ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাষার মাসে বইমেলা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

ভাষার মাসে বইমেলা

মাতৃভাষার অস্তিত্ব সংকটের লড়াইয়ে যে মাসটি সবাইকে সমৃদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে

মাতৃভাষার অস্তিত্ব সংকটের লড়াইয়ে যে মাসটি সবাইকে সমৃদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে, সেই ফেব্রুয়ারির ঐতিহ্যিক আবেদন আজও চির অম্লান। ভাষার জন্য যারা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করতে সম্মুখ সমরে নেমেছিলেন, তাদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধায় অর্ঘ্য নিবেদন করা জাতীয় দায়বদ্ধতা। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই মনে পড়ে যায় ভাষা শহীদদের অবদানের নানা স্মৃতি। মুখের ভাষাকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে আগে কোনো জাতি রক্তক্ষয়ী অভিযানে নেমেছিল কিনা জানা নেই।

ত্যাগ, তিতিক্ষা, স্বজাত্যবোধ, দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের যে যাত্রা, সেখানে বিরতিহীনভাবে বাঙালির যে দুর্ভেদ্য আন্দোলন-সংগ্রাম তাও ঐতিহাসিক পরম্পরা। রক্তঝরা রঞ্জিত পথ কালক্রমে অর্জনের যে দুরন্ত সিঁড়ি পাড়ি দিল, সেটাও আবহমান বাংলা ও বাঙালির পরম প্রাপ্তি। আবার এই ভাষার মাসেই শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রাসঙ্গিক আয়োজন ও আড়ম্বর। সমস্যাসংকুল এই যাত্রা পথ কখনো নির্বিঘœ, নিষ্কণ্টক ছিল না। মাতৃভাষাকে হরেক কোপানলের আবর্তে ফেলে সমৃদ্ধ চেতনাকে ক্ষতবিক্ষত করার অপপ্রয়াস চলতে থাকাও এক অসহনীয় দুর্ভোগ।

মুখের ভাষা যে কোনো জাতির নিজস্ব বৈভব, প্রতিদিনের জীবনাচরণের চিরায়ত বোধ যা সতত পরিচর্যার মধ্যে একটি জাতিকে নিরন্তর এগিয়ে নেওয়ারও অনবদ্য প্রেরণা। বীর বাঙালি প্রতিনিয়ত অনুভবে, অনুধ্যানে ঐশ্বর্যিক সম্ভারের ওপর কোনো আঁচড় থেকে সযত্নে সুরক্ষা দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি। আবহমান বাংলার শাশ্বত সম্পদ তার গৌরবান্বিত মাতৃভাষা। যুগ থেকে যুগান্তরের নানা মাত্রিক সাংস্কৃতিক চেতনায় যে ভাষা আপন সম্ভারে জনগোষ্ঠীর জীবন ও মননে চিরস্থায়ীভাবে আসন গাড়ে।
বাংলাভাষা প্রসঙ্গে নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরতে প্রথমেই দৃষ্টি পড়ে যায় ’৪৭ এর সেই অনাকাক্সিক্ষত দেশ বিভাজন। যা বাঙালির জন্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনই ছিল না।

সেটা প্রমাণ হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। তার আগে উল্লেখ করা একান্ত আবশ্যক এক সময়ের সম্পদশালী বাংলা ভারত উপমহাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও দিল্লির রাজন্যবর্গের শাসন থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকাও এক অনন্য কালপর্ব। বৈষয়িক সম্পদ আর অফুরান প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে চিরায়ত বাংলা ছিল অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। তাছাড়া স্বাধীন সত্তায় নিজেদের বাঁচিয়ে রাখারও এক অদম্য যাত্রাপথ। ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে দিল্লির শাসকরাও ঐশ্বর্যিক বাংলা নিয়ে সেভাবে মাথা ঘামায়নি। নির্দিষ্ট খাজনার বিনিময়ে বাংলা তার আপন বেড়াজালে নিঃসংশয় আর নির্বিঘœ ছিল বলে জানা যায়।

