ার ‘বিহাচের’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিরাট শহরের জনগণকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৬ জন ফোর্স কমান্ডার ও ৭ জন ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও গৌরব অর্জন করেন। শান্তিরক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী দেশের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।

৩৬ বছর ধরে শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ। পেশাদার মনোভাব, অবদান ও আত্মত্যাগের ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থানও সুসংহত করেছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী তাদের মিশন শেষ করেছেন।

তাছাড়া মিশন এলাকায় সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৬৮ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। 
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অর্জন ও ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা ইতিবাচক ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য জাতিসংঘের ভেতরে বাংলাদেশবিরোধী মনোভাব তৈরি করার প্রবণতা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কখনো সফল হয়নি এবং এই অপপ্রচার মোকাবিলায় মিডিয়ার কার্যকর অবদান রাখাও জরুরি। বর্তমানে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত কালচার অব পিস বা শান্তির সংস্কৃতির প্রস্তাব ১০০টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে পাস হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান জাতিসংঘের কাছে স্পষ্ট এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘে বিভ্রান্তি তৈরির কোনো অবকাশ নেই।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস  বলেছিলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ এক সময় যেসব দেশের সাধারণ মানুষ ‘বাংলাদেশ’ শব্দটির সঙ্গেই পরিচিত ছিল না, সেসব দেশে এখন বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ভালোবাসার দেশ। লাল-সবুজের পতাকা হয়ে উঠেছে আবেগ ও শ্রদ্ধার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বর্তমান শতাব্দীতে তৃতীয় প্রজন্মের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বহুমাত্রিক ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এজন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে। ভয়-ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা শান্তির বার্তা নিয়ে সফলতার সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় তাদের  অবদানের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। 
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনাদের অংশগ্রহণের ফলে বিশ্বের বুকে বেড়েছে বাঙালি ও বাংলা ভাষার পরিচিতি। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন বিশ্বমানবতার মহান সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিক আচরণের কারণে তারা আজ সেসব দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রাখা দেশগুলোর অবস্থান সম্পর্কে জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সবার শীর্ষে। সশস্ত্র বাহিনীর জনসংযোগ বিভাগের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত পৃথিবীর ৪৩টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছে।

এখনো আমাদের ছয় হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো একটা মিশনের উদাহরণ দিয়ে কেউ বলতে পারবে যে, ওখানে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছি বা আমাদের শৃঙ্খলা খারাপ হয়েছে?
জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এটাকে উদ্দেশ্যমূলক বলছে সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ। ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ আনা হয়েছে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশও নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন অজ্ঞাত কর্মকর্তার বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।

এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক   এবং উদ্দেশ্যমূলক। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলেতে প্রচারিত প্রতিবেদন সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এরকম একপেশে, উদ্দেশ্যমূলক একটা প্রতিবেদনের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনাসদর।

আশা করছি আমরা আমাদের দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব এবং সর্বোপরি জাতিসংঘ পরিম-লে আমাদের দায়িত্ব যেভাবে পালন করে এসেছি সেভাবে করে এসব ষড়যন্ত্রের সঠিক জবাব দিতে পারব। 
তিনি বলেন, আমি নিজে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং মিশনের শুরু থেকে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার ছিলাম। এটা এমন একটা মিশন যে মিশনের এসআরএসজি বা স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য সেক্রেটারি জেনারেল, তার চাকরি চলে যায়। সেই মিশনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল। সেক্সচ্যুয়াল এবিউজ হয়েছিল।

অনেক রকম কর্মকা-ের জন্য সেই কন্টিনজেন্টকে চলে যেতে হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী কন্টিনজেন্ট ছিল। একাধিক কন্টিনজেন্ট ছিল। কই আমাদের বিরুদ্ধে তো একটা অভিযোগও আসেনি। এটা একটা উদাহরণ।
এদিন সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।

সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে।

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টক-শো প্রচার হবে। শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যমটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র‌্যাব নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী কিভাবে নিয়োজিত হন, প্রক্রিয়াটা কী, কারা এটা করেন, সেটা সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিয়মিত সদস্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে যদি কোনো দেশকে বাদ দিতে হয় তাহলে সেটারও একটা প্রক্রিয়া আছে।

জাতিসংঘের যে নিরাপত্তা পরিষদ আছে সেখানে যেতে হবে। বলতে হবে আমরা এসব কারণে অমুক দেশকে বাদ দিতে চাই। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য কোনো দেশ থেকে প্রস্তাব উঠতে হবে। প্রমাণ দিতে হবে। বিশ্লেষণ করতে হবে। তারপর ভোটে যাবে। সেখানে যদি একজনও ভেটো দেয় তাহলে এই প্রস্তাব পাস হবে না। বাংলাদেশ তো বিশ্বে বন্ধুহীন রাষ্ট্র নয়। 

তথ্য সংগ্রহ : বিবিসি বাংলা, উইকিপিডিয়া 
এবং বিভিন্ন পত্রিকা

লেখক : অধ্যাপক, কর্নেল (অব.), নিরাপত্তা বিশ্লেষক, পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর

×