ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন বিশেষ সংখ্যা ২০২২

শুভ হোক

সেলিনা হোসেন

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

শুভ হোক

শেখ হাসিনা

বর্তমান বাংলাদেশে শেখ হাসিনা শুধু একটি নাম মাত্র নয়, তার গৌরবময় অর্জন পুরো দেশকে বিশ^বাসীর সামনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে দীপ্ত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন গৌরবের শিখরে আছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতায় এবং মানবিক বোধের সচেতনতায় তিনি দেশনেতার আলোকবর্তিকা। গণমানুষকে কাছে টেনে রাখার স্বপ্ন তার বিবেকসঞ্জাত নৈতিক বোধ। দেশের উন্নয়ন ভাবনা তার মেধা এবং স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতার কাছ থেকে পাওয়া আশীর্বাদ তাকে উচ্চতার মাপকাঠি উত্তরণে সহায়তা করেছে।
তিনি শুধু নিজ সন্তানের মা নন, নারী হিসেবে গর্ভধারণ করেন প্রকৃতির নিয়মে। এই অর্থে তিনি সন্তানের জননী। মা-মেয়ে-মাতৃভূমি ইত্যাদি শব্দের দ্যোতনায় তিনি লাখো মানুষের মা। যে মায়ের ছায়াতল লাখো মানুষকে ¯েœহের আশ্রয়ে কল্যাণ দান করে। তিনি মাতৃভূমির ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টিকারী মা। দেশের মাটি, মানুষ, প্রকৃতি এমন মায়ের খোঁজে উদগ্রীব থাকে।
বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর শেখ রেহানা তার গ্রন্থ ‘জনসমুদ্রে এক মহানায়ক’ রচনা করেন। এই বইয়ে একটি প্রবন্ধ আছে ‘আমার হাসু আপা’ শিরোনামে। প্রবন্ধের এক জায়গায় তিনি লেখেন- ‘মা-বাবা, ভাইদের হারিয়ে হাসু আপা হয়ে ওঠে আমার অভিভাবক, আশ্রয়। লেখাপড়া বন্ধ, এক অসহায় এতিম অবস্থায় দিন কাটে আমার। হাসু আপা না থাকলে আমার পক্ষে বেঁচে থাকাই খুব কষ্টের  হতো। হাসু আপাই আমাকে আব্বা-মা’র মতো স্নেহ-ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে এখনও জড়িয়ে রেখেছে।’
আর এক জায়গায় লিখেছেন- ‘১৯৯১ সালে আমার স্বামী যখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন হাসু আপা দলের কাজ ফেলে রেখে আমার কাছে ছুটে যান। সেবাযত্ন করে তাকে বাঁচিয়ে তোলেন। আমার ও বাচ্চাদের পাশে থেকে সাহস যুগিয়ে মায়ের ভূমিকা পালন করেন।’
নিজের ছোট বোনের কাছে এভাবে তিনি মায়ের স্নেহের জায়গাটি পেয়েছেন। এটাই তার চরিত্রের ভিন্ন মাত্রা। সাধারণ মানুষের উর্ধে অসাধারণ মানুষের গৌরব লাভ।
মিয়ানমার থেকে নিপীড়িত হয়ে দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা সংখ্যায় ছিল কয়েক লাখ। এসব মানুষকে তিনি পরম মমতায় যত্ন করেছেন। আশ্রয় দিয়েছেন। লাখো মানুষের বেঁচে থাকার অর্থ তিনি যেভাবে পূরণ করেছেন সেখানে তিনি একজন অসাধারণ মানবী। লাখো মানুষের মা হয়েছিলেন। এই কারণে তিনি বিদেশ থেকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি লাভ করেন। যে কোন রাষ্ট্রনায়কের পক্ষে এ এক অসাধারণ অর্জন।

আমাদের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এই অর্জনে অভিসিক্ত হয়ে দেশবাসীকে গৌরবান্বিত করেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি গণমানুষের দারিদ্র্যবিমোচনে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছেন। নারীদের শিক্ষা-চাকরির ব্যাপারে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ তার দূরদৃষ্টি, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার একটি বড় দিক। কিশোরী মেয়েদের শিক্ষিত করার পরিকল্পনা এখন নিয়মিত কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য তিনি বড় ভূমিকা পালন করেছেন। নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার প্রতিরোধে তিনি আইন পাস করেছেন।

