ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

মুজিব : একটি জাতির রূপকার

-

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১২ অক্টোবর ২০২৩

মুজিব : একটি জাতির রূপকার

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু এক অভিন্ন ও অবিভাজ্য। একটি অন্যটি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না, যাবে না কোনোদিন। যতদিন এই বিশ্ব থাকবে, থাকবে বৈশ্বিক মানচিত্র ও ইতিহাস ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকবেন। এই বেঁচে থাকা শুধু বাঙালির হৃদয় মন ও মননে নয়, বরং বিশ্ববাসীর কাছেও। কেননা জাতির পিতা আজীবন-আমৃত্যু আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দুঃসহ জেল জীবন কাটিয়েও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দাঁড়িয়ে আছে স্বগৌরবে স্বমহিমায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ যেন বজ্রতুল্য- বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা- মুক্তির সনদ। আর তাই ভাষণটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম একটি ভাষণ হিসেবে পেয়েছে স্বীকৃতি। 
তবে দুঃখজনক হলো, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫২ বছর পরও জাতির পিতার ওপর কোনো পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য জীবনী কিংবা ইতিহাস লিখিত হয়নি, চলচ্চিত্র, নাটক তো দূরের কথা! এ বিষয়ে এ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে সে সবই আংশিক ও অপূর্ণাঙ্গ। প্রামাণ্য তো নয়ই। যা হোক দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনী অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ দেখেছে আলোর মুখ। আজ দেশের ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্রটি। তবে ভারতে সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২৭ অক্টোবর। ইতোমধ্যে কানাডার টরন্টোতে প্রিমিয়ার হয়েছে এটির। সেখানে খুব প্রশংসিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। জাতির পিতার দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাও এটি দেখে প্রশংসা করেছেন।
চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন ভারত ও উপমহাদেশের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন এর সঙ্গে জড়িত অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ কলাকুশলীরা। তবে এও বলতে হবে যে, বঙ্গবন্ধু এমন একটি মহান অতুলনীয় ও অননুকরণীয় ব্যক্তিত্ব যাকে চলচ্চিত্রসহ যেকোনো মাধ্যমে ধারণ ও পরিস্ফুট করে তোলা এক কথায় দুঃসাধ্য ও অসম্ভব। কেননা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস তো বটেই, এমনকি বৈশ্বিক ইতিহাসেও শেখ মুজিবের মতো মহানায়কের আবির্ভাব সহজে ঘটে না বললেই চলে। তবু আমরা আশাবাদী হতে চাই এই দেখে যে, বাঙালি জাতির দীর্ঘপ্রতীক্ষার অবসান হলো অবশেষে।
চলচ্চিত্র শিল্পের গৌরবোজ্জ্বল অতীত পুনরুদ্ধার, বিকাশ ও মানোন্নয়নে সরকার থেকে প্রতিবছর চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য অনুদান   দেওয়া হয়ে থাকে। সৃজনশীল নতুন পরিচালক, প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। তবে ভালোমানের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ বাজেট প্রয়োজন, তা দেওয়া হয় না। 
এক হিসাবে জানা যায়, সারাদেশে বর্তমানে টিকে আছে ১৭৪টি হল। এগুলোর মধ্যে নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শিত হয় ১১০টিতে। ২৮টি জেলায় আদৌ কোনো সিনেমা হল নেই। যে কারণেই হোক না কেন, ফিল্ম বা চলচ্চিত্র তার ঐতিহ্য ও কৌলীণ্য হারিয়েছে। এর নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁজি ও লগ্নিকারীর অভাব। এহেন শোচনীয় অবস্থার অবসান ঘটাতে জাতির পিতার ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি সহায়ক হবে বলেই প্রত্যাশা।

×