
.
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শনিবার সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধে-’৭১এর ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে? সেজন্য সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের শুরু থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী একটি শক্তি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
জয়লাভ করার এত বছর পরও তারা এখনো সক্রিয়। ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা কোনোভাবে ক্ষমতায় এলে বাঙালি জাতিকে আবারও স্লোগান নিয়ে রাজপথে নামতে হবে’- ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মধ্যে রয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার গোষ্ঠী, জামায়াতে ইসলাম যারা কখনোই চায়নি যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর কাছে মর্যাদা লাভ করুক। এখন এরা দেশে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করাই তাদের লক্ষ্য। সঙ্গে এসব ষড়যন্ত্র যেন আমাদের প্রভাবিত করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি স্তরের জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এসব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সহযোগিতায় ২৫ মার্চ ১৯৭২ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র এবং জাতিকে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দুঃসাহস পায়। তাদের সহযোগিতা ছিল বলেই আমাদের দেশের ৩০ লাখ শহীদ এবং তিন লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মতো নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
১৯৭১ সালের বাংলার মাটিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যা বিংশ শতাব্দীর জঘন্যতম সুবৃহৎ গণহত্যা। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে শুধু আমাদের দেশেই নয়, দিনটিকে যেন সারাবিশ্ব উপলব্ধি করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে আলোচনাসভা, প্রতিবাদ, মানববন্ধন, সর্বোপরি বাংলাদেশ জেনোসাইডবিষয়ক ভিডিও প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃতির দাবিতে ৯ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। স্বীকৃতি পেয়ে গেলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে কত মানুষের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে তা জানতে পারবে বিশ্ববাসী। আমরা শুধু ২৫ মার্চ ১৯৭১ নয়, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার স্বীকৃতি চাই।
এসব চাওয়া বাস্তবায়ন এবং তার গতিকেও ত্বরান্বিত করার জন্য বর্তমান সরকার এবং জনগণের ঐক্যবদ্ধ যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে অটল থাকতে হবে। ভবিষ্যতে এসব চাওয়া যেন বাস্তবে রূপ নেয় সেজন্য আমাদের আসন্ন নির্বাচনে সঠিক প্রার্থীকে নির্বাচন করতে হবে। কোনোভাবেই যেন স্বাধীনতাবিরোধী কোনো দল ক্ষমতায় এসে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতার সম্মান নষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রাকে বেগবান রেখে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে, একত্রিত হয়ে দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেওয়াই সবার একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।