ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের প্রস্তাবিত জিডিআই

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৯ মে ২০২৩

চীনের প্রস্তাবিত জিডিআই

সম্পাদকীয়

বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক টানাপোড়েন কবলিত বিশ্বে চীনের ভাইস-মিনিস্টার সুন ওয়েইডং-এর ঢাকা সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈঠকটি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীন আপাতত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দিলেও সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ- গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভÑ জিডিআই সম্পর্কিত দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি। উল্লেখ্য, এর আগে পরাশক্তি চীন আরেকটি বৈশ্বিক উদ্যোগ বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ বা বিআরআইয়ে যুক্ত হতে সাড়ে ছয় বছর আগে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে। বিআরআইয়ের পর ২০২১ সাল থেকে জিডিআইকে সামনে এনেছে চীন।
তবে বিআরআইয়ের সঙ্গে জিডিআইয়ের পার্থক্য বিদ্যমান। প্রথমটি মূলত পারস্পরিক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে ব্যাপকভাবে সংযুক্তির উদ্যোগÑ যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানিসহ নানা উপায়ে উপকৃত হতে পারে। আর জিডিআই হচ্ছে প্রধানত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ডিজিটাল অর্থনীতিকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়ন সহযোগিতার উদ্যোগ। ‘উন্নয়ন সহযোগিতা জোরদার এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিকাশ’ শীর্ষক এই সমঝোতায় পারস্পরিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলা, সংযুক্তির জন্য যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতিসহ ৮টি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে জিডিআইয়ে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে পাশে পেতে চায় চীন।

চীনের এই সমঝোতার খসড়া নিয়ে গত এপ্রিলে ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ এতে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে। তবে এও বলেছে, আপাতত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলে এর মেয়াদ হবে দুই বছর। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে চরম অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দাবস্থা  বিরাজমান, তাতে এমন একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে। তবে একই সঙ্গে বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রতিযোগিতাকেও আমলে নিতে হবে বাংলাদেশকে। 
চীন আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সে দেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে ইচ্ছুক। প্রধানমন্ত্রী আগামী সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারত সফর করবেন। একই মাসে  জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও যোগ দেবেন। এর আগে পরে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা সুবিধাজনক কোনো সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সময়ে চীনের প্রস্তাবিত নতুন জিডিআই নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দু’দেশের মধ্যে।

×