ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ৩ অক্টোবর ২০২২

ঢাকার দিনরাত

ইডেনে পড়া মেয়েদের ওপর ঢালাওভাবে কুৎসিৎ নিন্দাবর্ষণ চলছে

রোববার উত্তরাবাসীদের জন্য ছিল খুবই কষ্টের দিন। ভোরের বৃষ্টিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডের গোলচত্বর এলাকায় প্রায় হাঁটুপানি জমে যায়। এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকায় কেউ তিন ঘণ্টা কেউ বা চার ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েন। আবার ঢাকায় ঢোকার মুখে আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজট হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে বিমানবন্দর এবং রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল।

বিমানবন্দর এলাকায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে এমনিতেই মহাসড়ক এখন অনেকটা সরু। এর মধ্যে বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে থাকায় চালকেরা খানাখন্দ ও গর্ত বুঝতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পথে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। উত্তরা মডেল টাউনের মাঝবরাবর প্রধান সড়ক প্রায় গোটা দিনই স্থবির যানবাহনে পরিপূর্ণ ছিল।  

তুমুল আলোচিত ইডেন কলেজ ইস্যু
ঢাকার মহিলা কলেজগুলোর ভেতরে ইডেন কলেজ সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত। বর্তমানে কলেজটিতে ৩৫ হাজারেরও বেশি ছাত্রী শিক্ষালাভ করছেন। আজিমপুরে ১৮ একর জমির ওপর এটি প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত হলেও এই নামে বিদ্যায়নের প্রথম প্রতিষ্ঠা ঢাকায় দেড় শ’ বছর আগে। ছাত্র রাজনীতির জন্যও এর সুখ্যাতি ও কুখ্যাতি দুটোই রয়েছে। দুঃখজনক হলো ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নানাবিধ কর্মকা-ের কারণে ইডেনের সুনাম নানা সময়ে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। অধুনা ছাত্র রাজনীতির সূত্র ধরে ছাত্রীদের ওপর হুমকি নির্যাতন চালানোর প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে কলেজটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

যার জের ধরে বিলুপ্ত হয়েছে ছাত্রলীগ শাখার কমিটি। কলেজটিতে ৬টি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। হলের সিট বাণিজ্য ও ছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত করার অভিযোগ ওঠার পর সমাজ যেন নড়েচড়ে বসেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলেগত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ২৫ সেপ্টেম্বর দিনভর উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা, সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

এ ঘটনায় সেদিন রাতেই ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধী পক্ষের ১২ নেত্রীসহ ১৬ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অস্থিরতার ঘটনায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ইডেন কলেজে অস্থিরতা চলাকালে বহিষ্কৃত নেত্রী সামিয়া আক্তারসহ কয়েকজন অভিযোগ তোলেন, তামান্না ও রাজিয়া সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা গত মঙ্গলবার কলেজের ফটকে ‘অনৈতিক কাজে বাধ্য করার’ অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেন। মুশকিল হলো সবকিছু ছাপিয়ে এখন ইডেনে পড়া মেয়েদের ঢালাওভাবে কুৎসিৎ নিন্দাবর্ষণ চলছে। কয়েকজনের জন্য পঁয়ত্রিশ হাজার নারী শিক্ষার্থীকে দোষারোপ করা এবং তাদেরকে হাসি-ঠাট্টা-টিপ্পনির আপত্তিকর বাণে বিদ্ধ করার প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করা চাই।
মহিলা পরিষদ বিবৃতিতে বলছে:  সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের দাপটের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি বন্ধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

