ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজাতির ধান

-

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ৩১ মে ২০২৩

নতুন প্রজাতির ধান

সম্পাদকীয়

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারও সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারসহ সৃজনশীল উদ্ভাবনের ওপর। এরই অংশ হিসেবে ব্রি-র বিজ্ঞানীরা ধানের পাঁচটি নতুন জাত বা প্রজাতির উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন, যেগুলোর একর প্রতি ফলন ক্ষমতা বেশি, চাল সরু, সুগন্ধি ও উন্নতমানের। নতুন প্রজাতিগুলো হলো- ব্রি-ধান ৮৮, ব্রি-ধান ৮৯, ব্রি-ধান-৯২, ব্রি-ধান ৯৬ এবং বঙ্গবন্ধু ধান-১০০। এসব প্রজাতির ধানের ফলন সর্বনি¤œ ২৮ মণ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ মণ। রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, উচ্চফলনশীল। মূলত ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাত দুটি তিন দশকের পুরনো হয়ে যাওয়ায় এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গেছে। চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতটি বিশেষ করে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বেশি। ফলে, ফলন হয়েছে কম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা। এ কারণে কৃষি মন্ত্রণালয় চাইছে পুরনো জাতগুলো প্রত্যাহার করে নতুন উচ্চফলনশীল জাতের চাষাবাদ মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে। এবার যেমন বিনা-২৫ জাতের ধান প্রথম আবাদেই বাজিমাত করেছে মাঠপর্যায়ে উচ্চফলন ও উন্নতমানের ধান-চাল উৎপাদনের মাধ্যমে। চাল সরু ও সুগন্ধি বাসমতিতুল্য। ব্রি-র বিজ্ঞানীরা এও বলেছেন যে,  নতুন প্রজাতির ধান যে অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার উপযোগী, সেই এলাকার জাত দেবেন কৃষককে চাষাবাদের জন্য। ব্রি-র বিজ্ঞানীদের পাইপলাইনে রয়েছে আরও কয়েকটি নতুন প্রজাতির ধান, যা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক দেশের কৃষির উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিজ্ঞানী ও গবেষক দল বছর শেষে বড় একটি প্রবল আশা ও আশ্বাসের কথাও শুনিয়েছেন দেশবাসীকে। আপাতত খাদ্য ঘাটতি কিংবা খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই। বরং আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও আগামী বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত উদ্বৃত্ত থাকবে ৩০ লাখ টন চাল। দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চল জরিপ, মাঠপর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ, কৃষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি সর্বোপরি উপগ্রহচিত্র ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা। এর পেছনে ব্রি-র সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী ও গবেষক দলের উচ্চফলনশীল ধানের বীজ উদ্ভাবন, খরা ও লবণাক্ত পানি সহিষ্ণু ধান বীজের ব্যবহার ইত্যাদির অবদানও কম নয়। ব্রি জানিয়েছে, চলতি বছর আউশ-আমন-বোরো মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদন হবে ৩৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টনের বেশি। চাহিদা ও জোগানের হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে কমপক্ষে উদ্বৃত্ত থাকবে ৩০ লাখ টন চাল।
তবে দেশে ধান-চালের দামে প্রায়ই অস্থিরতা ও উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, যার অসহায় শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে কৃষক প্রায়ই ধান-চালের ন্যায্যমূল্য পান না, সরকারের ধান-চালের ক্রয়নীতি ও মূল্য নির্ধারণ সত্ত্বেও। মাঝখান থেকে লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়িয়া, চাতাল মালিক, পরিবহন ব্যবসায়ীসহ পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। অনুরূপ প্রায় প্রতিটি কৃষি পণ্য, ফল-ফুল, শাক-সবজি, মাছ, মাংসে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। সরকার কৃষককে স্বস্তি দিতে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্যও বাড়িয়েছে সময় সময়। অবশ্য মধ্যস্বত্বভোগী, আড়তদার ও চাতাল মালিকদের দৌরাত্ম্য এবং দাপটে মূল্যবৃদ্ধির এই সুফল শেষ পর্যস্ত কৃষকের ঘরে পৌঁছতে পারে না। কৃষকের স্বার্থরক্ষায় এদিকে নজর দিতে হবে সরকারকে।

×