ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানতে হবে

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৬ নভেম্বর ২০২২

কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানতে হবে

এটিই হচ্ছে কূটনৈতিক শিষ্টাচার

ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী রাষ্ট্রদূতরা দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে কথা বলবেন, কাজ করবেন। এটিই হচ্ছে কূটনৈতিক শিষ্টাচার। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশী কূটনীতিকদের সরাসরি মন্তব্যের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। সর্বশেষ ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত বেশ কিছু কথা বলেছেন, যা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মাত্র কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রদূতের এ ধরনের মন্তব্য নিয়ে বিকর্তের ঝড় ওঠে। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুজনই পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে  দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকার জন্য কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানাতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন কূটনীতিকরা এ ধরনের কথা বলছেন বা বলতে পারছেন। দিল্লীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশের সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেন। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) ঢাকা ব্যুরো চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ সময়। বর্তমানে ইউএনবির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত এই সিনিয়র সাংবাদিক একটি টকশোতে বেশ স্পষ্ট করেই বললেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভারতে এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটে না।

কোনো বিদেশী রাষ্ট্রদূত ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা কখনোই দেখাবেন না। যদি  কেউ দেখাতে চান তবে তাকে অবশ্যই ভারত থেকে বহিষ্কার বা এ ধরনের কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।’ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে দীর্ঘদিন কাজ করা এই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশে কূটনীতিকরা এই ধৃষ্টতা দেখাতে পারছেন এদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কারণে।

তারা কারণে-অকারণে কূটনীতিকদের শরণাপন্ন হন, তাদের কাছে অভিযোগ দেন। স্বাভাবিকভাবেই কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলেন। এই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ মিটানোর জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান এসেছিলেন। এটি খুবই দুঃখজনক।’     
ফরিদ হোসেনের কথার সূত্র ধরে বলা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত পাঠানোর পরিস্থিতি এখনো বিরাজমান। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত। এমনকি নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন নিয়েও মন্তব্য করেন তারা। কমিশন গঠনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা নানা মতামত দিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূতদের এমন আচরণকে শিষ্টাচারবহির্ভূত উল্লেখ করে বিরক্তি প্রকাশ করে আসছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যেও জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, সমালোচনা চললেও তারা নাকি মন্তব্য চালিয়েই যাবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামানো কূটনীতিকদের নীতিমালা ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী। কোনো অভিযোগ থাকলে কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন তারা। কেবল শিষ্টাচার নয়, এমন আচরণ রাষ্ট্রাচারেরও পরিপন্থী। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকরা তাদের আচরণবিধি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন নিশ্চয়ই। তারা তা মেনে চলবেন এবং এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এখন আর কোনো দেশের কলোনি নয়। এটি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাদের এই কথা স্মরণ রাখা উচিত।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমাদের দেশের বিভিন্ন লোকজন বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করেন ও তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। এটি খুবই দুঃখজনক।

এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের  বেরিয়ে আসতে হবে। এই সংস্কৃতি আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে।’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘এদেশে নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকরা সীমা অতিক্রম করলে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কঠোর মনোভাবের পরও কূটনীতিকরা থেমে থাকছেন না। তারা তাদের কর্মকা- চালিয়েই যাচ্ছেন।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং  ফ্রেডরিক এবারট স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত মিট দ্য অ্যাম্বাসাডর অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখতে চায় জাপান। এর আগে আমরা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’
জাপান আমাদের উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র। বিভিন্ন প্রকল্পে মোটা অঙ্কের জাপানী সহায়তা রয়েছে। এসব সহযোগিতা অবশ্য নিঃশর্ত নয়। এর বিনিময়ে তাদের অনেক আবদার শুনতে হয়। সহযোগিতার অর্থও পর্যায়ক্রমে ফেরত দিতে হয়। শুধু সহযোগিতার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে এভাবে কথা বলা কতটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে নিশ্চয়ই তা ভেবে দেখতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী কোনো কূটনীতিক এভাবে কথা বললে এর প্রতিকার কি হতে পারে তাও সরকারকে ভাবতে হবে।  
জাপানি রাষ্ট্রদূত নিজে থেকে একথা বলেননি। এজন্য রীতিমতো একটি আয়োজন করা হয়েছিল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত এই মন্তব্য করেছেন। প্রশ্নটি ছিল আগামী নির্বাচন জাপান কিভাবে দেখতে চায়। নির্বাচনে কারচুপির বিষয়টিও ছিল সাংবাদিকের প্রশ্নে। তিন দশকের বেশি সময় সাংবাদিকতা করার সুবাদে এই প্রশ্ন করতেই পারি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী কূটনীতিকের কাছে এমন প্রশ্ন করা সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে কি না। সাংবাদিকতা আমার পেশা। সবার আগে আমি এই দেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্রের প্রতি আমার আনুগত্য ও দায়িত্ব রয়েছে। তাহলে আমি কেন একজন বিদেশীর কাছে এমন প্রশ্ন করব? এতে কি আমার দেশের সম্মান বৃদ্ধি পাবে?  
 দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা না বলা অবশ্যই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ। শুধু সাংবাদিকদের নয়, বিষয়টি আমাদের রাজনীতিবিদদের মনে থাকা উচিত। তারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন। দেশের স্বার্থ ও সম্মান রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বিশে^ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তোলার প্রধান দায়িত্ব তাদের।