আর তেমন বাতাবরণে বাংলা যখন আপন ঐশ্বর্যে মহীয়ান, সেখানে তার কর্তৃত্ব অনুপমই নয় এক অজেয়, অপ্রতিহত শক্তিময়তায় অভিষিক্তও। এমন সব তথ্য উঠে আসে বিজ্ঞ ঐতিহাসিক ও সমাজবিদদের অভিব্যক্তিতে। আর অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ চিরায়ত বাংলার যে অনন্য শৌর্য, তাও এই অঞ্চলের অভাবনীয় মিলনসৌধ। ১৯০৫ সালের বঙ্গব্যবচ্ছেদ আর ১৯৪৭ সালের অযাচিত দেশবিভাগ বাঙালির মনন ও সৃজন চেতনায় যে অনাকাক্সিক্ষত আঘাত হানে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া আজও চলছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক সমৃদ্ধ জাতিকে যে মাত্রায় ধর্মীয় ভেদবুদ্ধির কোপানলে আবর্তিত করা হলো, সেটাও আবহমান বাংলা ও বাঙালিকে চরমভাবে নিগৃহীত করতে থাকে।

তারই চূড়ান্ত আঘাতে ’৪৭ এর দেশ বিভাগ এবং পরবর্তী বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ চেতনায় যে লাগাতার দুর্ভোগ তা সামলাতেও নিবেদিত বাঙালিকে মরণপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। কট্টর এক অবরুদ্ধ শৃঙ্খলে লড়াই-সংগ্রাম করে সেখান থেকে বের হয়ে আসাও সময়ের চাহিদা ছিল। উন্মত্ত প্রতিরোধে রাজপথ রঞ্জিত করতেও বাঙালি পেছন ফিরে তাকায়নি। জিন্নাহ যখন ১৯৪৮ সালে উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন- সেখানে সবার আগে সরব প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপস্থিত সেই সমাবেশে জাতির জনক তাঁর স্বভাবসুলভ তর্জনী উঁচিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানান- না, বাংলাও হবে পাকিস্তানের আরও একটি রাষ্ট্রভাষা।

জনসংখ্যার দিক দিয়ে উর্দুভাষী পাকিস্তানের চেয়েও বাঙালিরা এগিয়ে ছিল। বহু ভাষাবিদ প-িত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও দাবি তুলেন বাঙালির সংখ্যা বেশি হওয়ায় সরকারি ভাষা অবশ্যই বাংলা হবে। আর উর্দুকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে রাখাটাও যৌক্তিক। আর এক বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বললেন, পৃথিবীতে বহু দেশে দুটো রাষ্ট্র ভাষার প্রচলন আছে। এভাবে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিস্তর ওজর আপত্তির মধ্যে জিন্নাহ উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
সুতরাং ভাষার প্রশ্নে বাঙালির লড়াই সংগ্রাম সেই ’৪৭ এর দেশ বিভাজনের কিছু পরেই। বঙ্গবন্ধু শুধু যে জিন্নাহর মুখের ওপর প্রতিবাদের ঝড় তুলেন তা নয়, বরং ভাষার জন্যও প্রথম কারাবরণ করলেন এই জাতির জনকই। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্থপতির মর্যাদা পাওয়ার আগে ভাষা সৈনিকের সম্মানে অভিষিক্ত হওয়াও যেন ঐতিহাসিক পরম্পরা। কেননা, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন যেন অবিচ্ছিন্ন সুতায় এক সঙ্গে গাঁথা।