ইডেন কলেজের ঘটনায় মহিলা পরিষদ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ  প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলে, সম্প্রতি ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সাংঘর্ষিক অবস্থানের কারণে ছাত্ররাজনীতির কলুষিত নগ্ন রূপটি সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে দেখা যাচ্ছে, ইডেন কলেজে ছাত্রসংগঠনের ক্ষমতার অপব্যবহার এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও ছাত্রসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, আসন-বাণিজ্য ও প্রযুক্তির অপব্যবহার সাধারণ ছাত্রীদের অবস্থান সঙ্কটময় করে তুলছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমাজে প্রচলিত নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ, যা একই সঙ্গে নারীর শিক্ষার সুযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা তৈরি করে। ছাত্রলীগের দাপটের কারণে আজ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন।
সাবেক ইডেন শিক্ষার্থী জেসমিন ওরিয়নের ফেসবুক পোস্ট আলোচিত হচ্ছে যৌক্তিক কারণে। সেখানে তিনি লিখেছেন: ‘ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের মারামারি দেখছি। যা দেখছি আমরা এখন তা মোটেও নতুন কিছু না। আমাদের সমাজের নৈরাজ্য এবং রাজনৈতিক দুর্দশা নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। এই অবস্থা দীর্ঘকাল ধরেই চলছে। বাইরে ইডেন কলেজের সুনাম নাই। অনেক সময় ইডেনের মেয়েদের সম্পর্কে নির্দয় মিথ্যাও শুনতে হয়েছে। আমি ইডেনেরই মেয়ে। আমার মনে ক্ষত তৈরি হয়।

আমি নিশ্চিত আমার মতো যেসব মেয়েরা ইডেনে পড়ে গিয়েছেন, তাদেরও কষ্ট পাবার কথা। আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় এই ছাত্রী থাকা। ইডেন হোস্টেল আমাকে কম কষ্ট দেয়নি। কিন্তু প্রাণে ধরে রাখার মতো স্মৃতিরও অভাব নাই।
আমি পক্ষপাতদুষ্ট হতে চাই না। কিন্তু এখন খবরে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছি তার সঙ্গে আমার নিজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে কিছু কথা বলব। আমি ক্ষুব্ধ। কারণ, ইডেনের এক এক রুমে আটজন-দশজন করে মেয়ে থাকে। মেয়েরা কষ্ট করে লেখাপড়া করে, অধিকাংশই নিম্নবিত্ত বা গরিব ঘরের মেয়ে। আমার মতো।

অথচ এক রুমে গাদাগাদি করে থাকার সমস্যা সমাধান কিংবা হলের সংখ্যা বাড়াবার জন্য কাউকে এক কলম কিছু লিখতে দেখিনি বা  শুনিনি। এখন বিশাল খবর হলো ছাত্রলীগের মারামারি এবং জোর করে ইডেনের মেয়েদের দিয়ে খারাপ  কাজ করাবার গল্প। খুব চটকদার সন্দেহ নাই। কিন্তু  ইডেনের ছাত্রী হিসেবে বাড়াবাড়ি আমি মেনে নিতে পারছি না।
ইডেনের প্রাক্তন ছাত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ  ইডেনের এখনকার ও পুরান সব ছাত্রীর প্রতি মিনতি জানিয়ে বলছি, ঘটনা আসলে কি ঘটেছে নিরপেক্ষ ভাবে আমাদের জানা দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার ইডেনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে গরিব ও নিম্নবিত্ত মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা লাভ করবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধতা তৈরির প্রয়াস বন্ধ করা। ইডেনের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা নতুন নয়। কিন্তু একটা এসপার ওসপার হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, আমরা মেয়েরা উচ্চশিক্ষা চাই। আমরা গরিব বলে ইডেন এখনও আমাদের ভরসা।
ছাত্রলীগের নেত্রীদের আচরণ খারাপ, তা মিথ্যা নয়। গত দেড় দশকে সারাদেশের অধঃপতন ও বিকারের কারণে আরও মন্দ হবারই কথা। কারণ, ছাত্রলীগ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত। এই পরিস্থিতিতে যে প্রতিবাদ হচ্ছে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। কিন্তু সেটা এখানে আমার বিষয় না। যারা রাজনীতি ভাল বোঝেন, তারা বলতে পারেন। আমার কথা সহজ ও সরল- ইডেন ও ইডেনের মেয়েদের সম্পর্কে  খামাখা কুৎসা রটাবেন না।
ইডেন মহিলা কলেজ আমার প্রিয় স্থান। আমার হল, হলের ছাদ, পুকুর, পুকুরপাড়, মাঠ, আমার বাংলা বিভাগ আর ইডেনের অনেক মেয়ে আমার চোখে ভেসে ওঠে। এই ভেসে ওঠায় কোন জোর-জবরদস্তি নেই। এক প্রকার কষ্টের আনন্দ আছে। চোখ ভিজে যায়। আবরারের মতো নৃশংস ওই ন্যক্কারজনক ঘটনা যদি ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীরা ঘটায়, তবে সাধারণ ছাত্রীরা ললিপপ মুখে গুঁজে বসে থাকবে না নিশ্চিত। যত অঘটন ঘটায় ছাত্রলীগ।  সেখানে সাধারণ ছাত্রীদের অবস্থান স্বতন্ত্র। নেত্রীরা বেড়ে উঠতে পারে, বাড়াবাড়ি করে।  সেই ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কি করে? তাদের অবস্থান কোথায় জানতে চান। তবেই মীমাংসা সম্ভব।
সমস্যা আছে, অস্বীকার করবার উপায় নাই। কিন্তু সমস্যার সমাধানের পথ হচ্ছে সঠিক ঘটনা জানা, বিচক্ষণতা এবং বাজে প্রপাগাণ্ডা বন্ধ করা।’

