
.
সরকার ইট প্রস্তুত ও ইটভাঁটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। আইনে যেসব ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেসব ক্ষমতা প্রয়োগ না করার ফলে আইনের এরকম বরখেলাপ চলছেই। আইনে আছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া কোনো ইটভাঁটি স্থাপন করা যাবে না (৪ ধারা)। কিন্তু দেশের সব ইটভাঁটির অনুমোদন নেই। চাষযোগ্য জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাঁটিতে ব্যবহারের কারণে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
ফলে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইটভাঁটি থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হওয়ায় তা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের রোডম্যাপ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। নির্মাণ কাজে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকের বহুল ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। অবৈধ ইটভাঁটি পুরোপুরি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট। এ মুহূর্তে প্রয়োজন ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব সাশ্রয়ী কংক্রিট ব্লক দিয়ে নির্মাণ কাজ বাধ্যতামূলক করা। কারণ অবৈধ ইটভাঁটিতে পুড়ছে পরিবেশ। সরকারি বন এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করেই কাঠ পোড়ানো হয়। পুড়ছে ম্যানগ্রোভ বন। টাকা দিলে পোড়ানো যায় ইট। এসব অবৈধ নিবন্ধনহীন ইটভাঁটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এসব বন্ধে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রশাসন মাঝে মাঝে জরিমানা করে ক্ষান্ত। এ যেন ইঁদুর-বিড়াল খেলা। ফলে, ফসলি কৃষি জমির টপ সয়েল ধ্বংস হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা, সঙ্গে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পাহাড় নদী-নালা খাল-বিল। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা, তিন পার্বত্য জেলাসহ সারাদেশে চলছে এ ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। পরিবেশবিদ, মানবাধিকার কর্মীরা হয়ে পড়েছে উৎকণ্ঠিত। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দিয়েছে নাগরিকদের চর্মরোগ, চোখ ওঠা, জ্বালাপোড়া ও শ্বাসকষ্ট। কৃষি উৎপাদন হ্রাস হয়ে বেকার হয়ে পড়েছে দরিদ্র কৃষক কুল। অবৈধ ইটভাঁটির নিউজ করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়েছেন অনেক সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী। চট্টগ্রামে চন্দনাইশ থানা এলাকায় শুধু একটি ইউনিয়নে ১৯টি অবৈধ ইটভাঁটি। পুরো থানা এলাকায় ২৫টি অবৈধ ইটভাঁটি। রাঙ্গুনিয়া, সন্দীপ, সাতকানিয়া, পটিয়া, চকরিয়া কক্সবাজার প্রভৃতি এলাকাসহ পুরো দেশে একই অবস্থা, চলছে পরিবেশ ধ্বংসের নির্মমতা। বিএইচআরএফ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ৩৪৫টি ইটভাঁটির ২৫৬টি অবৈধ। রূপগঞ্জে এক ইউনিয়নে আছে ৬৪টি ইটভাঁটি। মাগুরা জেলায় মোট ১০৭টি ইটভাঁটির মধ্যে ১০৪টিরই নেই নিবন্ধন। কুষ্টিয়ায় মিরপুরে ১৬১ টি ইটভাঁটির মধ্যে ১৮টি বৈধ, ১৪৩টি অবৈধ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, উপজেলার সাতকানিয়ায় ৩৮টি, হাটহাজারীতে ৩৯টি, চন্দনাইশে ৩১টি, লোহাগাড়ায় ১৫টি, আনোয়ারায় ৩টি, বাঁশখালীতে ২টি, সন্ধীপে ৪টি, মিরসরাইয়ে ৮টি, সীতাকুন্ডে ২টি, বোয়ালখালীতে ৭টি ও পটিয়া উপজেলায় ৩টি ইটভাঁটি রয়েছে, যেগুলোর কোনো অনুমোদন নেই প্রশাসনের।
রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, হাটহাজারী এবং লোহাগাড়া উপজেলার অধিকাংশ ইটভাঁটি তৈরি হয়েছে পাহাড় কেটে এবং কৃষি জমি ধ্বংস করে। আর এসব ইটভাঁটিতে ইট তৈরি হয় বনের কাঠ পুড়িয়ে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় এ পর্যন্ত বাঘাইছড়িতে ২টি, কাপ্তাই ১টি, রাজস্থালীতে ৩টি, লংগদুতে ৩টি ও কাউখালীতে ১৬টি ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়। এসব ইটভাঁটিতে আইন অমান্য করে অবৈধভাবে কাঁচামাল হিসাবে পাহাড় থেকে কাটা মাটি এবং জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বনের কাঠ। ফলে, সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড়ধস ও ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল।
