
দেশী এবং প্রবাসী এই শব্দ দুটির মধ্যে রয়েছে একটি স্পষ্ট বিভাজন রেখা
দেশী এবং প্রবাসী এই শব্দ দুটির মধ্যে রয়েছে একটি স্পষ্ট বিভাজন রেখা। দেশে বাস করা মানুষটি যখন জীবিকার তাগিদে, বিয়ে-শাদির মাধ্যমে কিংবা অন্য যে কোনো কারণে যদি দেশত্যাগী হয়ে ভিন দেশের বাসিন্দা হয় তাহলেই তার নামের সঙ্গে একটা টাইটেল যুক্ত হয়- প্রবাসী। প্রেক্ষাপটটি যদি দেশকেন্দ্রিক হয় সেক্ষেত্রে অধিকার ভোগের দিক থেকে প্রথম পক্ষ সুবিধাভোগী। অপরপক্ষ সুবিধাবঞ্চিত। ঘরে-বাইরে, মিডিয়ায় বিষয়টি আলোচনায় সরব, চিরন্তন- প্রবাসীর প্রবঞ্চনা। নানা ইস্যুতে এ নিয়ে আলোচনা বাদ পড়ে না কোথাও।
এক ঘরানার মানুষের কাছে প্রবাসী মানেই শ্রমিক। বিষয়টি মোটেও অসত্য নয়। পেশা যাই হোক শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জনই বড় সত্য। তবে এই শ্রমিক শব্দটি উঁচু শ্রেণি- ডাক্তার, প্রকৌশলী, গবেষক, প্রযুক্তিবিদের মতো ভিন্ন ভিন্ন উচ্চশিক্ষিত পেশার মানুষগুলোর সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে শ্রমিক শব্দটি যায় না, সামাজিকভাবে নির্ধারিত অবস্থানের কৌলিন্যের কারণে। ওভাবে বললে পেশার মর্যাদা রক্ষা হয় না। অবজ্ঞা, অসম্মান, তাচ্ছিল্য ও অবমূল্যায়নের প্রশ্ন এসে যায়।
বিশেষ শ্রেণির পেশা ও মর্যাদায় বিবেচিত হন তারা। এক্ষেত্রেও দুই শ্রেণির বিভাজন প্রকট। প্রবাসে দুই ভিন্ন সমাজে বিভক্ত এই দুই শ্রেণি। পরস্পরের মধ্যে হার্দিক সম্পর্ক স্থাপন ও যোগাযোগের সুযোগটা বেশ ক্ষীণ। দুই শ্রেণি দুই পৃথক দ্বীপের বাসিন্দা। এ নিয়ে এক পক্ষের প্রশ্ন- ওরা ভিআইপি। আর আমরা মানুষ না? এই প্রশ্নটা বেশি শুনতে হয় যখন অবহেলিত পক্ষ দূতাবাসে দাওয়াত বা কোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পান না। আবার ওরা পান বিশেষ মর্যাদা লাভের সুবাদে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই উন্নাসিক একটা মনোভাব প্রবল। যেমন কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে, ভাই বলে ডাকো যদি দেব গলা টিপেÑ এই হলো অবস্থা।
এই চিত্র প্রবাস জীবনের সমাজে নিজেদের কমিউনিটিতে যেমন সত্য, তেমনি তা নিজ দেশের বহু ক্ষেত্রেও চিরন্তন বাস্তব। দেশে সাধারণ কিছু মানুষ প্রবাসী নাম শুনলেই যেমন নাক সিটকায়, তেমনি পরচর্চা ও অসুয়া মানসিকতার প্রকাশ ঘটাতেও পিছপা হয় না। অকারণেই বলবে- ইস্্! দেখো ব্যাডার ফুটানি! বিদেশ থাকে বইলা ভাব দেখায়! ওর ট্যাকা আছে তো আমার কী?
বিদেশে রাস্তায় ঝাড়ু মাইরা, হুটেলে বর্তন মাইজা ট্যাকা কামায়। আমরা কি কিছুই জানি না। দ্যাশে গাড়ি-বাড়ির মালিক হইয়া ট্যাকার ফুটানি দেখায়। দ্যাশে থাকতে প্যাডের ভাত জুটতো না। সবই আমরা জানি। অখন বাজারে গিয়া ট্যাকার গরম দেখায়। বাজারে দরদাম না কইরাই বড় মাছডি কিন্যা লয়। ফুডানি দ্যাখছস!