ব্যতিক্রমী তোয়াব খান
তোয়াব খান তো কেবল একজন সৃষ্টিশীল সম্পাদক ছিলেন না, ছিলেন সংবাদপত্রকে যুগপৎ সমকালের ও আগামী দিনের তথ্য-বিনোদন-শিক্ষা সমৃদ্ধ আধুনিক পাঠমাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার মেধাবী স্থপতি। শনিবারে তাঁর চিরপ্রস্থান-সংবাদ আমাদেরকে আবেগময় ও স্মৃতিকাতর করেছে। সেই তরুণ বয়সে, যখন আমি দৈনিক বাংলার বাণীর সাহিত্য সম্পাদক (রাজনৈতিক কলাম বিভাগেরও সম্পাদক) ছিলাম, এবং খবর পেলাম মতিঝিলে আমাদের কার্যালয়ের কাছেই জনকণ্ঠ পত্রিকার অফিসে তোয়াব খান যোগ দিয়েছেন, তখনই চেয়েছি খ্যাতিমান এই সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করতে, কাজ শিখতে।
সংবাদপত্রের বাইরে, মাসিক প্রকাশনা হিসেবে স্বতন্ত্র অথচ সংবাদপত্রের সহযোগী একটি ম্যাগাজিনের পরিকল্পনা নিয়ে একদিন তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনাও করে এসেছিলাম। তিনি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। স্বল্পকালের ভেতরে সেটি চালু হয়নি বলে আমারও তাঁর সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। (পরে অবশ্য তিনি পাক্ষিক ম্যাগাজিন করেছিলেন, আমি তখন অন্য কর্মস্থলে) বহু বছর পরে যখন সুযোগ এলো, তখন তিনি আশির আরশিতে দাঁড়ানো। বলছি ২০১৪ সালের নভেম্বরের কথা। যুক্ত হলাম জনকণ্ঠে। তার অল্প ক’দিনের মধ্যেই চালু হলো এই কলাম- ‘ঢাকার দিনরাত’।