ধর্ষকের মৃত্যুদ- অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আইনে। এটা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হলে সামাজিক মূল্যবোধের জায়গা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরা চাই না বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ গ্রাস করে ফেলুক। জনজীবনের চেতনা থেকে নৈতিক বোধ যেন ডুবে না যায়।
শুধু তাই নয়, ধর্মীয় মূল্যবোধও ধর্ষকের মাঝে কাজ করে না। এসব থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আইনের বাস্তবায়ন একটি বড় দিক। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণে এনে বাঙালী জাতিকে মূল্যবোধহীনতা থেকে রক্ষা করবেন, এটা দেশবাসীর একান্ত প্রত্যাশা। মাতৃত্বের বোধে শেখ হাসিনা উদ্দীপ্ত হয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্বে থাকায় দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার কর্মযজ্ঞে মহামিলনের যোগসূত্র স্থাপন করেছে। বাবা ও মেয়ে দু’জনই দেশের জন্য মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ। বাঙালীর জন্য উৎসর্গ করা বঙ্গবন্ধুর জীবনের মহীরুহকে ধারণ করেছেন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তার সামনে আলোকদীপ্ত উৎসব।
তিনি নিজে উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কর্মযজ্ঞে এগিয়েছেন বিশে^র দরবারে। তার শাসনের একযুগের মধ্যে বাংলাদেশ (এরপর ১৮ পৃষ্ঠায়) উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি পিতার মহতী চেতনা আত্মস্থ করেছেন জনগণের কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে। তার শাসন ব্যবস্থার নানা দিক গণমানুষকে স্বস্তির-শান্তির জীবনযাপন দিচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়ার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেড়ে ওঠা শিশু মুজিবের দীপ্তস্রোতে মধুমতি নদী বয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। কারণ, যে জীবনকে ধারণ করে বাঙালীর মানসভূমি বঙ্গবন্ধু চর্চিত করেছেন অসাধারণ চিন্তায়, তা মধুমতী নদীর স্রোতে বহমান থেকেছে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধুর জীবনধারার এই বহমানতা পুরো বাংলাদেশের মানুষের মানসলোকের উর্বরভূমিকে অনবরত সমৃদ্ধ করেছে। মানুষের মনভূমি তারই অনুপ্রেরণায় গড়ে তুলেছে স্বাধীনতার স্বপ্নভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ভারতবর্ষের রাজনীতিতে তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি ভারতবর্ষের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই ব্যতিক্রমধর্মী অর্জন আর কারু দ্বারা হয়নি। ২০২১ সালে তার ১০১তম জন্মদিনে গৌরবে সিক্ত হয়েছি আমরা দেশবাসী। স্মরণের বালুকাবেলায় তিনি আমাদের সামনে এক অবিস্মরণীয় মানুষ।
টুঙ্গিপাড়া জন্মগ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনাও। পিতার জন্মভূমি থেকে তিনিও ধারণ করেছেন মাটি ও মানুষের স্বপ্ন। দেখেছেন টুঙ্গিপাড়ার মধুমতি নদী, দেখেছেন অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি,  এ সবই ধারণ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবার রাজনীতির যোগসূত্রও ধারণ করেছেন নিজের মধ্যে। ছাত্রী জীবন থেকে যুক্ত হন রাজনীতির সঙ্গে। বাবার উত্তরাধিকারী হয়ে রাজনীতির সঙ্গে গড়ে তোলেন নিজের সচেতন বোধ। বাংলাদেশের ইতিহাসে বাবা-মেয়ের যোগসূত্র ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশে^ নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যিক প্রামাণিক দলিলে সংরক্ষিত হয়েছে। বিশে^র মানুষের সামনে এ এক গৌরবময় অর্জন। ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নিজেও অনেকগুলো পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ধরনের আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিশে^র সামনে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করেছে। আমরা দেখতে পাই, পিতা থেকে মেয়েকে, দেখতে পাই শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনাকে- এভাবে সামনে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। অপেক্ষা আগামী দিনের। তবে, একটি বিষয় আলোচনায় আনতে হয়।

