ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৪ জুন ২০২৩

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা

.

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওড়িশায় তিনটি ট্রেনের ত্রিমুখী ভয়াবহ সংঘর্ষে অন্তত ২৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত শতাধিক। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে এবং তিনটি ট্রেনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশী যাত্রীও রয়েছেন, যারা প্রধানত চিকিৎসার নিমিত্ত যাচ্ছিলেন চেন্নাইয়ে। ত্রিমুখী ট্রেন দুর্ঘটনাকে বলা হচ্ছে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভয়ংকর মর্মান্তিক। শুক্রবার রাতে কলকাতাগামী ব্যাঙ্গালুরু-হাওড়া-সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিল ডাউন লাইনে।

সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ওড়িশার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এই ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর মিনিট পাঁচেক পর এলাকা পার হচ্ছিল চেন্নাইগামী শালিমার-চেন্নাই সেন্ট্রাল করম- এক্সপ্রেস ট্রেনটি। অকস্মাৎ এই ট্রেনের কয়েকটি বগি হয় লাইনচ্যুত। পাশের লাইনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল মালবাহী একটি ট্রেন। করম- এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে প্রথমে ব্যাঙ্গালুরু-হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিতে সজোরে আঘাত করে। পরে ট্রেনটির কয়েকটি বগি আছড়ে পড়ে পাশের মালবাহী ট্রেনের ওপর। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং পর্যবেক্ষকের ধারণা, মূলত তিনটি ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘাত-সংঘর্ষজনিত কারণে নিহত আহতদের সংখ্যা বেড়েছে। সিগন্যালের ত্রুটির কারণে ঘটেছে এই মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। বাংলাদেশী যাত্রীদের স্বজনদের যোগাযোগের জন্য খোলা হয়েছে হটলাইন। স্থানীয় দূতাবাসের লোকজনও ঘটনাস্থলে গেছেন বিস্তারিত খবরাখবর নেওয়ার জন্য।

ভারতের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সুবিস্তৃত সারাদেশে। জনসংখ্যাবহুল দেশটিতে বিপুল সংখ্যক যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনে ভারতীয় রেলওয়ের বেশ সুনাম রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিম-লেও প্রশংসিত। দেশটিতে রেল ভ্রমণ আরামদায়ক, গতিশীল, সময় ব্যয়সাশ্রয়ী সর্বোপরি সেবাধর্মী। সারাদেশে রেল লাইনের নিয়মিত দেখভাল রক্ষণাবেক্ষণসহ আধুনিক সিংন্যালিং ব্যবস্থাও প্রচলিত। সুযোগ্য সুদক্ষ পরিচালনাসহ আপ এবং ডাউনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত দেশটিতে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ট্রেনের চলাচলের নিরাপদ নিশ্চয়তা থাকায় তুলনামূলকভাবে দুর্ঘটনার হারও নিতান্ত কম বলা চলে। সে অবস্থায় তিনটি ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষজনিত ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি বলা চলে অনাকাক্সিক্ষত অনভিপ্রেত। আমরা নিহত আহতদের জানাই গভীর সমবেদনা, সহানুভূতি সহমর্মিতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন।

ভারতের এই দুর্ঘটনা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক শিক্ষণীয় আছে। দেশের রেল পরিষেবার মান যথেষ্ট আধুনিক পর্যাপ্ত নয়। রেল লাইনগুলো পুরনো জরাজীর্ণ। রেল ক্রসিংগুলো অরক্ষিত প্রায়। সিগন্যালিং ব্যবস্থাও সেকেলে। অবশ্য বর্তমান সরকারের আমলে এসবের সংস্কারসহ আধুনিকীকরণের কাজ চলমান। আলাদা বাজেট বরাদ্দও আছে। জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায় গত ১০ বছরে দেশে অন্তত তিন শতাধিক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে নিহতের সংখ্যা ২২২২জন। আহত কয়েকশ ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প নির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ঢেলে সাজিয়ে সর্বাধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত, আরামদায়ক নিরাপদ করে তুলতে হবে পর্যায়ক্রমে।

×