
জোয়ারের পানির সাথে ঢাকার নবাবগঞ্জের ইছামতী নদীতে ঢুকেছে ময়লা দুর্গন্ধ যুক্ত দুষিত পানি। তার ওপর কচুরিপানায় আবৃত রয়েছে পুরো নদী। এবছরই প্রথম নদীটি দুষণের শিকার হলো। এলাকাবাসী বলছেন, 'পানিতে অক্সিজেন হ্রাস পেয়ে ভেসে ওঠছে মাছসহ জলজ প্রাণী।'
রাজধানীর বুড়িগঙ্গা থেকে কেরানীগঞ্জের জাজিরা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে সিরাজদিখানের তুলশিখালী এলাকায় কালিগঙ্গা ও ইছামতী নদীর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। কালিগঙ্গা নদী গত ৫/৬ বছর যাবত দুষণের শিকার হয়ে আসছে। কিন্তু ইছামতী এই প্রথম দুষণের শিকার হলো।
স্থানীয়রা বলছেন, ইছামতীর পশ্চিমের পদ্মার সংযোগস্থল নবাবগঞ্জের কাশিয়াখালী ও দোহারের কার্তিকপুরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে এই বাঁধ স্থাপনের পর ইছামতীর স্রোতধারা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়েকবার নদী খনন করা হয়। তবুও নাব্যতা সৃষ্টি হয়ে মৃত প্রায় ইছামতীতে নৌযান চলাচল ব্যহত হয়। এরপর থেকে শুষ্ক মৌসুমে নদীর জোয়ার ভাটার পানিতে এলাকাবাসী গৃহস্থালি ও কৃষি সেচের কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। এবছর নদী জুরে কচুরিপানায় সয়লাব হয়ে গেছে।
নবাবগঞ্জের কলাকোপা পুরাতন বাজারের ব্যবসায়ী হরেকৃষ্ণ মালাকার জানান, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ইছামতী নদীর পানিতে গোসল করে আসছি। গত এক সপ্তাহ যাবত লক্ষ্য করছি নদীতে দুর্গন্ধ যুক্ত পানি। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা এ পঁচা দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারছেন না। নদীর মাছসহ জলজ প্রানী গুলো মরা বা আধ মরা অবস্থায় ভেসে উঠছে।
ময়মন্দি গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানির উপরি ভাগ কালচে রংয়ের। মাটি ঘেসে কালচে শেওলার আস্তরণযুক্ত। বিশেষ করে জোয়ারের সময় বিকট দুর্গন্ধ পানি ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেলে জোয়ারের পানি আসতেই ইছামতি নদীর সামসাবাদ এলাকায় কিছু লোক ভীড় জমায়। এসময় তাঁদের উপস্থিতির কারণ জানতে অনেকেই দৌড়ে যায় সেখানে। এরপর অনেক নারী-পুরুষই নদীতে ভেসে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নেয়। কেউ হাত দিয়ে, কেউ গামছা দিয়ে বা পরনের কাপড়ে ভরেই এ মাছ সংগ্রহ করেন। নদীর কয়েকটি স্থানে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।
জানা যায়, উপজেলার কলাকোপা, কলেজঘাট, খানেপুর, গোল্লা, ধাপারীসহ প্রায় ৮/১০টি স্থানে মাছ মরে ভেসে উঠছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ফয়সাল বলেন, রাতে নদীর পাড় জুড়েই লাইটের আলো দেখা গেছে। পরে জানলাম নদীর পানিতে ভেসে ওঠা মাছ ধরতে মানুষ ভীড় করছে।
সমসাবাদের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, মঙ্গলবার রাতে লোকজনের সুরগোল শুনে নদীর পারে গেলে পানিতে ভেসে উঠা মরা মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। এ অবস্থা ভোর রাত পর্যস্ত থাকে। তবে সকালে কাউকে দেখা যায়নি। কারণ জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে কোনো মাছ নেই।
ইছামতী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক সাংবাদিক রাশিম মোল্লা বলেন, মৃত ইছামতীর সাথে পদ্মার সংযোগস্থল কাশিয়াখালী ও কার্তিকপুরে স্লুইস গেইট নির্মাণের দাবী আমাদের বহুদিনের। আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরে বার বার তাগিদ দিয়েও তাদের সারা পাইনি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের গাফিলতির ফল এটা। তাদের লাগামহীন অনিয়মের কারণে আজ আমরা এই দুষিত দুর্গন্ধ পানি পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গত মাসে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নদীর কচুরিপানা পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় উপজেলা প্রশাসন আমাদের ধন্যবাদ তো দুরের কথা, কোন উৎসাহ দেয়নি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কারিশমা আহমেদ বলেন, দুটি কারণে এটা হতে পারে। প্রথমত পানিতে প্রচুর কচুরিপানার কারণে অক্সিজেন লেবেল কমে যেতে পারে। এছাড়া পানি অতিরিক্ত মাত্রায় দূষণ হলেও মাছ মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত বিষয়টি আমরা জানার চেষ্টা করছি যাতে এ অবস্থার প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া নাশকতার বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন, কালীগঙ্গা ও ইছামতী দূষণের বিষয়ে অবহিত আছি। বাঁধের মুখে স্লুইস গেইট নির্মাণের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা হবে। তাছাড়া আগামী মাসিক সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকার সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানা মুঠোফোনে জানান, নবাবগঞ্জের দুটি স্লাইস গেইট নির্মাণ প্রকল্পের একটি নথি ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে বলে আমার জানা আছে। বাকিটা আমার উচ্চপদস্থরা জানেন।
মুমু