জাতির জনক তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে ভাষা আন্দোলনের বাস্তব প্রেক্ষাপট আর তাঁর লড়াকু অভিগমনও পাঠকদের সামনে বিধৃত করেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেই তখন ফরিদপুর জেলায় দায়িত্ব পালনের জন্য সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে ভোর থেকে শত শত ছাত্র কর্মী রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পিকেটিং শুরু করে। সমান তালে চলে ছাত্রদের ওপর পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণ। সেই শুরু ভাষার জন্য লড়াই করা বাঙালিদের এক রক্তে রাঙানো পথযাত্রা। সে সময়ই বঙ্গবন্ধুসহ আরও অনেকে ভাষার জন্য আন্দোলনে কারা অন্তরীণে চলেও গেলেন। শুধু কি তাই? বিভিন্ন দাবি দাওয়াকে সমুন্নত করে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে জেল হাজতেই অনশনব্রত পালন করে মুখে খাবারই তুলেন না বঙ্গবন্ধু।
এই ফেব্রুয়ারি শুধু যে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যিক মাস তা কিন্তু নয়। বরং একুশে গ্রন্থমেলা শুরু করার এক অনন্য সম্ভারও। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলার ইতিহাসে এক রক্তে রাঙানো লোহিত সাগর। সরকারের হঠকারিতা এবং অপরিণামদর্শিতায় কিভাবে ঢাকার রাজপথে রক্তের গঙ্গা বয়ে গেল তা বেদনাহত এক দুঃসময়। বিশ্ব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলার দামাল ছেলেরা ভাষার জন্য রাজপথ রঞ্জিত করে দিলেন। তাজা রক্তে ভিজানো রাজপথে সালাম, বরকত, জব্বারের নিথর দেহ লুটিয়ে পড়াও ২১ ফেব্রুয়ারির জীবন বাজি রাখার উৎসর্গকৃত দিবসই বটে।

তেমন মহিমান্বিত দিনকে স্মরণ করেই ‘একুশে গ্রন্থমেলা’র শুভযাত্রা এবং আজ অবধি এগিয়ে চলা। এই বইমেলা সেও এক ঐতিহাসিক পালাক্রম। যার যাত্রাপথ কখনোই সহজ এবং স্বাভাবিক ছিলই না। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি জাতির স্থপতি যখন কতিপয় বিভ্রান্ত সেনাকর্মীদের হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন হন, সে দেশের ইতিহাস যেমন নির্মম, তেমনি ঐতিহ্যিক চেতনা থেকেও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হওয়ার দশা। সঙ্গত কারণে অপ্রত্যাশিত ’৭৫ এর পটপরিবর্তন পুরো দেশকে যে মাত্রায় দিশেহারা ও বিপর্যস্ত করে দেয়, সেখানে ঐতিহাসিক সম্ভারও জনবিচ্ছিন্ন হতে সময় নেয় না।

বাংলাদেশও তেমন দুর্যোগের ঘনঘটায় তার নিজস্ব ঐতিহ্যিক বলয় থেকে কেমন যেন ছিটকেও পড়ে। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একুশের গ্রন্থমেলার সময়ক্ষেপণ হলেও স্বাধীনতার পরপরই ছোট পরিসরে বইমেলার গোড়াপত্তন এক অভাবনীয় উদ্যোগ। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধমান হাউসের প্রাঙ্গণেই বইমেলার উদ্বোধন করেন। সঙ্গত কারণে বইমেলার এই ঐতিহাসিক মোড়ক উন্মোচনের সঙ্গে চিত্তরঞ্জন সাহার নাম চিরস্থায়ীভাবে লেখা হয়ে থাকল। ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে আনা ৩২টি গ্রন্থ দিয়ে সূচনা করা এই বইমেলার চত্বর সাজানো হয়।

আরও একটি চমকপ্রদ বিষয়ও এই বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ, ৩২টি বইয়ের লেখকই তৎকালীন বাংলাদেশী শরণার্থীরা। চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ (এখন মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে এই ৩২টি গ্রন্থ প্রকাশ হওয়াও চিত্তরঞ্জন বাবুর কীর্তিময় এক কর্মদ্যোতনা। বইগুলোও স্বাধীন বাংলার প্রকাশনা সংস্থার প্রথম অবদানও বটে। উদ্যোক্তা চিত্তরঞ্জন বাবু পরবর্তী ৪ বছর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বইমেলার ক্ষুদ্র কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যান। তবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করলেন, তাদের স্মরণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় পরে।

তবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ এর পথ পরিক্রমায় বহু পালাবদল ঘটে গেলে বইমেলার ক্ষুদ্র আয়োজন ক্রমান্বয়ে স্তিমিতও হয়ে আসে। ১৯৭৬ সালেই অনেক বিজ্ঞজনের নজরে পড়ে যায় এই ক্ষুদ্র পরিসরে আয়োজন করা একুশে বইমেলা। বৃহৎ পরিসরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করতে আরও কিছু বছর পার হয়ে যায়। ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মনজুুরে মওলার সযতœ তত্ত্বাবধানে প্রথমবারের মতো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র শুভযাত্রা জাতির জন্য এক গৌরবময় আখ্যান। তবে সময়টা ছিল এরশাদের দমন-পীড়নের দুঃসময়ের এক বৈরী আবহাওয়া।

ফলে, শুরুতেই পরিবেশ পরিস্থিতির বিপরীতে চলে গেলেও ১৯৮৪ সাল থেকে সাড়ম্বরে এই বইমেলা প্রাঙ্গণ লেখক-পাঠকদের মিলন চত্বরে পরিণত হতে থাকে। সম্প্রসারিত এই বইমেলা ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি চত্বর পাড়ি দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বৃহৎ আঙিনাতেও সম্পৃক্ত করা হয়। প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট লেখকদের জন্য বিভিন্ন স্টল বরাদ্দ দেওয়ার মতো সুশৃঙ্খল কর্মযোগ, মেলা চত্বরকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সচেতন দায়বদ্ধতা। বর্তমানে অমর একুশে গ্রন্থমেলা তার বহুবিধ কর্মযোগে নিত্যনতুন বিষয় উপস্থাপন করে চত্বরের শোভাবর্ধন করছে।

প্রকাশক, লেখক ও পাঠকের মিলনযজ্ঞে পুরো পরিবেশ যে মাত্রায় দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তাও এক অনন্য যোগসাজশ। আর পুরো আয়োজনটি বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ‘বই হোক নিত্যসঙ্গী’ এমন চিরায়ত বার্তায় মেলা প্রাঙ্গণ যে মাত্রায় উদ্বেলিত আর উৎসব আয়োজনে মুখরিত হয়, তাও দেশের জন্য ঐতিহ্যিক ঘটনাক্রম।
বইমেলার আরও একটি বড় আয়োজন পথিকৃৎ ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা। নতুন বই শুধু যে মেলার শোভাবর্ধন করে তা নয় বরং পাঠক সৃষ্টিতেও রাখে অনন্য ভূমিকা।

সর্বজনের মিলনসৌধে বইমেলার যে অসাধারণ মাহাত্ম্য, জাতি গঠনে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব সঙ্গত ও যৌক্তিক। বই আনন্দ দেওয়া এবং পড়ার জন্য। পাঠ্যাভ্যাস গড়ে না উঠলে জ্ঞানের পরিধি বিকাশ হয় না। নতুন সময়ের সঙ্গে সহজে নিজেকে মানিয়ে নেয়া যায় না। সর্বোপরি নিজেকে সুসংবদ্ধভাবে জ্ঞানের জগতে নিবেদন করতেও হিমশিম খেতে হয়। এই ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা ও লেখক তাদের বরাদ্দকৃত স্টলে গ্রন্থসম্ভার নিয়ে পাঠক ও দর্শনার্থীর মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত থাকে। পুরো মেলা প্রাঙ্গণে উপচেপড়া ভিড়ে যে অনিন্দ্যসুন্দর মিলন চত্বরে আবর্তিত, তেমন সৌন্দর্য সশরীরে উপস্থিত থেকেই উপভোগ করা যায়।

এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত থেকেই ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩’ উদ্বোধন করবেন। ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকৌশলী লেখক অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশেই। অভিজিৎ রায় মারা যান। তার স্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন। মেলা প্রাঙ্গণে নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময়ই আমলে নেওয়া হয়। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে তা আরও জোরদার করা হয়েছে। নাশকতার আশঙ্কা কিংবা দুর্বৃত্তদের হামলা নিয়ে কঠোর নজরদারি, সব সময় চলতেই থাকে। ২০২৩ এর ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শুভ আর মঙ্গলময় হয়ে উঠুক। 


লেখক : সাংবাদিক

×