মোট পাঁচটি নামের প্রস্তাব করেছিলাম, সেখান থেকে তোয়াব ভাই এ-নামটি বেছে নেন। (আমার প্রস্তাবিত ‘সমাজ ভাবনা’ বিভাগটিও তিনি অনুমোদন করেন) রোববার কলামটি লেখার দিন। পরদিন তাঁর কক্ষে এডিটোরিয়াল মিটিং শুরু হলে এটির প্রিন্ট কপি তাঁর টেবিলে রাখতাম। পুরো লেখাই তিনি পড়তেন। মনে হতো শুধু একজন সম্পাদকের পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, কৌতূহলী পাঠক হিসেবে তিনি লেখাটি সানন্দে পাঠ করছেন।
প্রথমদিকে লেখার দু-তিনটি শব্দ বদলে দিতেন, কোনো বাক্যাংশ যোগ করতেন লাল কালিতে। অল্প কয়েক সপ্তাহের ভেতরে লক্ষ্য করেছিলাম, আমার লেখার কপি প্রায় লাল-দাগহীন থাকতে লাগলো। কোনোদিনও ‘ঢাকার দিনরাত’ কলামের অংশবিশেষ বা কোনো স্তবক বাদ দেননি তিনি। তবে লেখায় উল্লেখিত কোনো দিক নিয়ে আরও বেশি করে জানতে চাইতেন।
সে যাক, তাঁর সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের যে বৈঠক হতো, তাতে জনকণ্ঠের সুনির্দিষ্ট কাজের বাইরে জীবন-জগৎ-বহমান বিশ^ বিষয়েই বিচিত্র আলাপ-আলোচনা হতো। আর প্রায়শই তিনি স্মৃতিচারণ করতেন পুরনো দিনের। যা আমাদের জন্যে ছিল শিক্ষণীয়। বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যধন্য ছিলেন বলে কখনো কখনো আমরা বঙ্গবন্ধুর কথা জানতে চাইতাম। যদিও তিনি নিজের থেকেই বঙ্গবন্ধুর গল্প বলতেন, আর আমরা গোগ্রাসে তা গিলতাম। আজ আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় তোয়াব ভাইকে স্মরণ করতে গিয়ে বহু কথাই ভিড় করে আসছে। আবেগকে সংযত করে তাঁর নিজের বলা কিছু দরকারি কথা তুলে দিয়ে ইতি টানবো।
বেশ ক’বছর আগে নিজ বাসভূমে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দেয়া উষ্ণ সংবর্ধনার প্রতিক্রিয়ায় তোয়াব ভাই সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতদের প্রতি দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি যা বলেছিলেন তার কিছু অংশের লিখিত বিবরণ তুলে ধরলে সেটি হবে এমন:  ‘সংবাদপত্র কিংবা সমধর্মী কোনো মিডিয়ায় যারা কাজ করেন তারা কি প্রত্যেকেই সাংবাদিক? সাংবাদিকতা পেশার সকল পেশাজীবীই হয়ে উঠতে পারেন না প্রকৃত সাংবাদিক। তাই ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তরা অনেক সাংবাদিককে ‘সাংঘাতিক’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

আমরা কথায় কথায় বলে থাকি সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকতা অবশ্যই একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে নিজের জন্য নয়, ব্যক্তিবিশেষ কিংবা কোনো শেণী বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। সে কারণেই এখন বহুল উচ্চারিত দুটি টার্ম হচ্ছে- হলুদ সাংবাদিকতা ও অপসাংবাদিকতা। এ দুটো আসলে একই। সাংবাদিক যদি ‘ভাড়াটে’ লোকের মতো তার পেশাকে ব্যবহার করেন তাহলে তা সমাজ তথা দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বলা সমীচীন সংবাদপত্রকে প্রতিটি সূর্যোদয়েই পাঠক তথা দেশের নাগরিকদের সমীপে উপস্থিত হতে হয়; প্রতিটি দিনই তাকে সত্যবাদিতা ও ন্যায়নিষ্ঠার পরীক্ষা দিতে হয়। সংবাদপত্র সতত তাই জবাবদিহিতার মুখোমুখি। তার সম্পাদকীয় নীতি স্বচ্ছ, ইতিবাচক, গণমুখী, ও দায়িত্বশীল হবে- এটাই প্রত্যাশিত।’
০২ অক্টোবর, ২০২২
[email protected]

×