ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

 প্রসঙ্গ সাম্প্রদায়িকতা

প্রকাশিত: ২১:২০, ২ জুন ২০২৩

 প্রসঙ্গ সাম্প্রদায়িকতা

.

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিতজাতীয় নির্বাচন ২০২৪ : ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগণের অধিকারশীর্ষক মতবিনিময় সভায় আবারো সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি উঠে এসেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন, এমন বার্তাও তুলে ধরা হয়েছে এই সভায়। বাস্তবতা হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেকটা নিরাপদ থাকে। ভিন্ন সময়ে তাদের ওপর বড় ধরনের নিপীড়ন চলে। এটিকে পাশ কাটিয়ে একতরফাভাবে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করার বিষয়টি কতটা সমীচীন গ্রহণযোগ্য এমন প্রশ্ন সামনে চলে আসে। তবে এদেশে স্যংখালঘুদের উৎসবের সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরেছেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতার একটা সামাজিকীকরণ হয়েছে। এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উৎসবের সময় হামলা হবে, এটাই যেন রীতি। হামলা কম হলে বলা হয় যে এবার কম হয়েছে।

সাম্প্রদায়িকতার সামাজিকীকরণ কিছুটা হলেও কেন ঘটছে তার কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। সবার আগে প্রয়োজন আত্মসমালোচনা। সেই সঙ্গে পারিবারিক শিক্ষা মূল্যবোধের পর্যালোচনা। একাত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে তেমন একটা সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে কেন এখনো সংখ্যালঘুদের একটি অংশ বিপন্ন বোধ করেন? জন্যে অবশ্যই ইতিহাসের পাতায় ফিরে তাকাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একাধিক শাসকের দীর্ঘকালীন অপশাসনের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর পুনর্বাসন ক্ষমতায়নে কারা ভূমিকা রেখেছে? সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির বিষবাষ্প ছড়ানোর অপচেষ্টা এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি।

সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে শুরু করে সাঁথিয়া, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লী, গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপাড়া গ্রামসহ যেখানে যখনই সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উসকানিমূলক তৎপরতা ষড়যন্ত্রমূলক দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না।

হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখন্ডে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশের সুমহান ঐতিহ্য। বাংলাদেশের প্রাথমিক পরিচিতি মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ দেশে মূর্তমান। দেশের সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক কান্ডজ্ঞানহীনদের কারণে কখনো কখনো তাদের সুনামও কণ্টকিত হয়ে ওঠে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ কিছু দেশে সংখ্যালঘুরা যেভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন হয়রানির শিকার হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে হিসেবে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত বটে।

গুটিকতক দুষ্কৃতকারীর জন্য সম্প্রীতির দেশে কখনোই সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে এই বাংলাদেশ, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর রক্তস্নাত দেশে তাদের কালো ছায়া কোনোভাবেই আমরা দেখতে চাই না।

×