এ নিয়ে আবার কিসের অনুযোগ? বাঙালির স্বভাব বৈশিষ্ট্য কি চাইলেই রাতারাতি বদলে যাবে? ভিন গ্রহের বাসিন্দা বলে বিবেচিত প্রবাসীরা এই অসুয়া মানসিকতার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাবে কিভাবে? বঞ্চনা, প্রতারণা, অবজ্ঞা, হয়রানি, জটিলতা তাদের পদে পদে। যুগ-কাল ধরে চলে আসছে এসব। প্রতিকার নেই। তবে প্রাণ উজাড় করা প্রতিশ্রুতি আছে রাষ্ট্রের সেবকদের পক্ষ থেকে। যত দ্রুত সম্ভব প্রবাসীর সকল সমস্যার সমাধান হবে। একেবারে কুইক অ্যাকশন।
অ্যাকশন হয় ঠিকই, তবে তা পক্ষে নয়, বিপক্ষে। হয়রানি, দুর্ভোগ, যন্ত্রণা, প্রবঞ্চনা, প্রতারণা বেড়ে যায় আগের চেয়ে বহুলাংশে। নতুন আইনে প্রবাসীর অধিকার আরও জটিল করা হয়েছে। প্রবাসীর ভোটাধিকার, দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট তৈরি, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ের জটিলতাসহ অসংখ্য সমস্যার দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি যুগ-কাল ধরে রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর সেবকদের মুখ থেকে তোতা পাখির মতো উচ্চারিত হলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকর বা ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণের নেই দেখা। বরং হয়রানি পদে পদে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে নাÑ জেনে ভীষণ স্বস্তি নিয়ে নিজ পরিবারের তিনজনের পুরনো বাংলা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দূতাবাসে জমা দিতে গিয়ে হলো এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। অনভিজ্ঞ কর্মচারী জানালেন এক নতুন নিয়ম বা আইনের কথা। জানতে চাইলাম কবে হলো এ নতুন আইন? বললেনÑ আগে থেকেই এই নিয়ম বা আইন চলে আসছে। নতুন এ নিয়মের কথা শুনিনি। কে করল এই নতুন নিয়ম? গত বছর পর্যন্ত চালু ছিল এই নিয়ম। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, আমিই করেছি এই নিয়ম। এখন থেকে এই নিয়মই চলবে।
জানতে চাইলাম আপনি কি এর অথরিটি? আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি দুর্বিনীত স্বরে বললেন, যান, কী করবেন করেন। গেলাম দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ফার্স্ট সেক্রেটারি কাউন্সিলর মহোদয়ার কাছে। বিষয়টি জানিয়ে আবেদনপত্রটি জমা দিলাম তার কাছে। বের হওয়ার সময় তিনি কাউন্সিলরের রুমে ঢুকলেন। রিপোর্ট করেছেনÑ আমি নাকি দুর্ব্যবহার করেছি। এ কথা পরে জেনেছি অপর এক নতুন কর্মকর্তার কাছ থেকে এর জের ধরে।
২০২১ সালে করোনার অজুহাত দেখিয়ে নানা দুর্লঙ্ঘ জটিলতার কথা বলে আমার সেই পাসপোর্ট আটকে রাখা হলো দীর্ঘ আট মাস। একটি নবায়নের পাসপোর্ট কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে তার সদুত্তর না পেয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারের আশ্রয় নিয়ে বাধ্য করা হলো- নতুন ভেরিফিকেশন ছাড়া করা যাবে না। নীলফামারী ডিবি অফিস থেকে পুলিশ আমাদের পৌরসভার সামনের দৃশ্যমান বাড়ির ঠিকানাটা তিনবার গিয়েও উদ্ধার করতে পারেনি। অগত্যা তিনটি পাসপোর্টের জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে যথারীতি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে।
ঢাকা থেকে যথারীতি সেই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে স্টকহোম দূতাবাসে। কিন্তু যথাসময়ে রিপোর্ট পাওয়ার পরও কাউন্সিলর মহোদয়া দূতাবাস থেকে গ্রিন সিগনাল দেননি পাসপোর্ট অফিসে। এ কথা জানতে পারলাম প্রায় আট মাসের মাথায় পাসপোর্ট অফিসের শীর্ষ পর্যায়ের এক পরিচিত কর্মকর্তার কাছ থেকে। আমি নিতান্তই এক নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ মানুষ। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে নিজের বা কোনো ক্ষমতাধরের পরিচয় দিয়ে সুবিধা গ্রহণ থেকে বহু দূরে থাকি। এটা আমার নীতি, স্বভাব ও রুচি বিরুদ্ধ। তাই এ কাজ আমার দ্বারা হয় না।
