ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের পেছনে জ্বালানি ভূরাজনীতির প্রভাব 

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২০ মার্চ ২০২৩

যুদ্ধের পেছনে জ্বালানি ভূরাজনীতির প্রভাব 

ইউক্রেনে-রাশিয়ার আগ্রাসন শুধু সে দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদহানি করছে না

ইউক্রেনে-রাশিয়ার আগ্রাসন শুধু সে দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদহানি করছে না, তা এখন পুরো বিশ্বকেই নানাভাবে প্রভাবিত করছে। বহু দেশে তেলসহ বহু ধরনের দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। বহু দেশে ব্যয় বেড়ে গেছে সামরিক খাতে। বহু ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য ও জননিরাপত্তায়। কী কারণে রাশিয়ার এই আগ্রাসন তা নিয়ে নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। ন্যাটোর ভূমিকা এবং বিশ্বে জ্বালানি নির্ভরতার ধরন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ সব ধরনের জ্বালানির দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। ধীরে ধীরে দাম কমতে শুরু করলেও দাম যুদ্ধের আগের  জায়গায় ফেরেনি।

তা ছাড়াও অনিশ্চয়তাকে কেন্দ্র করে জ্বালানির বাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাতে যে কোনো সময় দাম আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে। সাধারণত যে কোনো সংকট সামনে হাজির হলে আমরা পূর্ববর্তী সংকটগুলোর দিকে তাকাই। বোঝার চেষ্টা করি, এর আগের সংকটগুলো কেন হয়েছে এবং তা মোকাবিলায় কোন দেশ কী করেছে এবং সংকট থেকে কারা ক্ষতিগ্রস্ত আর কারা লাভবান হয়েছে। তারপর প্রশ্ন জাগে, আগের সংকটের সঙ্গে এখনকার সংকটের পার্থক্য কী।

আগের যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা সংকটকে বুঝতে কী দিকনির্দেশনা দেয়। আর তখন যুদ্ধের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে পেছনের ইতিহাস যেমন দেখা দরকার হয়, তেমনি দরকার হয় চলমান ঘটনার ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ। যেমনÑ ৭০ দশকের সংকটের সঙ্গে বর্তমান সংকটের ভিন্নতা এবং গত কয়েক দশকে বৈশ্বিক পরিবর্তন, রাশিয়া, ইউক্রেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জ্বালানি সম্পর্কের নানা দিক উন্মোচন করে ইউক্রেন আগ্রাসনের পেছনে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়।
কীভাবে বর্তমান সময়ে জ্বালানিকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাশিয়া এই আগ্রাসনে লিপ্ত হয়েছে এবং এক্ষেত্রে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা ছিল। ৭০ দশকে সারা বিশ্বই জ্বালানি তেলের ওপর ছিল বেশি নির্ভরশীল। গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভরতা তখনো ছিল; কিন্তু তেলের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি, বাংলাদেশে ৭০ দশকের শুরুতে তেল থেকেই অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো।