লক্ষ্মীপুরে রামগতি উপজেলায় চররমিজ ইউনিয়নে ২৮টি অবৈধ ইটভাঁটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডেই ১৪টি অবৈধ ইটভাঁটি চালানো হচ্ছে পরিবেশে ছাড়পত্র ছাড়া। চরফ্যাশনে অনুমোদনহীন ২৮টি ইটভাঁটির ২৫টি অবৈধ। এসব ইটভাঁটিতে ম্যানগ্রোভ বনের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। বিশেষ মহলকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাঁটি পরিচালনা করছে প্রভাবশালী মহল। তাও আবার ১২০ ফুট উচ্চতায় স্থায়ী চিমনি নেই এসব ইটভাঁটিতে। এভাবে নেত্রকোনার ৩৮টি ইটভাঁটির ৩৪টি অবৈধ, সারাদেশের এই চিত্র। আইনে আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দীঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)। কিন্তু বাস্তবে তো আমারা দেখি অধিকাংশ ইটভাঁটির জন্যই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দীঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট। জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয় ইটভাঁটি। আইনের তোয়াক্কা না করে যখন ইটভাঁটির অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন ওই এলাকায় ইটভাঁটি বাড়তে থাকে। অর্ধযুগ পরে দেখা যায় ওইখানে আর কৃষি জমি নেই। ফলে, তখন যে কেউ চাইলে আশপাশে আরও ইটভাঁটি গড়ে তুলতে পারে। এভাবেই ইটভাঁটিগুলো দিন দিন কৃষি জমি শেষ করছে। অন্যদিকে উক্ত এলাকায় কৃষি জমি না থাকায় নবায়নের সময় ভাঁটিগুলো বৈধ দাবি করছে। ফলে, পুনরায় আবার নবায়নের আবেদন করে এসব ভাঁটি নবায়নও পেয়ে যাচ্ছে।
তবে আইনের প্রয়োগ পুরোপুরি থাকলে বেশিরভাগ ভাঁটি বন্ধ হয়ে যাবে। ৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইটভাঁটিতে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু দেশের কয়টি কারখানায় এ বিধান মেনে ইট তৈরি হয়! যদি কোনো আইন লঙ্ঘন করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ইটভাঁটিতে ইট প্রস্তুত করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদ- বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারেন। এছাড়া আইনে অননুমোদিত স্থানে ইটভাঁটি স্থাপন করলে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- পেতে পারেন। আইনের দুর্বলতা ও ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে প্রকৃত অপরাধীরা। অনেকের প্রশ্ন, ইটভাঁটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের উন্নয়ন কাজ, নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এর বিকল্প নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু না করলে অবৈধ ইটভাঁটিবিরোধী সকল অভিযান ও কর্মকান্ড ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে।
প্রচলিত ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক
ইটভাঁটিজনিত বায়ু দূষণ পরিবেশ দূষণ বন্ধ করে ইটের বিকল্প ব্লক বা অটোব্রিক্স ব্যবহার করতে ডেভেলপার কোম্পানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিগত পর্যায়েও তা কার্যকর করতে হবে। এজন্য সরকার কর্তৃক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাঁটি স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ জারি করা হয়। যেটি ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আইনের কিছু ধারায় কিছু বিধি-নিষেধ ও শর্ত থাকায় আইনটি প্রয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আমাদের পরিবেশ আইনও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ফসলি জমির মাটি ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক ব্যবহার উৎসাহিত করতে বর্তমান আইনে কিছু ধারায় পরিবর্তন আনা দরকার। এটি হলে কৃষির জন্য অত্যন্ত দরকারি টপ সয়েল রক্ষা ছাড়াও ইটভাঁটিজনিত পরিবেশ দূষণ কমবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ইটভাঁটিগুলোতে প্রতিবছর ২০ লক্ষ টন জ্বালানি কাঠ ও ২০ লক্ষ টন কয়লা পোড়ানো হয়। তাদের হিসেবে এ থেকে বছরে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হয় প্রায় ৯০ লক্ষ টন। অথচ দেশে পুড়া ইটের কোনো প্রয়োজন নেই। নদী থেকে ড্রেজিং করে যে বালি ও মাটি উত্তোলন হয় তা দিয়ে ইটের চাহিদা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব। সরকারের একটি অঙ্গীকার ছিল ২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, কিন্তু সেটি প্রশাসন করতে পারেনি। সভ্য দেশগুলোতে নির্মাণ কাজে এমন পোড়া ইট ব্যবহার করা হয় না পরিবেশ ও জনস্বাস্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই। রাস্তাঘাট বা ভবনের দেয়ালে পোড়া ইট ব্যবহারের আর কোনো প্রয়োজন নেই। সব কাজ ব্লক দিয়ে করা সম্ভব। ইট হলো মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা আর আগুনে না পুড়িয়ে মাটি বালি বা সিমেন্ট বা অন্য কোনো ম্যাটেরিয়াল দিয়ে হবে ব্লক। ইট তৈরির স্থান ইটভাঁটি আর ব্লক তৈরি হবে কারখানায়। প্রতিবছর নদীতে পলি আসে, তা ড্রেজিং করতে হয় প্রতিবছর। এগুলো নদীর তীরে রাখা হয়। এই মাটি কাজে লাগিয়ে ব্লক তৈরি হবে। পর্যাপ্ত না হলে তখন সরকার বের করবে নদীর কোন্ জায়গার মাটি নেওয়া যাবে আর কোন্ জায়গার মাটি নেওয়া যাবে না। দেয়ালে ইটের বদলে অনেক বিকল্প আছে। রাস্তায় যেমন অনেক ইট লাগে কিন্তু সেটিও দরকার হবে না। মাটির সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে কমপ্যাক্ট করে আরও ভালো ও টেকসই জিনিস করা যায়।
