ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বস্তিবাসী শিক্ষার্থী

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১ ডিসেম্বর ২০২৩

বস্তিবাসী শিক্ষার্থী

.

বুধবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র এক অনুষ্ঠানে এলাকার বস্তিতে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রতিবছর ডিএনসিসির পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে। রাজধানীর কড়াইল, ভাসানটেক সাততলা বস্তিসহ অন্যান্য বস্তির শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্যই এই বৃত্তির ব্যবস্থা।

উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশা প্রায় প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। সেই লক্ষ্যে কাজের খোঁজে মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরগুলোতে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বেশি আসছে। রিকশাওয়ালা, চর্মকার, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেশিরভাগের ঠিকানাই নগরীর বস্তিগুলো। ঘনবসতির কারণে বস্তির ঘরগুলোতে থাকে না পর্যাপ্ত আলো বাতাস। টয়লেট, গোসল এমনকি রান্নার জন্য দিতে হয় লম্বা লাইন। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও অনুপস্থিত। বস্তির বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগের অধিকাংশই অবৈধ। এখানকার অনেক শিশু বেড়ে ওঠে পুষ্টিহীনতায়। বস্তির শিশুদের পড়ালেখাও বলা যায় এনজিও নির্ভর। এনজিওর স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে তাদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায়। তার ওপর পরিবারের বাড়তি আয়ের চাপ তো রয়েছেই। ফলে, তারা আলোকিত জীবনের স্বাদ থেকে বঞ্চিত প্রজন্মের পর প্রজন্ম। এমনকি তাদের অনেককে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজেও জড়াতে দেখা যায়। বস্তিতে মানুষ বাস করে নিতান্তই আর্থিক অসঙ্গতির কারণে। এর পেছনে রয়েছে আর্থসামাজিক রাজনৈতিক কারণও। নগর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বছরের পর বছর দারিদ্র্যের চক্রে আটকে আছে এসব শ্রমজীবী মানুষ।

বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের পথে। দেশ উন্নয়নের যে ধারায় রয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে বস্তিবাসীসহ পিছিয়ে পড়া সকল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানব উন্নয়ন সূচকের অগ্রগতির জন্যও এটি আবশ্যক। বস্তিবাসীর জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খেলার মাঠ, পার্ক বিদ্যালয় স্থাপন করা প্রয়োজন। যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া অতি জরুরি। তাছাড়া লক্ষ্যে গৃহীত সরকারি প্রকল্পগুলোও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া আবশ্যক।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের লাখ লাখ বস্তিবাসী মৌলিক সেবা বঞ্চিত। নানা শ্রেণিপেশার যেসব মানুষ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে, তাদের মানবেতর জীবন কাম্য হতে পারে না। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের জীবন পাল্টে দেওয়া যাবে না। তবে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহায়তায় বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের জীবন অনেকখানি স্বস্তিদায়ক করে তোলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে একটি অনন্য উদ্যোগ।

×