পাসপোর্ট কর্মকর্তা প্রবাসীদের প্রতি এই দুরাচার ও অনিয়মের বিষয়ে দূতাবাসে কথা বলতে চাইলে আমি তাকে নিষেধ করে নিজেই রাষ্ট্রদূত সাহেবের সঙ্গে কথা বলব বলে জানালাম। রহস্য ফাঁস হওয়ায় কাউন্সিলর মহোদয়াকে জানালাম, আপনি আমার সঙ্গে যে সীমাহীন অসদাচরণ করেছেন তাতে আপনার মতো ভরসাস্থলের জায়গা থেকে মানুষ বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভরসা সবই হারাবে।
তিনি কৃতকর্মের জন্য মুখ লুকোবার জায়গা না পেয়ে আমার প্রশ্নে নিরুত্তর থেকে শেষে বললেন, আপনি আগামীকাল এসে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে পারেন। তাই করলাম। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাষ্ট্রদূত আমাকে তার অফিসে ডেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। এমনটি আর ঘটবে না।
হয়রানির শেষ কোথায়
আমরা যারা দীর্ঘদিন প্রবাসের মাটিতে বসবাস করার পর নিজ থেকেই অধিকার ভুলে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেছি তাদের কেউ স্বেচ্ছায় নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ না করলে জন্মের অধিকার সূত্রে নিজ দেশের নাগরিকত্ব বহাল রাখতে পারব। অর্থাৎ একই সঙ্গে দুই দেশের বৈধ পাসপোর্ট ধারণ ও নাগরিকত্ব বহাল রাখতে পারব। সরকার আমাদের এই অধিকার ভোটের স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো সমান নাগরিক অধিকার ভোগেও স্বীকৃতি দিয়ে রেখেছে। এজন্য আলাদা কোনো সনদের প্রয়োজন নেই।
এ কথা বিভিন্ন সময় একাধিকবার দূতাবাসের কয়েকজন রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের মুখ থেকে শুনেছি। তারপরেও দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দূতাবাসে গিয়ে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। তার জন্য দুই দেশের পাসপোর্টের ফটোকপি, জন্ম সনদ, দুই কপি ছবি, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর ডকুমেন্ট ইত্যাদি সংযোজন করতে হবে। দেশে আবারও সেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি নেই। দূতাবাস কর্মকর্তা জানান, এটা দীর্ঘসূত্রতার প্রসেস। দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে।
তাই এই সনদের বিশেষ কোনো সুবিধা নেই বলে রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তা আমাকে বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত এবং এক থার্ড সেক্রেটারি আমাকে নিরুৎসাহিত করেন আবেদন করার সময়। বলেন, আপনার বাংলা পাসপোর্ট যদি নবায়ন করা থাকে তাহলে এটা দেখিয়ে সব ক্ষেত্রে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার ভোগের সুবিধা পেতে পারেন। খামাখা এটা করতে যাবেন কেন? আমি তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে বিরত থাকি।
কিন্তু বহু ভুক্তভোগী প্রবাসীর কাছ থেকে বিড়ম্বনা ও এর প্রয়োজনীয়তার কথা শুনে গত বছর দূতাবাসে আবেদনপত্রটি জমা দিয়ে দেশে যাই নভেম্বরে। ফার্স্ট সেক্রেটারি মহোদয়া জানান, দেশে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যদি তদবির করতে পারেন তাহলে কাজটা দ্রুত হবে। তাই করলাম। দেশে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উপ-সচিবের কাছে দূতাবাসের রেফারেন্স লেটার দেওয়ার পর জানালেন, আমাকে দেখতে হবে এটা কোন সেকশনে কী অবস্থায় আছে। আমি দেখব।
তবে আপনাকে আবার হয়ত নতুন করে কাগজপত্রগুলো পাঠাতে হবে। আমি তার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। বিনীতভাবে বললাম, একবার তো দিয়েছি। এই রেফারেন্স লেটারে কোনো কাজ হবে না? চিঠিতে ডিটেইলস তো উল্লেখ করা আছে। ম্যাডাম তার চিঠিতে তা বিশদভাবে উল্লেখ করে দিয়েছেন। আমার কথায় তিনি খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না। ফিরে এলাম। অপেক্ষায় আছি। কেবল তিন মাস অতিবাহিত হলো। এখনো দিল্লি দূর অস্ত ...
