
ছবি: জনকন্ঠ
ঠাকুরগাঁও জেলার জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ থানা শহর রুহিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রুহিয়া ডিগ্রী কলেজ। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে এই কলেজ। তবে তা সত্ত্বেও কলেজটি এখনও জাতীয়করণের আওতাভুক্ত হয়নি।
ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী রুহিয় ডিগ্রী কলেজ এলাকার কয়েকজন দানবীর ব্যক্তির সহযোগিতায় ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয় এই কলেজটি। এটি রুহিয়া অঞ্চলসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার প্রধান ভরসা। কলেজটি ৫১ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। অবকাঠামো গত সচল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে কলাভবন, আইসিটি ভবন, একাডেমীক ভবন, বিজ্ঞান ভবন, অনার্স ভবন, স্কাউট ভবন, বিএনসিসি ভবন, প্রশাসনিক ভবন ও একটি লাইব্রেরী রয়েছে।
প্রতি বছর এখানে শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে জাতীয়করণ না হওয়ায় সরকারি সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি, এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা কলেজ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে কলেজে ৭৯ জন শিক্ষক কর্মচারী ও প্রায় দুই হাজার জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক জেনারেল, উচ্চ মাধ্যমিক বিএমটি ,ডিগ্রী পাস কোর্স সহ ডিগ্রি সম্মান বিষয়ে পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। কলেজটি সুদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে।
১৯৯০ সালে হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ কলেজটি সরকারিকরণ ঘোষণা করেন, এরপর দুইবার ছাত্র ছাত্রীদের সরকারি সনদ প্রদান করা হয় কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত পরের সরকার তা বাতিল করে দেন। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত বেসরকারি কলেজ হিসেবে পরিচালনা হয়ে আসছে। কলেজটি বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত একটি কলেজ।
কলেজটি জাতীয়করণ করা হলে এ এলাকার গরীব দুঃখী শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের কল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
কলেজে স্নাতকে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী শাহাজাদ ইসলাম বলেন, আমাদের রুহিয়া কলেজ জাতীয়করণ হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে, সরকারি বরাদ্দে অবকাঠামো উন্নত হবে এবং প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবে।” তিনি আরো বলেন, রুহিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানকার একমাত্র কলেজটি সরকারি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহি কলেজ হলো রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ। এটি জাতীয়করন এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মজিবর রহমান বলেন, রুহিয়া কলেজ কে জাতীয়করন করা হলে এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে শিক্ষা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
রুহিয়া ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনসারুল হক বলেন, রুহিয়া ডিগ্রি কলেজ আমার স্মৃতি বিজরিত কলেজ। রুহিয়া ডিগ্রি কলেজকে জাতীয়করন করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা মুঠোফোনে বলেন,রুহিয়া কলেজ অধ্যক্ষ যদি কোন মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমে যদি পাঠিয়ে থাকে তাহলে ঐখানে একটা চিঠি আমার মাধ্যমে লিখে আনতে আমি পাঠিয়ে দিবো বিগত কলেজে রেজাল্ট শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, অবকাঠামো কি রকম সেগুলো উল্লেখ করে পাঠিয়ে দিতে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই দাবির সাথে একমত প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের যথাযথ দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন। কলেজটি জাতীয়করণ না করার ফলে এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে। তারা অবিলম্বে কলেজটি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, রুহিয়া কলেজ জাতীয়করণ হলে শুধু রুহিয়াবাসী নয়, গোটা ঠাকুরগাঁও জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হবে।
মুমু