রাষ্ট্রের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে দলীয় বা নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের কাছে যাওয়া শুধু অনৈতিক নয়, অপরাধ বলেও আমি মনে করি। শক্তিমান দেশের রাষ্ট্রদূতেরা জানেন এরূপ হস্তক্ষেপমূলক বক্তব্য দিলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না। কারণ দেশের রাজনীতিকরাই তাদের কাছে নানা অভিযোগ নিয়ে ধর্ণা দেন। তাই ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী হলেও তারা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমরা তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়তো করতে পারিনি। এজন্যও বাড়ছে এই প্রবণতা। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ সাতটি  দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা একযোগে টুইট করে বাংলাদেশের মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। করোনাকালে বিশেষ পরিস্থিতিতে কেউ যদি গুজব রটনা করে, মিথ্যাচার করে কিংবা এই মহাদুর্যোগের সময় পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্তে যুক্ত হয় তাকে কি স্বাধীনতা দেয়া যায়? নিশ্চয়ই না।

যুক্তরাষ্ট্রে সেই সময় ট্রাম্প প্রশাসন নির্দেশ জারি করেছিল, হোয়াইট হাউসের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া করোনাভাইরাস বিষয়ক  কোনো তথ্য সম্প্রচার করা যাবে না। গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার অভিযোগ করছেন, তাদের অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ও তার সহকর্মীরা মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন আসেনি।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার দেশে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যে বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা সেসব দেশের সরকারকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নির্শ্চিত করতে বলেনি।
বাংলাদেশের সরকারের কিংবা বিরোধী দলের সব কাজ অন্য দেশের পছন্দ নাও হতে পারে। একইভাবে অন্য দেশের সব কাজও আমাদের পছন্দ হবে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা আমাদের পছন্দ হয়নি। বাংলাদেশে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে নিয়োজিত পাকিস্তানি সৈন্যদের তারা অস্ত্র দিয়েছে, অর্থ দিয়েছে। গোটা বিশ্ব ছিল এর নিন্দায়  সোচ্চার।

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি তার দেশের সরকারের এ নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে কেনা গমের জাহাজ মাঝ সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বিচার বন্ধ না হলে জাতীয় নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ভ-ুল করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছিল যাত্রীবাহী বাস ও ট্রেনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে  দেওয়া হয়। সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়। জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়।

অর্থাৎ সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি শুধু ভয় দেখানোর জন্য ছিল না। বাস্তবেও এমন চেষ্টা হয়েছে। সে সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে বলা হতো ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’। তিনি দিল্লি গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের পর্যন্ত বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ গোপন কিছু ছিল না।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগেই পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থ সহায়তা বন্ধে অপচেষ্টা শুরু হয়। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর বরাদ্দ ঋণ বাতিল ঘোষণা করে। সে সময় বিশ^ব্যাংক প্রতিনিধি এলেন গোল্ডস্টেইন বলেছিলেন, ভবিষ্যতে এই প্রকল্পে ঋণ পেতে হলে বাংলাদেশকে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী সিদ্ধান্তের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল বিশ^ব্যাংক। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু ঢাকায় এসে স্বীকার করে গেছেন বিশ^ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর মতো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে, সেটা মাত্র ১০ বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এক পয়সা না নিয়েও এটা বাংলাদেশ করতে পারছে।’
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ধার ধারেন না। নিরাপত্তার অজুহাত  দেখিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছিলেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের মানুষের সস্তা ভারতবিরোধিতা কাজে লাগিয়ে তারা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চেয়েছিলেন। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির সফরের সময় হরতাল দেওয়া হয়েছিল। জবাব হিসেবে তারাও বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ বাতিল করেছিল। এসব ইতিহাস সবার জানা।

বিষয়গুলো আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে বিবেচনায় রাখতে হবে। কোনো দল ক্ষমতায় চিরস্থায়ী নয়। আজকে যারা বিরোধী দলে থেকে কূটনীতিকদের সহায়তায় ক্ষমতায় যেতে চান, তারাও একদিন বিদেশী দূতাবাসের কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গের শিকার হতে পারেন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে দেশের প্রচার মাধ্যমেরও। কেউ কিছু বললে, সেটি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী হলেও ফলাও করে প্রচার করার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।

পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সাত  দেশে কূটনীতিকদের টুইট বার্তা পদক্ষেপসহ নানা বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক ও শিষ্টাচার পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন, প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফল খুব একটা হয়নি। রাষ্ট্রদূতদের এই ধারণা ভাঙতে হবে। আমরা যদি বিশ^ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করতে পারি, তবে রাষ্ট্রদূতদের এই ঔদ্ধত্য কেন ভাঙতে পারব না। আর্তসম্মানের স্বার্থে এ বিষয়ে সরকারের সাহসী পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে  দেশবাসী।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×