ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলা

.

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরাইলের ঘটনা প্রবাহের দিকে সংশ্লিষ্টদের তীক্ষè নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ঘটনা প্রবাহের দিকে নজর রাখতে। যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তখন যে সম্ভাব্য পরিস্থিতি হতে পারে বা বিভিন্ন সেক্টরে যে প্রভাব পড়তে পারে, সেটি যেন সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে পরিকল্পনা প্রস্তুত করে, সেটি মোকাবিলা করার জন্য যেন তারা পরিকল্পনা নেন এবং প্রস্তুতি নেন। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী প্রজ্ঞা সম্পর্কে সম্যক অবহিত রয়েছেন দেশবাসী। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, ইরানের ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইল। যদিও মিত্র দেশগুলো পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছে, ইরানের ওপর আবার কোনো হামলা হলে ইসরাইলকে পস্তাতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইল নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। তার ওপর ইরানে পাল্টা হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সংঘাত। যার ভুক্তভোগী হবে বিশ^বাসী।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাহাজে পণ্য পরিবহনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও যে প্রভাব পড়বে, তা বলেই দেওয়া যায়। বিশেষ করে লড়াই-সংঘাতের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশও সমস্যায় পড়বে। ইরান ইসরাইলের সংঘাতের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তেল গ্যাসে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যকার লড়াই-সংঘাতের চূড়ান্ত পরিণতি হতে পারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি। ফলে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবারও বাড়তে পারে।

দেশের বাস্তব পরিস্থিতি হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি চেপে ধরেছে অর্থনীতিকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়ে যাওয়া এই মূল্যস্ফীতিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাগে আনতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে, অর্থনীতির ওপর তা প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, এই মূল্যস্ফীতি দেশের কর্মসংস্থান, উৎপাদন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে, উঠে গেছে চূড়ান্ত নাভিশ্বাস। মানুষকে মহা কষ্ট থেকে রেহাই দিতে হলে মূল্যস্ফীতির মহাচাপ দূর করার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই।

বিগত ছয় মাস যাবৎ গাজা হয়ে উঠেছে নৃশংস আক্রমণের কেন্দ্র। বিশে^ সব প্রান্তের শুভবোধসম্পন্ন মানুষ গাজার জন্য ভারাক্রান্ত হয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে বিশ^বিবেক বিষণ্ণ থেকেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে বলেছেন, মানবজাতি মানবতা রক্ষায় সব ধরনের যুদ্ধ সংঘাতকে বিশ্বের দৃঢ়ভাবে না বলতে হবে। ইউরোপের বর্তমান যুদ্ধজনিত নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী মানবিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে। ইরান-ইসরাইল সংঘাত প্রকট আকার ধারণ করলে ভুগতে হবে গোটা বিশে^ মানুষকেই। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশও তার বাইরে থাকবে না। তাই সার্বিক প্রস্তুতির জন্য এখনই সক্রিয় হতে হবে।

×