ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পল্লীতে পর্যটন

মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৫ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ২২:৫৬, ৫ অক্টোবর ২০২২

পল্লীতে পর্যটন

পল্লীতে পর্যটন

সমাজ সংসার রাষ্ট্র ধর্ম- চতুর্বেনীর এই চতুর্ধারার মহামিলনে মানব সভ্যতার মহান যাত্রায় ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা... একটি শিশির বিন্দু।’ গত ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হলো বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প-িতদের বিশেষ নিবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তারা নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন। দেশের বড় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দেশী-বিদেশীদের আকৃষ্ট করার বিভিন্ন কৌশলের কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন নীতিমালা কথা। এর বাস্তবায়নের কথা। কেউ বলেছেন নিরাপত্তার কথা। তাদের মতে- এই শিল্পকে কাজে লাগাতে পারলে জিডিপির ১০ শতাংশ আসতে পারে এই খাত থেকে।
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা-মৌলিক চাহিদার এই পাঁচটি স্তরের সঙ্গে ‘বিনোদন’ নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। শহরের ইট-পাথরে কৃত্রিম কাঠিন্যে সংসার রাজ্যের হাঁসফাঁসের মাঝে সুখের অনুভূতি কি সত্যি অধরা?  উচ্চবিত্ত বা যাদের সামর্থ্য আছে তারা হয়ত বেরিয়ে পড়েন দূরে কোথাও নদী-পাহাড় কিংবা প্রকৃতির নির্জনতায়। আবার শীতকালে সাংগঠনিকভাবে বিভিন্ন পেশার মানুষ পিকনিকের বিশেষ বিনোদনে নিজেদের মাতিয়ে তোলেন। এ ক্ষেত্রে তারা দূরে কোথাও বিশেষ স্থান কে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু গ্রামের সাধারণ জনগণ যাবে কোথায়? দারিদ্র্য আর সংসারের যাঁতাকলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুয়োগ পাচ্ছে কি? তাই উঁকি দিচ্ছে গ্রামীণ পর্যটন সম্ভাবনার বিষয়টি।

বিগত কয়েক বছরে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের ফলে জীবন সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। খাদ্যাভাসেরও পরিবর্তন ঘটেছে। চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটেছে। বন্দী জীবনে শৃঙ্খল থেকে মুক্তাকাশে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে তারা বেরিয়ে পড়ছে গ্রামের আঁকা-বাঁকা পাকা রাস্তা ধারেকাছেই কোথাও মুক্ত দিগন্তে। বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সদ্যসদের নিয়ে ঢুকে পড়েছেন এলাকাতেই কোন একটি ক্যাফে হাউজে। রাস্তার পাশে ধানক্ষেতের ওপর কিংবা মুক্ত জলাশয়ের ওপর এমন ক্যাফে এখন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

বাঁশ কিংবা হুগলাপাতা কিংবা ধানের খেত- প্রকৃতির বাহারি রঙ্গে সাজানো কোনটি থাই আবার কোনটি চাইনিজ সাজে। রঙ্গিন আলোকচ্ছটায় সন্ধ্যায় গ্রামীণ পরিবেশ  হয়ে উঠে যেন এক স্বপ্নপুরী। শুধু গ্রামের মানুষই নয়, পার্শ্ববর্তী শহরের নতুন জেনারেশন কিংবা কর্মজীবী মানুষও গ্রামের এসব আনন্দ-বিনোদন কেন্দ্রে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। তারা বলছে শহরে প্রকৃতি নেই, বিনোদনও নেই। ইট-পাথরের বন্দী জীবন বিষিয়ে উঠছে।
সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠছে এসব ‘গ্রামীণ রিক্রিয়েশন কেন্দ্র্র’। উচ্চশিক্ষিত গ্রামীণ তরুণ-তরুণীরাই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। ভবিষ্যত চাকরির বাজার যেখানে সঙ্কুচিত সেখানে শিক্ষিত বেকারদের এমন উদ্যোগ যেন ‘উদ্যোক্তা’ তৈরির একটি নতুন সেক্টরের সৃষ্টি করেছে। উঁকি দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতির একটি নতুন কেতনের।

মনিরামপুর, যশোর থেকে

×