ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সোনা পাচার ও জুয়েলারি শিল্প

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

সোনা পাচার ও জুয়েলারি শিল্প

.

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে ৩৪ কেজি সোনা জব্দ এবং চারজনকে আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সোনার এত বড় চালান সিলেটে এর আগে ধরা পড়েনি। ঢাকার শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত সিলেটের ওসমানীএই তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েই সোনা চোরাচালান বলা যায় নিয়মিত ঘটনা। মাঝে মধ্যেই এই তিন বিমানবন্দর থেকে সোনা আটক করা হচ্ছে। কখনো কখনো আটককৃত সোনার পরিমাণ বিপুল। তবে কথিত আছে, উদ্ধারকৃত সোনার চেয়ে অনেক বেশি সোনা চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ বিমান বিমানবন্দরে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িয়ে পড়েছে চোরাচালানকারীদের সঙ্গে। বছরখানেক আগে গোয়েন্দা সংস্থা প্রণীত সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মাফিয়াদের তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে সোনা চোরাচালান বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তখন আশা করা হয়েছিল, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে সোনা চোরাচালানের পরিমাণ কমে আসবে। কিন্তু তা হয়নি।

সোনা পাচারের ঘটনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেটে মামলাও হয়েছে খানেক। বেশিরভাগ মামলার তদন্ত নেই বললেই চলে। কোনো অপরাধের বিচার না হলে অব্যাহতভাবে তা চলতেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সোনা চোরাচালান চক্রের এদেশীয় এজেন্টদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন সোনার খনি। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে সোনার চাহিদা বছরে ১৬-২৬ টন। কিন্তু এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সোনা অবৈধপথে দেশে আসছে। দুবাই থেকে অবৈধভাবে আনা সোনার বার দেশের বিমানবন্দর থেকে চলে যায় সীমান্ত এলাকায়। তারপর সুযোগ বুঝে পেরোয় সীমানা। আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই বাংলাদেশকে তাদের চোরাচালানের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। চার মাস আগে এমন এক চক্রের ছয় সদস্যের ২৬ ব্যাংক হিসাবের তথ্য পেয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওইসব ব্যাংক হিসাবে ১৭ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। তবে সোনা শুধু চোরাকারবারিদের  বিষয়, তা নয়, দেশেও সোনা কেনাবেচার বড় বাজার রয়েছে।

স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮কার্যকর করার তিন বছর পরে সেটি সংশোধন করা হলেও জুয়েলারি শিল্পের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা জুয়েলারি শিল্প বিকাশে সহজ নীতিমালার কথা বলে আসছেন। সরকার নির্ধারিত শুল্কের বিষয়েও তাদের রয়েছে ভিন্নমত। ব্যবসায়ীরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শুল্ক নির্ধারণের কথা বারবার বলে আসছেন। বিষয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সরকারের প্রতিনিধিদের খোলামেলা বৈঠক হওয়া জরুরি। সেটির মধ্য দিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে একটি সমাধান বেরিয়ে এলে একদিকে জুয়েলারি শিল্পের যেমন প্রসার ঘটবে, তেমনি সরকারও বেশি শুল্ক পাবে। সবচেয়ে বড় কথা, শুধু দেশীয় চাহিদা মেটাতে অবৈধভাবে সোনা আনাও বন্ধ হবে। যারা বিদেশী চক্রের হয়ে বিদেশ থেকে সোনা এনে অন্য দেশে পাচারের সঙ্গে জড়িত, তারা দেশের শত্রু। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সোনা চোরাচালান রোধে আরও সতর্ক সক্রিয় হতে হবে। সার্বিকভাবে দেশের জুয়েলারি শিল্প রক্ষা, বিয়ে অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনার চাহিদা মেটাতে বৈধপথে সোনা আনার বিষয়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন যুগের দাবি।

×