এবার ন্যাশনাল আইডি কার্ড করার প্রয়োজনে গেলাম গ্রীন রোডের নির্বাচন কমিশন অফিসে। প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। অধস্তন কর্মচারীর প্রশ্ন, কেন দেখা করবেন, কি কাজ? তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না। এখানে বসেন। বাইরে বেঞ্চে বসলাম। বুঝলাম সোজা মানুষের ভাত নেই এদেশে। ফাঁকা পেয়ে দরজায় নক করে ঢুকে পড়লাম কর্মকর্তার রুমে। তিনি কাজে ব্যস্ত। কিছু একটা লিখছেন। সালামের জবাবও দিলেন না। মাথা তুলেও তাকালেন না।
বসেই আছি। মাথা নিচু অবস্থায় জানতে চাইলেন, কি চাই? এমন কর্মকর্তার দেখা প্রায় সব সরকারি অফিসেই পাওয়া যায়। নিজের পরিচয় দিয়ে নিজ উদ্দেশ্যের কথা জানালাম। এখানে আসার আগে বহুজনের কাছে শুনেছিÑ প্রবাসীদের কোনো সমস্যা নেই। খুব সম্মানের সঙ্গে বেশ আগ্রহ নিয়ে সাহায্য করে তারা। কয়েকজন দেশবরেণ্য ব্যক্তিও আমাকে বলেছেন এ কথা। কোনো তদবির লাগবে না। খুব সহজেই তোমার কাজ করে দেবে। কোনো জটিলতা নেই।
কর্মকর্তার রুমে ঢুকে সেই গল্পের লেশ মাত্র খুঁজে পেলাম না তার আচরণে। মনে হলো তিনি বিরক্ত। কারণ কিÑ জানি না। মুখ তুলে চেয়ে প্রশ্ন করলেন, ডুয়াল সিটিজেনশিপ আছে? বললাম, নেই। ওটার নাকি প্রয়োজন নেই। খোদ দূতাবাস থেকেই রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন এ কথা। এ কথা শোনা মাত্রই তার কান ও মাথা যেন গরম হয়ে ওঠে। বললেন, কে বলেছে এসব? সব ফালতু কথা। আঞ্চলিক ভাষায় গড়গড়িয়ে বলতে লাগলেন, ঐ ব্যাডারা তো বিদেশ যায় ট্যুর করতে।
আরাম-আয়েশে বসে ধান্দাবাজি করতে আর সরকারের সম্পদ ধ্বংস করতে। প্রবাসীগো সেবা করতে যায় না। যত্তোসব! বিস্মিত হলাম সরকারের দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি অফিসের শীর্ষ পদে বসা কর্মকর্তার অভব্য আচরণ দেখে এবং মুখের অশিষ্ট ভাষা শুনে। আর কিছু না বলে তিনি আমার হাতে একটা ছোট্ট সিøপ ধরিয়ে দিয়ে বললেনÑ যান, এই কাগজপত্রগুলো যোগাড় করেন। সব রেডি কইরা আবেদন জমা দিবেন। তবে আগে ডুয়াল সিটিজেনশিপটা নিয়া আসেন, আমি কইরা দিব।
তার কথা শুনে আমি তো ভীষণ ধন্দের মধ্যে পড়ে গেলাম। সিøপটা পড়ে দেখি বাংলা ও বিদেশী পাসপোর্টের ফটোকপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি, বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার ও ট্যাক্স প্রদানের কপি, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধের কপি, জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, চরিত্র সনদ, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা, সম্পর্ক, কন্ট্যাক্ট নাম্বার, স্বাক্ষর ইত্যাদি ইত্যাদি। পড়ে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম! ৩৫ বছর দেশের বাইরে বাস করার পর এত কাগজ তথা ঝামেলাপত্র যোগাড় হবে কিভাবে?
উপরন্তু ডুয়াল সিটিজেনশিপের কাগজ। আর এর জন্যইবা অপেক্ষা করব ক’ বছর? মাথার ঘাম ছোটা শুরু হলো। প্রবল তৃষ্ণায় গ্রীন রোডের ফুটপাত থেকে একটা ডাব কিনে খেয়ে দুশ্চিন্তা বিসর্জন দিলাম। তবে ৩৫ বছর প্রবাসে যাপিত জীবনে বিড়ম্বনার এটুকু অভিজ্ঞতা- সাগরের বিন্দু জল মাত্র। আরও আছে বহু বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা। তবে তার সবটা লিখে শেষ করতে হয়ত লেগে যাবে আয়ুষ্কাল! তার দৈর্ঘ্যইবা কতদিন!
স্টকহোম, ৩০ মার্চ, ২০২৩
লেখক : সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক
[email protected]