ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টরন্টোর চিঠি

ভেবেছিনু মনে মনে দূূরে দূরে থাকি

শামীম আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভেবেছিনু মনে মনে দূূরে দূরে থাকি

তীব্র শীতের বাইরে টরন্টোবাসীর কোনো বিশেষ বিষয়ে এ সপ্তাহে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল এমনটা মনে হয়নি

তীব্র শীতের বাইরে টরন্টোবাসীর কোনো বিশেষ বিষয়ে এ সপ্তাহে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল এমনটা মনে হয়নি। গত সপ্তাহে এক পর্যায়ে শীতের তীব্রতা ছিল মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। ওইদিনই আমরা রাজ্যের বাজার করলাম। ‘ঈড়ংঃপড়’ গেলাম, সানি সুপার মার্কেটে গেলাম। গাড়ি থেকে বের হয়ে দু’মিনিট খোলা জায়গায় দাঁড়ালে দমবন্ধ হয়ে আসে, আবার বাজারঘাট গাড়িতে ঢুকিয়ে ভেতরে বসে হিটার চালিয়ে গাড়ি গরম হতে হতেও নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার দশা।

সুপারস্টোরগুলো মানুষকে ফতুর করার ব্যবসা-মডেল নিয়ে বাজারে নামে। কিনতে গেলাম হয়ত ৯ ডলারের ডিম, বাসায় ফিরে দেখি বাজার সদাই করা হয়েছে ২৮০ ডলারের। বিশেষত আমেরিকান চেইন সুপারস্টোর কস্টকোতে গেলে এই দশা নিশ্চিত। যেকোন পণ্য একাধিক অথবা বেশি ওজনের কিনতে হয় ওখানে। যেমন ধরুন, আপনি বাইরে একটা পাউরুটি কিনতে পারবেন ৪ ডলারে, এখানে ন্যূনতম ৩টা পাউরুটি কিনতে হবে। যদিও দাম হবে হয়ত ৬ ডলার। অথবা বাইরে যে জ্যুস ৩ ডলার, সেটা এখানে ১ ডলার। কিন্তু আপনাকে কিনতে হবে একসঙ্গে ১২টি।

এইসব লিখতে যেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে পড়ার সময়কার কথা মনে পড়ে যায়। যেহেতু ক্লাস ঠিকঠাক করতাম না, করলেও স্যাররা কী পড়াতেন বেশিরভাগ সময় বুঝতাম না, তাই বারবার বই পড়ে বুঝতে হতো। অর্থনীতিতে একটা ক্লাসিক উদাহরণ দেয়া হতো সিনেমা হলের পপকর্ন বিক্রি নিয়ে। (ক্ল্যাসিক বাংলা কী হবে) প্রতিষ্ঠিত? ইদানীং প্রায় খেয়াল করি, ভাবনার অনেক শব্দ ইংরেজি এবং সেগুলো সঠিকভাবে বাংলা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। কিন্তু রুঢ় বাস্তবতা।

তো আপনি সিনেমা দেখতে গেলে একটা ছোট্ট পপকর্ন কিনলে তার দাম পড়বে ৪ ডলার, মাঝারি কিনলে পড়বে ৫ ডলার, আর সবচেয়ে বড়টা কিনলে হয়ত পড়বে ৭ ডলার। বিক্রেতারা ক্রেতাকে প্রলুব্ধ করে মাত্র ১ ডলার বেশি দিয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি মাঝারি সাইজের পপকর্ন কেনা উচিৎ তার। আবার মাঝারিটা কিনতে গেলে বলবে আর ১ ডলার বেশি দিয়ে ১০০% বেশি পপকর্ন না কেনার কোনো কারণ নেই। এভাবেই ক্রেতারা প্রলুব্ধ হন, বিক্রেতারা জিতে যান। যদিও উক্ত ক্রেতার এত বড় পপকর্ন খাবার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। সাম্প্রতিক একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

বইমেলা নিয়ে আলাপ করছিলাম। বইমেলায় সব বইয়ের ওপর ২৫% ছাড় দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ছাড় বইমেলার পর খুচরা দোকানেও জারি থাকে। তো পাঠক-ক্রেতাদের এটা ভাবাই স্বাভাবিক যে, প্রকাশকরা অহেতুক এই ২৫% দাম বেশি রাখে। যে দামে সর্বজনীনভাবে ছাড় দেয়া যায়, সেটি শুরুতেই ধরার দরকার কী? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক ক্রেতারা জানালেন ডিসকাউন্ট বা ছাড় দেয়া হলে তারা বই কিনতে উৎসাহী হন। সেজন্যই প্রকাশকরা এই কাজটি করেন বলে তাদের ধারণা।

অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত তত্ত্ব সম্ভবত ‘মধসব ঃযবড়ৎু’। আমি কঠিন বিষয় সহজভাবে লিখতে চেষ্টা করি। চেষ্টা করি তত্ত্ব কথা কম বলে মানুষের বোঝার মতো ভাষা ব্যবহারের। এই গেম থিওরির একটা প্রায়োগিক তত্ত্ব আছে, যেটার নাম ‘ঞযব চৎরংড়হবৎ’ং উরষবসসধ’ বা বাংলায় বলা যায় ‘কয়েদির বিড়ম্বনা’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েট ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গুপ্তচর বিনিময়কালীন সময়ে এই তত্ত্ব নিয়ে কয়েকজন গণিতবিদ কাজ করেন।

মূলত তত্ত্বটির প্রায়োগিক দিক দেখান গণিতবিদ মেরিল ফ্লাড ও মেলভিন ড্রেসার। কিন্তু অর্থনীতিবিদ আলভিন টাকার এ নিয়ে আরও কাজ করেন ও তত্ত্বটির নামকরণ করেন। যাই হোক, সহজভাবে বিষয়টা একটু আলোচনা করি। ধরুন, গভীর রাতে একটি দোকানে চুরির জন্য পুলিশ এলাকার দুই চেনা চোরকে ধরে থানায় নিয়ে আসল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। কেউ তাদের চুরি করতে দেখেনি, আঙুলের ছাপ নেই, ভিডিও ফুটেজও নেই। তখন পুলিশ মূলত যা করার চেষ্টা করে, সেটি হচ্ছে একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে সাক্ষী দেয়ানোর চেষ্টা।

আপনারা হলিউডের ছবিগুলোতে এমন দৃশ্য দেখতে থাকবেন। দুজন ব্যক্তিকে দুই রুমে আটকে রেখে পুলিশ বলছে যে, অন্যজন সব স্বীকার করেছে। এখন সে যদি স্বীকার না করে তবে সব জেল- জরিমানা তার একারই হবে। আসলে পুলিশ যা করছে তা হচ্ছে বন্দির মনস্তত্ব নিয়ে খেলছে। ধরা যাক, সন্দেহভাজন দুজনের নাম অপু ও তপু।

অপু ও তপু যদি পুলিশের কাছে কিছু স্বীকার না করে এবং সম্পূর্ণ নীরবতা পালন করে, তাহলে পুলিশ হয় উভয়কেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে অথবা ‘circumstantial evidence’ এর ভিত্তিতে আদালত তাদের সর্বোচ্চ ৬ মাস করে জেল দিতে পারবে (কথার কথা)। circumstantial evidence এর ভাল বাংলা কি হবে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। কিন্তু মূল বিষয় হলো সরাসরি প্রমাণ নেই, অবস্থানগত প্রমাণ।

কিন্তু অপু ও তপুকে প্রলুব্ধ করে পুলিশ যদি এদের যেকোন একজনকে দিয়ে বলাতে পারে যে, তারা এই কাজটি করেছে, তাহলে যে স্বীকার করল, ধরা যাক অপু, তার কোনো শাস্তি হবে না। কিন্তু তপুর জেল হবে ৪ বছর। একই কথা খাটে যদি তপু স্বীকার করে কিন্তু অপু স্বীকার না করে। আবার তারা উভয়েই যদি অপরাধ স্বীকার করে, তাহলে উভয়েরই ২ বছর করে জেল হবে, একেকজনের ৪ বছরের পরিবর্তে।

এখন এমন পরিস্থিতিতে তাদের যেহেতু একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথা বলার সুযোগ নেই, তাই উভয়কেই পুলিশ বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, অপর পক্ষ সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছে এবং সে যদি স্বীকার না করে তার একারই ৪ বছরের শাস্তি হবে। এখন এই ক্ষেত্রে বন্দি বা আসামি কী করবে? অপু চিন্তা করবে আমি যতই চুপ থাকি, তপু নিশ্চয় বলে ফেলেছে। এখন আমি চুপ করে থাকলে তপু ঠিকই ছাড়া পাবে আর আমি ৪ বছরের জেল খাটব।

অন্যদিকে আসলে তপু যদি কিছু না বলে আর আমি একাই দোষ স্বীকার করি, তাহলে আমি বিনা শাস্তিতে ছাড়া পেয়ে যাব। আর যদি আমরা দুজনেই স্বীকার করি, তাহলে উভয়েই খাটব ২ বছরের শাস্তি। এমন মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনে বেশিরভাগ সময়ে উভয় বন্দিই দোষ স্বীকার করে। তারা ভাবে, তারা ৪ বছরের শাস্তি ২ বছর খেটে বের হবে। ফলে, তাদেরই লাভ হলো। অন্যদিকে পুলিশ জানে তাদের কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছিল না, এরা আসলে বিনা শাস্তিতে অথবা সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল খেটে বের হয়ে যেত, এখন তারা ২ বছরের শাস্তি পাচ্ছে।

পুরো তত্ত্বের মূল বিষয় হচ্ছে, একাট্টা থাকলে কমের ওপর পার পাওয়া যায়। কিন্তু শত্রুপক্ষ সবসময় চাইবে আপনি একাট্টা না থাকতে পারেন। কারণ, তাতে ওদেরই লাভ। এখন এই লেখায় আমি অপরাধীকে একাট্টা থাকতে বলছি না। কিন্তু দাম নিয়ে বাজার ব্যবস্থা কিভাবে ক্রেতাকে প্রভাবিত করে অতিরিক্ত খরচ করতে, সেটা সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এখন কস্টকো চায় আমি ৩টা পাউরুটি কিনি, তাতে ওদের লাভ।

কারণ, তাদের উৎপাদন খরচ খুবই নগণ্য, তারা যত বেশি বিক্রি করতে পারবে, ওদের তত লাভ। আবার আমি ভাবছি মাত্র ২ ডলার বেশি দিয়ে আমি দুুটো অতিরিক্ত পাউরুটি কেন নেব না? কিন্তু আদতে ওই পাউরুটি আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়, ৪-৫ দিন পরে ফেলেই দিতে হচ্ছে। বইমেলার ক্ষেত্রে পাঠক আর ক্রেতা ভাবছে, তার অনেক লাভ হলো। সে ২৫% ছাড়ে বই পেল কিন্তু আদতে প্রকাশক ক্রেতার মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলছে। প্রকাশের সময়ই বইয়ের দাম ২৫% বেশি ধরে। একই জিনিস হয় ঈদ বা পূজার সময়। পোশাকের দাম যা তার ওপর অতিরিক্ত ৫০% মূল্যযোগ করে ক্রেতাকে দেখানো হয় ৩০% বিশেষ ছাড়।

পৌরবিজ্ঞানের শিক্ষক কিংবা নৈতিকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন পুরো বিষয়টিকে বলবেন শঠতা। আবার অর্থনীতিবিদ বা ফাইন্যান্সের শিক্ষকরা একে বলবেন ব্যবসায়িক চাল কিংবা মধসব ঃযবড়ৎু। অর্থনীতি খুবই মজার ও বাস্তবিক একটি বিষয়। কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞরা তাদের কাজের ক্ষেত্র বা বিষয়কে অহেতুক জটিল করে রাখেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য। সাবেক সচিব আকবর আলি খান সেই প্রথা ভাঙতে চেয়েছিলেন। তিনি সহজ ভাষায় মানুষকে অর্থনীতির অলিগলি জানাতেন।

গত কিছুদিন কানাডায় আরেকটি আলোচ্য বিষয় ছিল চায়নার তৈরি ‘ঝঢ়ু ইধষষড়ড়হ’। যদিও আমেরিকা এটিকে স্পাই বেলুন বলেছে। চায়না এটিকে বলেছে ‘Weather Balloon’। আসলে কোনটি যে সত্য সেটি বলা দুরূহ। এই বেলুন চায়না থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে আমেরিকার আলাস্কা পেরিয়ে কানাডার ওপর দিয়ে আমেরিকার নানা শহরে দৃশ্যমান হয়। এই বেলুন নিঃসন্দেহে শুধু সাধারণ মানুষকেই নয়, শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাকেও বিস্মিত করেছে।

তারা অবাক হয়েছে এত বিশালাকার বেলুন, যাতে স্যাটেলাইট সংযুক্ত তা আকাশে প্রায় ৬০ হাজার ফিট উচ্চতায় কিভাবে এলো? উল্লেখ্য, যাত্রী বহনকারী বিশালাকৃতির বিমানগুলো সাধারণত ৩৬ হাজার ফিট ওপর দিয়ে উড়ে থাকে। প্রথম কয়েকদিন আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা পুরোই বিভ্রান্ত ছিল, তা তাদের বক্তব্য থেকেই বোঝা গেছে। গত বুধবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বেলুনটিকে ভূপাতিত করতে বললে আমেরিকান সেনাপ্রধান তাতে দ্বিমত প্রকাশ করেন এই বলে যে, এটি ভূপাতিত হলে জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে এবং এতে কী উপাদান আছে তা নিয়ে তারা সম্যক ধারণা রাখেন না।

পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, বেলুনটি আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে এলে যুদ্ধবিমান থেকে মিসাইল ছুড়ে এটি পানিতে ফেলা হবে। যদিও নাসা ও আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশ্যে বলেছে, এই বেলুনে তেমন ক্ষতিকারক কিছু নেই। তবে কেনো তারা এটি ধ্বংস করতে এমন বিপুল অর্থ খরচ করে বিশাল আয়োজন করল, সে প্রশ্ন থাকছে জনমনে। এটি সবাই জানেন যে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সামরিক শক্তির তিনটি দেশ আমেরিকা, রাশিয়া ও চায়না ইতোমধ্যেই অসংখ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে একে অপরের ওপর চোখ রাখছে।

তাই নতুন করে বেলুন উড়িয়ে চায়নাকে আমেরিকার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে হবে, এটা কেউই বিশ্বাস করেন না। আমেরিকার কিছু যুদ্ধবিশেষজ্ঞ বলছেন, মন্টানার কাছে আমেরিকার যে পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের বিশাল সম্ভার রয়েছে, সেটি পর্যবেক্ষণেই এই বেলুন পাঠানো হয়েছে। আবার অনেকে বলছেন, চায়না মূলত তাদের সামরিক পারদর্শিতার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এই বেলুন আমেরিকার আকাশে পাঠিয়েছে। তবে সমর বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করছেন চায়নার এই বেলুন পাঠানোর পেছনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের হাত আছে।

যদিও ইউরোপে চলমান বর্তমান যুদ্ধকে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ বলে চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু এটি এখন পরিষ্কার যে, এই যুদ্ধে ন্যাটোর সব রাষ্ট্রই যুক্ত এবং রাশিয়া মূলত ত্রিশটিরও অধিক দেশের বিপক্ষে ইউক্রেনের মাটিতে যুদ্ধ করছে। শুরুর দিকে চায়না কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেও এখন এটি পরিষ্কার যে, যুদ্ধ যদি আরও খারাপ দিকে মোড় নেয়, তবে চায়না রাশিয়ার পক্ষে শক্ত অবস্থান নেবে। তাইওয়ান নিয়ে চায়না ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে টানাপোড়েন, তাও এখন পরিষ্কার আকার ধারণ করেছে।

সাউথ চায়না সাগরে আমেরিকার অবস্থা যে চায়না মেনে নেবে না, তাও তারা পরিষ্কার করেছে। এদিকে নাসা বলেছে, তারা ল্যাটিন আমেরিকায় আরেকটি গোয়েন্দা বেলুনের অবস্থান নির্ণয় করতে পেরেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে হয়ত এই বিষয়ে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, পৃথিবী ভাল নেই। যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে সর্বদিকে। অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে। কিন্তু তার একটি প্রকট প্রভাব এখনও দেখা যায়নি বিশ্বব্যাপী। তাই অর্থনীতিবিদরা শঙ্কিত হয়ে আশঙ্কা করছেন কখন সেই মুহূর্তটি আসে। 
এতকিছুর পরও জীবন থেমে থাকে না। গত সপ্তাহে জেমস ক্যামেরনের এভাটার চলচ্চিত্রটি দেখলাম। বিশ্বজুড়ে এভাটার আর শাহরুখ খানের পাঠান চলচ্চিত্র নিয়ে হৈচৈ চলছে। পাঠান এখনও দেখিনি, দেখার ইচ্ছা আছে। চলচ্চিত্র থেকে এখন খাওয়া দাওয়া। ফেসবুকে আমার খুব প্রিয় একটা গ্রুপ আছে, নাম ‘ঈড়ড়শ ণড়ঁৎ ড়হি ভড়ড়ফ’। ব্যাংকার ফখরুল আবেদিন মিলন ভাই এই গ্রুপটি খুলেছেন। উনি বেশ কিছু জনপ্রিয় বইও লিখেছেন। মিলন ভাই আমার প্রিয় মানুষ তার পজিটিভিটির জন্য।

উনি আশার আলো ছড়ান, ভালোবাসা ছড়ান। একসময় প্রতিদিন ফেসবুকে মানুষকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা করে বিশাল ও মজার পোস্ট দিতেন, যা খুব জনপ্রিয়তা প্রায়। ওই নিয়ে তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়। এরপর তার ছাদ বাগানে শাকসবজির চাষ অনেক মানুষকে উজ্জীবিত করে। তারপর তিনি রান্না করে সেই ছবি দেয়া শুরু করেন। চমৎকার উপস্থাপনা ও পরিবেশনার কারণে তা মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। এরপর বছর তিনেক আগে সম্ভবত রান্নার এই গ্রুপটা খোলেন।

এখানে  বেশি সদস্য আছেন, তা নয়। কিন্তু সবাই সবার পরিচিত। সবাই রান্না করে ছবি দেন, রেসিপি দেন। একজন আরেকজনের রান্নার প্রশংসা করেন। অনেকে এখানে নতুন বন্ধুও খুঁজে পেয়েছেন। গ্রুপের সদস্যরা এই তো কিছুদিন আগে গুলশানে একত্রিত হয়েছিলেন নিজেদের রান্না করা খাবার নিয়ে। মূলত মিলন ভাই সবাইকে আটার রুটি আর হাঁসের মাংস খাবার দাওয়াত দিয়েছিলেন শীত উপলক্ষে। শ’ খানেকের বেশি সদস্য উপস্থিত হয়েছেন, একসঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করেছেন।

এমন পজিটিভ চিন্তার মানুষ আমার খুব ভাল লাগে। মিলন ভাইকে ধন্যবাদ, এভাবে সবার মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখার জন্য। এই আয়োজনের একটি ছবিও শেয়ার করছি জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য। যদিও আমি থাকতে পারিনি। কিন্তু সবার আনন্দ, উল্লাস ভালো লেগেছে। মানুষের জীবনকে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারেন এমন গুণীজনদের পরিচয় করানোও আমাদের একটা সামাজিক দায়িত্ব। নিজে যেতে পারিনি বটে, কিন্তু অন্যের আনন্দে যদি উৎফুল্লই না হলাম, তাহলে আর আমাদের মানবজন্ম সার্থক হবে কোথা থেকে? খুব সুন্দর ও নিরাপদে কাটুক আপনার সামনের সাতদিন। 

টরন্টো, কানাডা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

[email protected]

×