
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
কবি নির্মলেন্দু গুণ কাশফুল নিয়ে লিখেছেন- ‘ক্ষেতের আলে নদীর কূলে পুকুরের ওই পাড়টায়, হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে বাঁশ বনের ওই ধারটায়। উচ্চ দোলা পাখির মত কাশ বনে এক কন্যে, তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া কালো খোঁপার জন্যে। শরৎ রানি যেন কাশের বোরখা খানি খুলে, কাশ বনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে।’
গ্রামীণ জনপদে দেখা যায় না কবির সেই কল্পিত কাশবন। কাশবনে নববধূর আনাগোনা। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস নিয়ে শরৎকালের রাজত্ব। শরৎকাল এলেই গ্রামবাংলার ঝোপ-ঝাড়, রাস্তা-ঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে কাশফুলের মন মাতানো নাচানাচি দেখা যেত।
এখন আর শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে কাশফুল চোখে পড়েনা। নদীর দু’ধারে,আসিলে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য আর দেখা যায় না। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে কাশবন। উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুরপাড় ও মাহরশী নদীর পাড় সাদা হয়ে থাকতো কাশফুলে। পালকের মতো নরম এবং সাদা ফুলের কাশফুল এখন আর পড়ে না চোখে।
শরৎকালে রোদ-মেঘের খেলায় কাশবনের ফুলগুলো নদীর ঢেউয়ের মত দোল খেতো। কাশবনের ফুলগুলো দোল খেতো একটার সঙ্গে আরেকটা। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যেতো।
মনে হতো এ যেন নীল আকাশে সাদা বকের খেলা। তখন ভিন্ন রকম আনন্দে মন ভরে যেতো। শরৎ শুভ্রতার ঋতু। শরৎ মানেই কাশফুলের সাদা হাসি। গ্রামের নববধূরা অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে নরম কাশফুল মাথার খোঁপায় পড়তে কাশবনে ছুটে যেত দলবেঁধে। মাথার খোঁপায় পড়তো নরম পালকের মত সাদা কাশফুল।
কাশবনের ব্যবহার বহুবিধ। চারাগাছ একটু বড় হলেই এর কিছু অংশ কেটে গরু-মহিষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কাশ দিয়ে গ্রামের বধূরা ঝাঁটা, ডালি, দোনা তৈরি করে আর কৃষকরা ঘরের ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন।
বর্তমানে কৃষি প্রযুক্তির দাপটে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কাশবন উজাড় হচ্ছে। বিচ্ছিন্নভাবে থাকা যে কয়টি কাশফুল চোখে পড়ে সেগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের বিনোদন- প্রকৃতিকে দেখার শখ-আহ্লাদ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।
ঝিনাইগাতীর অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার (ব্যাটালিয়ান) মো: জহরুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইগাতীতে একসময় মাহরশী নদীর তীরসহ, খাল-বিল, ক্ষেতের আল ও পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন পতিত জমিতে কাশবনে ভরপুর ছিল। প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমে যাওয়া এবং উপলব্ধি না থাকায় কাশবন ও কাশফুল হারিয়ে যাচ্ছে।
মিরাজ খান