তেল সংকটের সময় জ্বালানি তেলের দাম বেশি থাকায় গড়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৭০-৮০ শতাংশ চলে যেত তেল আমদানি করে তা বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, শিল্প ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করতে। বেশিরভাগ তেল উৎপাদন হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। ১৯৭৩ সালে তেল সংকট শুরুর সময় পৃথিবীর মোট তেল উৎপাদনের ৪৯ শতাংশ হতো মধ্যপ্রাচ্যে। পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো যখন সামরিক অস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রকে নিরাপত্তা রক্ষার অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল তখন আরব দেশগুলোর জন্য জ্বালানি তেল ছিল সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে জ্বালানি তেলের রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার জন্য নিজ দেশে উৎপাদন কমিয়ে ৭০ দশকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিল। তখন হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিপাকে পড়লেও বর্ধিত দামে তেল বিক্রি করে তেল কোম্পানিগুলো সে সময় ব্যাপক মুনাফা করতে সক্ষম হয়। প্রায় ৫০ বছর পর ২০২২ সালের মার্চে এসে রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন রাশিয়া জ্বালানি তেলকে সামরিক অস্ত্রের বিকল্প একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে। এখনকার সঙ্গে সত্তরের দশকের পার্থক্য হলো এখন শুধু তেল নয়; গ্যাস, নিউক্লিয়ার ও কয়লার ওপরও নির্ভরতা বেড়েছে। এখন তেল রপ্তানিতে সৌদি আরবের পরই রাশিয়ার অবস্থান। 
২০০৯ সালের পর থেকে রাশিয়ার তেল উৎপাদনের পরিমাণ ১০ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে। শুধু তেল নয়, রাশিয়া গ্যাস ও কয়লা রপ্তানিতেও এগিয়ে গেছে। বিশ্বে বর্তমানে যেসব নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে বা নির্মাণাধীন বা পরিকল্পনার ধাপে রয়েছে তার ৬০ শতাংশ রাশিয়ার প্রযুক্তির। জ্বালানিকে ভূরাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের এই তরিকা রাশিয়া সুচিন্তিতভাবেই করে এসেছে এতদিন ধরে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং কোল্ড ওয়ার পরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে টিকে থাকার জন্য সারা বিশ্বে জ্বালানি বাণিজ্য বিস্তৃত করার মাধ্যমে একটি নির্ভরশীলতার সম্পর্ক রক্ষার কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

বিশেষ করে পুতিন ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার ঐতিহাসিক আধিপত্য পুনর্নির্মাণের জন্য জ্বালানি নির্ভরতার সম্পর্ক পুনর্নির্মাণই পুতিনের কৌশলে পরিণত হয়। তবে এই কৌশল সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দ্বারা পরিচালিত নয়, বরং পুঁজিবাদী বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য রক্ষাই এই কৌশলের উদ্দেশ্য। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস আমদানির ৪৫ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক-চতুর্থাংশের বেশি তেল আমদানি হয়েছে রাশিয়া থেকে।

এ ছাড়াও ইউরোপের কয়লার ৪৭ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। সারা পৃথিবীতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের ৩৫ শতাংশ রাশিয়া সরবরাহ করে থাকে। বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট প্রযুক্তি রাশিয়ার। কাজেই রাশিয়ার জ্বালানির আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ইউরোপের জন্য মোটেও সহজ নয়।

যে কোনো একটি উদ্ভূত সংকট পরিস্থিতিতে নতুন বিকল্প জ্বালানি দিয়ে ব্যবহৃত হয়ে আসা পুরনো জ্বালানি প্রতিস্থাপন কোনো স্বল্পমেয়াদি বিষয় নয়। ৭০-এর সংকটের সময় তা যেমন ছিল না, তেমন ২০২২-এর সংকটেও খুব দ্রুত কোনো সমাধান নেই, যা পুরো জ্বালানি সরবরাহের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।
যে কোনো প্রযুক্তি নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজন হয় সময়। এদিক থেকে ৭০ দশকের বিকল্প আর এখনকার বিকল্পের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো এখন কিছু কিছু বিকল্প যেমনÑ সৌরশক্তি অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে উৎপাদনে যেতে পারে। এলএনজি অবকাঠামো প্রস্তুত থাকলে এলএনজি দিয়ে প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব। বর্তমান এ সংকটের বেলায় এলএনজি আশানুরূপ দ্রুত গতিতে গ্যাসকে প্রতিস্থাপন করতে পারছে না।

বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার জ্বালানিকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করে বহুদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল। এর মধ্যে রয়েছে স্টোরেজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো, নতুন জ্বালানি যেমনÑ হাইড্রোজেন প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ।

