ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের অভিভাবকত্ব

-

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

মায়ের অভিভাবকত্ব

সম্পাদকীয়

নারীর ক্ষমতায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার হাইকোর্ট যুগান্তকারী এক রায়ে বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এতদিন পর্যন্ত তথ্য সংক্রান্ত ফরম পূরণের ক্ষেত্রে বাবা ও মায়ের নাম লেখার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা আর থাকছে না। এখন থেকে বাবা অথবা মা অথবা আইনগত অভিভাবকÑ এই তিনটির যে কোনো একজনের নাম ব্যবহার করলেই চলবে।
ঐতিহাসিক এই রায়ের মাধ্যমে অবশ্যই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন মায়েরা। উল্লেখ্য, ১৪ বছর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মায়ের নাম লিখে ফরম পূরণ করে পরীক্ষা দিতে না পারায় একজন শিক্ষার্থীর এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে দেওয়া হয় এই রায়। বাদীর পক্ষে রিটটি করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও নারীপক্ষ। এই রায়ের মাধ্যমে দেশে লিঙ্গবৈষম্য চর্চা দূরীকরণসহ প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় ও শিক্ষার অধিকারের বিষয়টি স্বীকৃত হলো।

বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে যেসব সাংবিধানিক বাধা রয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে প্রভূত সহায়ক হবে এই আইন। অন্যদিকে, এই রায়ের ফলে মা-বাবা নেই অথবা পরিচয়হীন যে কারও- যেমন পথশিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত হলো। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীর তথ্যসংক্রান্ত ফরম সংশোধনের মাধ্যমে বাবা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম যুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব শিক্ষা বোর্ডের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ফরমে অভিভাবকের ঘরে শুধু বাবা ও মায়ের নাম উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। তবে এই কথাও সত্য যে, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে। অবশ্য বর্তমান সরকার তা পূরণ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং সেসব বাস্তবায়ন করছে পর্যায়ক্রমে। 
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে গণপ্রতিনিধি অধ্যাদেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব মনোনয়নে অনেক এগিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই অধ্যাদেশে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ২৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, বর্তমানে নারী নেতৃত্বে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ধারেকাছেও নেই। আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা ২০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। 
বর্তমান শতাব্দীতে নারীর ক্ষমতায়ন একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে নারী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীরাই দেশ শাসন করে চলেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ অনেকেই নারী। এর পরও নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা নারী নেতৃত্ব দেশের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার গতি প্রত্যাশা অনুযায়ী মন্থর- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

নারীরা যাতে আত্মবিশ্বাসী, আত্মমর্যাদাশীল, সাহসী, স্বাধীনচেতা, উচ্চাকাক্সক্ষী যুক্তিবাদী, ন্যায়ের প্রতীক, যোগ্যতাসম্পন্ন, দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি হয়ে সমতার ভিত্তিতে অধিকার প্রাপ্তিতে এগিয়ে আসতে পারেÑ  সে জন্য নারী-পুরুষ সবাইকে কাজ করতে হবে একযোগে।

×