আগেই বলেছি কোনো উন্নত দেশে পোড়া মাটি ব্যবহার হয় না। তাই আমরাও পারব না কেন? আমাদের মানুষ বেশি ও কৃষি জমি কম। তাই কৃষি জমি যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য আমাদের এই নীতিতে (পোড়া ইটের বদলে ব্লক) যাওয়া উচিত ছিল বহু আগে। ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক সাশ্রয়ী ও তুলনামূলক ভূমিকম্প সহনীয় হওয়ায় দেশের নির্মাণ খাতে বাড়ছে ব্লকের চাহিদা। উদ্ভাবিত এই ব্লক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণ ব্যয় ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তবে এখনও পর্যন্ত এই প্রযুক্তি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি বলে দেশবাসী এর সুফল এখনো পাচ্ছে না। ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকে ঘর বানানোর চর্চা বাড়ায় দেশে ইটভাঁটির কারণে পরিবেশের ক্ষতি বন্ধে নতুন আশা সৃষ্টি করেছে। কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে বানানো ইট পোড়াতে কয়লা ও গাছ ব্যবহার করায় পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। এ পর্যন্ত বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ৩০ ধরনের কংক্রিট ব্লক উদ্ভাবন করা হয়েছে।
এগুলো পরিবেশবান্ধব, মূল্যসাশ্রয়ী, ওজনে হালকা, ভূমিকম্প, আগুন ও লবণাক্ততা প্রতিরোধী, অতি উষ্ণ বা অতি শীতল আবহাওয়ার বিপরীতে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ দেয়। এগুলো দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যয়সাশ্রয়ী। এসব ব্লক তৈরিতে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহারের পরিবর্তে নদীর তলদেশের মোটা বালি ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। কখনো ফ্লাই অ্যাশ, পাথরের ধুলো বা অন্যান্য সামগ্রীও ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ব্লকের মধ্যে রয়েছে কম্প্রেসড স্ট্যাবিলাইসড আর্থ ব্লক (সিএসআইবি), ইন্টার লিংকিং সিএসইবি, থার্মাল ব্লক (টিবি), ফেরো সিমেন্ট স্যান্ডউইচ প্যানেল, সেলুলার ব্লক, ফ্লাই অ্যাশ ব্রিক ও অন্যান্য। পরিবেশ বান্ধব ইকো ব্লকের নানা সুবিধা ও প্রচলিত ইটভাঁটি থেকে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি রোধের দায়বদ্ধতা থেকে মানুষ ক্রমশ পরিবেশবান্ধব ঘর তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে তার গতি আরও বাড়াতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াকে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে হবে, শহর-নগর গ্রামেগঞ্জে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে যুগোপযোগী কাজ করতে হবে। গত ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি নির্মাণ কাজে প্রচলিত ইটের পরিবর্তে শতভাগ পরিবেশ বান্ধব ব্লক ব্যবহারে নির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ব্লকের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে কনকর্ড গ্রুপ অব কোম্পানি বিশেষ করে পেভমেন্ট, দেওয়াল ও ছাদের জন্য ব্লক তৈরি করছে। মীর সিরামিক মেঝে, দেওয়াল, সিঁড়ির জন্য তৈরি করছে পরিবেশবান্ধব টাইলস।
এ ধরনের ব্লক নির্মাণে ৭০ শতাংশ নদীর তলদেশ থেকে নেওয়া মোটা বালি, ১০ শতাংশ সিমেন্ট ও ২০ শতাংশ শুকনো মাটি মিশিয়ে মেশিনে উচ্চমাত্রায় চাপ দেওয়া হয়। গাঁথুনির জন্য সিমেন্ট, বালু ও পানি কম লাগে। রাজমিস্ত্রির খরচও কম। দেওয়ালে প্লাস্টারের প্রয়োজন না হওয়ায় সরাসরি রং করা যায়। পরিবেশবান্ধব উপকরণ নিয়ে নির্মাণ কাজের দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য তারা প্রতিমাসে ৫০ নির্মাণ কর্মী ও অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পরিবেশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রচলিত ইটভাঁটির সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজারের মতো। এসব ভাঁটিতে বছরে প্রায় ২২.৭১ বিলিয়ন পোড়া ইট হয়। এজন্য ২৫ বিলিয়ন কিউবিক ফুট টপ সয়েল পোড়াতে সাড়ে ৩ মিলিয়ন টন কয়লা ও ১.৯ মিলিয়ন টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হয়। যা থেকে মারাত্মক ক্ষতিকর ৯.৮ মিলিয়ন টন গ্রিন হাউস গ্যাস হয়। এ সব বিষয় বিবেচনা করে এখনই সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অবৈধ ইটভাঁটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে এর বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নইলে ভয়াবহ পরিবেশ বির্পযয়ের দিকে এগোচ্ছে দেশ।
লেখক : আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী