ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন

সম্পাদকীয়

বর্তমানে দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ বলবত রয়েছে। তবে আইনটি সংশোধনের দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সোচ্চার রয়েছে দীর্ঘদিন। সরকারও এই আইন সংশোধনে উদ্যোগী হয়েছে। এই লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সম্পর্কিত আইন পর্যালোচনা করবে। কিভাবে বিভিন্ন দেশ এই আইন প্রয়োগ করে, তাদের আইনের সঙ্গে আমাদের আইনের কি পার্থক্য। এই আইনে কোথাও কোনো প্রকার অসঙ্গতি আছে কি না তারা তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখবে, এগুলো যাচাই-বাছাই করে ঢাকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বসে আলোচনা সাপেক্ষে একটি রূপরেখা তৈরি করে তা সুপারিশ আকারে প্রদান করবে সরকারের কাছে। যা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সরকার।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আইনটির সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হলো ৫৭ ধারা। এই ধারায় বলা আছে, ‘এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কার্যের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, তজ্জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ আইনের এই ধারার ক্ষমতাবলে কোনো ব্যক্তি অপরাধ না করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে নেওয়া যায় না কোনো ব্যবস্থা।

এর অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দাবি করে আসছে। বিতর্কিত এই ধারা বাতিলের জোর দাবিও উঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে বিধি দ্বারা সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করা গেলে এটি আর সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। মানবাধিকার কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে এই আইনে ৭৯টি মামলা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে ১৭১ জন। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে ৪৬ জন।

এর আগে ২০১৮ সালে ৩৪টি, ২০১৯ সালে ৬৩টি, ২০২০ সালে ১৯৭টি ও ২০২১ সালে ২৩৮টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা  আইনে।  সবমিলিয়ে এই আইনে বিগত চার বছরে মামলা হয়েছে ৬১১টি।  বিভিন্ন মামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ সাংবাদিককে জেলে যেতে হয়েছে।  
সুশাসন ও সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় আইনের অনুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সকল নাগরিক সমানভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। তাছাড়াও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আইন অমান্য করে অন্যের অধিকারের হস্তক্ষেপ করার সাহসও সচরাচর কেউ পায় না।

সাইবার অপরাধীদের গুজব, অসামাজিক কার্যকলাপ, মিথ্যা তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার রোধে বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তার এই আইনকে সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে দেশে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণ ও আইনের অপব্যবহার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

×