অন্যদিকে, বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি ব্যবহার ব্যয়বহুল বলে এই দেশগুলো রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ও গ্যাস আমদানিও বন্ধ করতে পারেনি। বরং রাশিয়া থেকে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে প্রথম নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন চালুর পর দ্বিতীয় নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণেও সম্প্রতি বিনিয়োগ করেছে ইউরোপ। ৭০ দশকের জ্বালানি তেলকেন্দ্রিক নির্ভরতা আর এখনকার একাধিক জ্বালানি কেন্দ্রিক নির্ভরতা দুটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ৭০ দশকে তেল সংকটের পর যখন বিশ্ব বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়, তখন দেশগুলো প্রাপ্যতাভেদে নিউক্লিয়ার, গ্যাস ও কয়লার দিকে ঝুঁকতে থাকে। 
গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বব্যবস্থা এমনভাবে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে যে, জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ধরন পরিবর্তন হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রকম নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানোর চাপ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, নিউক্লিয়ার ক্লিন এনার্জি হিসেবে স্বীকৃত নয় বলে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বেশি বলে ইউরোপের অনেক দেশ ধীরে ধীরে নিউক্লিয়ারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

এদিকে রাশিয়া যখন একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক তৈরি করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রও বসে ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য সমালোচনা করে আসছিল। বিশেষ করে রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর শুধু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাই জারি করেনি, রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন যেন সম্পন্ন করা না যায়, সেজন্য পাইপলাইন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত একটি সুইস কোম্পানির অপরিহার্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এতে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল। অবশ্য পরে জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কের কারণে শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে সম্মত হয়। নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনটি নির্মাণ শেষ হলেও তা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় ছিল। ইউক্রেন আক্রমণের পর জার্মানি ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই এই পাইপলাইনটি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে জ্বালানি সংকট শুরুর কারণ নর্ড স্ট্রিম-২ বন্ধ করা নয়।

ইউক্রেন আক্রমণের পর নতুন করে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর তাড়না, শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধি, রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার কারণে নতুন করে সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়াÑসব মিলিয়ে জ্বালানির যুদ্ধবিষয়ক অনিশ্চয়তা থেকে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে সংকট হয়েছে ঘনীভূত।
একদিক থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যেমন রাশিয়াকে কোণঠাসা করেছে, তেমনি অন্য দেশগুলোও অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেমনÑ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা রাশিয়ায় রপ্তানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। যারা পণ্য সরবরাহ করেছিলেন তাদের অনেকের অর্থপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের কর্মীদের বেতন এবং সাপ্লাইয়ারদের দেনা পরিশোধের জন্য বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে।

এই বিকল্প পদ্ধতি কতদিন চালিয়ে নেওয়া যাবে। সে বিষয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসলে যুদ্ধ থামাতে কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে নানা জনের নানা বিশ্লেষণ রয়েছে। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকেই নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখাপেক্ষী হয়ে আসছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে যতটা বিপদে ফেলেছে, অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি বিপদে ফেলেছে অন্য দেশগুলোকে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ, যারা কেউই এই যুদ্ধের জন্য দায়ী নয়। এসব দিক বিবেচনা করলে ইউক্রেন আক্রমণকে কেন্দ্র করে ২০২২-২৩-এর সংকট বহুল বিস্তৃত, তীব্র এবং বহু পক্ষ-বিপক্ষ যুক্ত। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর এর পেছনের কারণ হিসেবে ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি যেভাবে আলোচিত হয়েছে, ততটা পরিষ্কারভাবে আলোচিত হয়নি জ্বালানির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতার বিষয়টি।

৭০ দশকের সঙ্গে বর্তমান সময়ের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, জ্বালানি নির্ভরতা, সংকটের ধরন, তীব্রতা ইত্যাদির পার্থক্য থাকলেও পরিবর্তিত বিশ্বে জ্বালানি নিরাপত্তা প্রশ্নটির পরিবর্তন হয়েছে মনে হলেও আসলে যে পরিবর্তন হয়নি, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর। উন্নত বিশ্ব যখন বারবার সংকটে পড়ে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে, তখন দরিদ্র দেশগুলো খেলার দর্শকে পরিণত হয়। আর এটাই বোধকরি বৈশ্বিক সংকটের বাস্তবতা।

লেখক : গবেষক, লন্ডন প্রবাসী

[email protected]

×