
সম্পাদকীয়
সম্প্রতি পোষা পাখি ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তাশফিয়ান আতিফ (২২) নামে এক ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি তাশফিয়ান পোষা পাখি উদ্ধারকারী ‘রবিনহুড রেসকিউ’ নামের একটি দলে যোগ দেন এবং পোষা পাখি উদ্ধারের কাজে জড়িয়ে পড়েন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই টিমের আরও দুই সদস্যের সঙ্গে তাশফিয়ান আতিফ রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় যান। সেখানে লাঠির ফাঁদ দিয়ে বৈদ্যুতিক তারে বসা পাখিটিকে ধরতে গেলে অসাবধানতাবশত তারা তিনজনই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আতিফের।
পোষা পাখি উদ্ধার করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তাশফিয়ান আতিফের মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা আরও ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই। শুধু তাশফিয়ান নয়, এবারের মহান বিজয় দিবসে গাজীপুরে জাতীয় পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। কয়েক মাস আগে ভারিবর্ষণে মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশুসহ একই পরিবারের কয়েকজন মারা যান। সারাদেশে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগজনক।
পোষা পশু-পাখির প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কেউ একাকিত্বের সঙ্গী হিসেবে, কেউ বা শখের বশে বিভিন্ন প্রাণী পুষছেন। ফলে, প্রাণী ও মানুষের মধ্যে একধরনের বন্ধন গড়ে উঠছে। পোষা প্রাণীগুলো যেন পরিবারেরই একজন হয়ে ওঠে। আদর করে কেউ কেউ তাদের দিয়ে থাকেন বিভিন্ন নামও। আজকাল পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা, খুনসুটি, আদর-যত্নের গল্প ও ছবি অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন। শখ পূরণের পাশাপাশি পশুপাখি পোষার অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে।
এসব প্রাণী অনেকের জীবনে হয়ে ওঠে আনন্দ উদ্্যাপনের উপলক্ষ। গবেষণায় দেখা যায়, পোষা প্রাণী কেবল বিষণ্ণতা দূর করে মানসিক প্রশান্তিই দেয় না, বরং হৃদ্রোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো বিভিন্ন রকম শারীরিক জটিলতা থেকে নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যারা কর্মস্থলে বেশি চাপের মধ্যে থাকেন, তাদের জন্য পোষা প্রাণী উপকারী। কারণ, পোষা প্রাণী মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সাহায্য করে। পোষা প্রাণীর সুস্থতা ও অসুস্থতার সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যেরও সুস্থতা-অসুস্থতা জড়িত। কাজেই বাড়ির পোষা প্রাণীকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়া আবশ্যক। পাশাপাশি দরকার নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
মানুষের প্রাণী পোষার প্রতি ঝোঁক বাড়লেও বিশ্বব্যাপী কারণে-অকারণে প্রাণী হত্যা বন্ধ নেই। অনেকে নিজের প্রয়োজনে প্রাণীদের ব্যবহার করলেও তাদের প্রতি সবসময় সংবেদনশীল আচরণ করে না। এমনটি কখনই কাম্য নয়। নিজের পোষা পশু-পাখির প্রতি যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাটের অসহায় বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল, বানরের প্রতিও যতœশীল হতে পারি। যারা পোষা প্রাণীদের নিয়ে কাজ করেন, তাদের উৎসাহ ও সহায়তা দিতে পারি। সম্ভব হলে নিতে পারি অসহায় কিংবা আহত প্রাণীর দায়িত্ব। নিশ্চিত করতে পারি তাদের নিরাপদ আশ্রয়।