ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সর্বজনীন পেনশনে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে করণীয়

সাইফুল ইসলাম তালুকদার

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সর্বজনীন পেনশনে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করতে করণীয়

সাইফুল ইসলাম তালুকদার

ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন প্রবাসী পেনশন স্কিম চালু করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু প্রবাসীদের অনেকেই ভালোভাবে জানেন না এ পেনশন স্কিম কি। আবার যারা জেনেছেন তাদের অনেকেই ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না এ পেনশন স্কিম করার নিয়ম ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে। এর ফলে সরকার চমৎকার উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও প্রবাসীদের মাঝে তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিমত সচেতন প্রবাসীদের। তারা বলেন, সরকারের নতুন চালু করা প্রবাসী পেনশন স্কিম প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ।

তবে এ নিয়ে রয়েছে নানা রকম প্রশ্ন ও আলোচনা। যেমন- প্রবাসীরা কোথায় এবং কিভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন, প্রবাস স্কিম কত বছর করে, মোট কত কিস্তি, প্রতি কিস্তিতে টাকার পরিমাণ কত, কত টাকার কিস্তিতে মাসিক কত টাকা পেনশন পাবেন, দেশে ফিরে সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করা যাবে কিনা, বর্তমানে নির্ধারিত চাঁদার পরিমাণ কমানো যায় কিনা, প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন কিনা, এ পেনশন স্কিমের আওতায় সুদমুক্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, থাকলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী কত টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন ইত্যাদি। 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সমিতি দুবাইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াকুব সৈনিক বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে যেভাবে এটা প্রচার হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। মিরসরাই সমিতি ইউএইর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মোজাহের উল্লাহ  মিয়া বলেন, সরকার পেনশন স্কিম নিয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা একটি ভালো উদ্যোগ। অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কিন্তু কোথায় কিভাবে করবেন, কার কাছে করবেন এটা ভালোভাবে প্রচার করা দরকার। সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদ ইউএইর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালেহ বলেন, প্রবাসীদের জন্য পেনশন স্কিম সময়োপযোগী। তবে এটি ব্যাপকভাবে প্রচার করার জন্য প্রবাসে কমিউনিটি ও সাংবাদিকদের ব্যাপক প্রচার করা প্রয়োজন।

গালফ নিউজ, ইউএইর সাংবাদিক সাইফুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের জন্য যে পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে তার ভেলিডিটিগুলো ভালোভাবে সাজানো যায়। আরও কিছু যোগ করা যায়। রিচার্জ করার পর যে বেনিফিট রয়েছে তার পাশাপাশি আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা যোগ করা যায়। যেমনÑ  ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া যায় তাহলে তারা উপকৃত হবেন। আমরা যারা প্রবাসে থাকি তারা তো আর দেশে গিয়ে এসব করতে পারি না।   
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন আবুধাবির সভাপতি প্রকৌশলী মুয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রবাসের চাকরি অস্থায়ী। দুই বছর, পাঁচ বছর, দশ বছর, ২০ বছর। এই পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত লোকগুলো যখন দেশে চলে যাবে এবং এই দেশ থেকে বের করে দেয়, তবে সে ক্ষেত্রে কি অবস্থা হবে। এসব বিষয়গুলো সরকারের পরিষ্কার করা দরকার। তবে পেনশন স্কিম বিষয়ে ধারণা দিয়ে প্রবাসীদের আগ্রহী করে তুলতে হলে ব্যাপকভাবে ক্যাম্পেন বা প্রচারের প্রয়োজন। এ জন্য প্রবাসীদের আগ্রহ বৃদ্ধিতে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পাশাপাশি বাংলাদেশী সংগঠনগুলোরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, তারা প্রবাসী পেনশন স্কিম বিষয়ে প্রবাসীদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই ও উত্তর আমিরাতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম করছেন, সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছেন, গোল টেবিল বৈঠক হয়েছে। সামনে তাদের আরও কর্মসূচি রয়েছে, ওইসব কর্মসূচির মাধ্যমে তারা প্রবাসীদের অবহিত করবেন। তিনি বলেন, তবে এটি একটি নতুন পদ্ধতি, নতুন সিস্টেম। সুতরাং এটি বুঝে উঠতে একটু সময় লাগবে।

কারণ, এ পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড এবং টেকনোলজি বেজ একটি কর্মসূচি। প্রবাসীরা ঘরে বসেই কম্পিউটারের মাধ্যমে পেনশন স্কিমের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাইয়ের ওয়েবসাইট ও ফেসবুকের মাধ্যমেও প্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে কারও কিছু বুঝতে সমস্যা হলে কনস্যুলেটের হেল্প লাইনে যোগাযোগ করলে সহযোগিতা করা হচ্ছে। অনেকেই পেনশন স্কিমের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন, আবার অনেকে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে সমস্যায়ও পড়ছেন। তিনি বলেন, আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে আমরা আশাবাদী আস্তে আস্তে দুবাই ও উত্তর আমিরাতের প্রবাসীরা আকৃষ্ট হয়ে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

লেখক :  প্রবাসী সাংবাদিক সমিতির (প্রসাস) সভাপতি, সংযুক্ত আরব আমিরাত

×