ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২

র‌্যাগিং ও গণরুম

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

র‌্যাগিং ও গণরুম

.

যে  কোনো শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন প্রভূত সম্ভাবনা নিয়ে ভর্তি হতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সত্যি বলতে কি লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা মেধার স্বাক্ষর রেখে সে অর্জন করে ভর্তি হওয়ার সক্ষমতা- যা তার বহুকাক্সিক্ষত স্বপ্ন। যোগ্য মেধাবীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো- বুয়েট, ঢাবি, ঢামেক অন্যান্য। কেননা, সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যয় অনেক কম। অবকাঠামোসহ শিক্ষক সমাজও পর্যাপ্ত। আবাসিক সুবিধাও মেলে স্বল্প ব্যয়ে। সেসব সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমনকি কল্পনাও করা যায় না। দুঃখজনক হলো, শুরুতেই সব শিক্ষার্থী না হোক কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী রীতিমতো হোঁচট খায় কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা। র‌্যাগিংয়ের নামে তাদের ওপর দিনের পর দিন চলে শারীরিক মানসিক নির্যাতন-নিপীড়ন। এর পাশাপাশি রয়েছে গণরুমের নামে অকহতব্য আচার-আচরণ, গালিগালাজ, নির্যাতন-নিপীড়ন। একসময়ে প্রধানত ছাত্রদের হলগুলোতে র‌্যাগিং গণরুমের অপসংস্কৃতির চর্চা দেখা গেলেও সাম্প্রতিক শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয় যে, আজকাল ছাত্রীরাও কম যায় না কোনো অংশে।

র‌্যাগিংয়ের সর্বশেষ একটি উদাহরণ মিলেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থী ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথমবর্ষের দুজন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে যৌনকর্মীর দেহ প্রদর্শনসহ খদ্দের খোঁজার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুজনের একজনকে আবার মেয়ে সেজে ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করতে বলা হয়। সেই সঙ্গে কুৎসিত নাচসহ খদ্দেরের সঙ্গে দরকষাকষি করতে। তা না হলে অসহায় শিক্ষার্থীদের সমূহ শারীরিক শাস্তি মানসিক নির্যাতনের ভয় ছিল। ঘটনার সত্যতা পেয়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, সম্প্রতি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত জনৈক ছাত্রীকে হলে অনুমতি ছাড়া রাতে অবস্থান করায় বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণসহ নির্যাতনের কাহিনী, যা নিয়ে মামলা হয়েছে ইতোমধ্যে। দুঃখজনক হলো বর্তমানে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বুয়েটে পর্যন্ত।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুমের অপসংস্কৃতি একটি বহুল আলোচিত বিষয়। শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলগুলোতে স্থান সংকুলানের সমস্যা থাকায় অধিকাংশ আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের একরুমে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হয় মেঝেতে। সেখানে লেখাপড়া শৌচাগারের দুরবস্থা সহজেই অনুমেয়। তদুপরি তাদের যখন-তখন এমন কি রাত-বিরাতে ডেকে পাঠানো হয় সিনিয়রদের হুকুম তামিল করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকলেও দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাস্তবতা হলো, র‌্যাগিং গণরুমের অপসংস্কৃতির নামে একজন নবীন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন শুরুতেই হোঁচট খায়। তার উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ স্বপ্নে চির ধরে। পড়ালেখা হয় বাধাগ্রস্ত। আরও যা দুঃখজনক তা হলো অধিকাংশ ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে এসেছে ক্ষমতাসীন সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের নাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক বারবার হুঁশিয়ার সাবধান বাণী উচ্চারণ করার পরও এসবের উৎপাত-উপদ্রব বন্ধ হয়নি। র‌্যাগিং গণরুমের অপসংস্কৃতি বন্ধে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা আশা করব- সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন র‌্যাগিং গণরুমের কালচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

×