কারণ, একটি ঘটনায় দেশবাসী প্রবলভাবে মর্মাহত হয়। পরিত্রাণের উপায় খোঁজে।
শুধু দুর্নীতি ও নারী-শিশু ধর্ষণ সমাজ ব্যবস্থাকে অবক্ষয়ের দিকে টানার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিবেদন, এই দুটো বিষয় কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করার। আমরা যেন সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে পতিত না হই। নৈতিক মূল্যবোধের সচেতনতায় দেশবাসী যেন বাংলাদেশকে বিশে^র সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে।
শেখ হাসিনা তার ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ : কিছু চিন্তাভাবনা’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘দেশ ও জাতির জন্য ত্যাগী, দেশপ্রেমিক মানুষের বড় প্রয়োজন। ক্ষমতা অর্থ-সম্পদের মালিক হবার জন্য নয়, জনগণের জন্য কাজ করা, জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করা, জনগণের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করা - এই চিন্তা চেতনা নিয়ে ক্ষমতায় না গেলে দেশ ও দশের কোন উন্নতি হবে না। গত ১৯ বছরে হয় নাই। ৮৬ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বাস করে। এ লজ্জা আমরা রাখব কোথায়?’
‘মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই বুঝি আবার দ্বার অবারিত হতে পারে।’
তার এই স্বচ্ছ চিন্তা মানবিকবোধে উদ্দীপিত। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকে তিনি ক্ষমতার দ- বলে মনে করেন না। রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ কাজ এভাবে তার চিন্তায় তাকে উদ্দীপিত করে। এভাবেই শেখ হাসিনা মানবিক চেতনার দীপ্ত শিখা। তার একটি লেখা আছে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। প্রবন্ধের এক জায়গায় লিখেছেন : ‘অনুন্নত দেশের প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করছি, সমাজের বঞ্চিত মানুষের জন্য। সমাজের লাভবান গোষ্ঠী কোন দিনই তা পছন্দ করে না। কারণ, লাভবান গোষ্ঠী হচ্ছে সংখ্যায় ক্ষুদ্র, বঞ্চিত গোষ্ঠী সংখ্যায় অনেক বড়। কিন্তু যারা ক্ষুধার্ত, পীড়িত, ক্ষীণ কণ্ঠের অধিকারী, তাদের পক্ষ নিতে গিয়ে আমাকে অনেক প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু আমি যখন দেখি, কী ভয়ানকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তখন আমার মন ব্যথিত হয়।’
এই লেখাটি ১৯৯৩ সালের ২৪ মে লেখা হয়। তখন তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন না। এখন তিনি সব বাধা অতিক্রম করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন। কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন সামগ্রিক দুরাবস্থাকে। এটাই ক্ষমতার জায়গার বড় শক্তি। ব্যথিত মন নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিহত করা প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধানের গুরুদায়িত্ব।
শেখ হাসিনা আর একটি প্রবন্ধ লিখেছেন- ‘শিক্ষিত জনশক্তি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত’ শিরোনামে। সূচনাতে তিনি লিখেছেন- ‘একটি জাতিকে গড়ে তুলতে হলে প্রথম সোপান হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। আমরা যদি বাংলাদেশের চির অবহেলিত দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি ও সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করি, তাহলে শিক্ষাই হচ্ছে পূর্বশর্ত।
বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সংগ্রামের সাধনা ছিল- বাংলার মানুষের স্বাধীনতা। তিনি বলেছেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন খাদ্য পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান পায়, শিক্ষার সুযোগ পায় এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’
জাতির জীবনে শিক্ষার অসীম গুরুত্ব সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুই আমাদের পথ প্রদর্শন করে গেছেন।’
(‘দারিদ্র্য দূরীকরণ কিছু চিন্তাভাবনা।’)
এভাবে তিনি তার মানস-চেতনায় একজন আলোকিত মানুষ।
ছাত্রীজীবন থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কলেজে পড়াকালে তিনি কলেজছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াকালে তিনি একইভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-নেতৃদের সঙ্গে যুক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৮ সালে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে সামরিক ট্রাইব্যুনালে বঙ্গবন্ধুসহ তৎকালীন সামরিক-বেসামরিক বাঙালীপ্রেমীদের বিরুদ্ধে আনীত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হলে আসামি পক্ষের বক্তব্য আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে সঠিক তথ্যের আদান-প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি শেখ হাসিনাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পালন করেন।

বিশেষ করে তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী ষড়যন্ত্র মামলার কার্যক্রম আপাতকালীন সময়ের জন্য স্থগিত রেখে সরকার আহুত ইসলামাবাদে গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর যোগদান না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকার বিষয়ে গৃহীত আসামি পক্ষের আইনী ফোরামের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নির্দেশে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পালন করতে হয়। ঢাকা সেনানিবাসে প্রবেশ করার ওপর ওই সময় কঠিনতম কড়াকড়ি আরোপিত ছিল।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধুর সম্মতিক্রমে ছোট বোন রেহানা এবং নিজের দুই শিশু সন্তান নিয়ে জার্মানিতে অবস্থানকারী স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কাছে যান। ১৫ আগস্ট ’৭৫-এর নির্মম মর্মান্তিক হত্যাযঞ্জের পর পিতা-মাতা, ভাই-ভাইদের স্ত্রী, শিশু রাসেলকে হারিয়ে শোকের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু খুঁজে বেড়িয়েছেন।

পরীক্ষিত বন্ধু এবং বন্ধু নয়- এমন সব দেশের নেতা, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই সময়ের সামরিক জান্তার ভূমিকা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবৃন্দকে হত্যাকারীদের বাংলাদেশের বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসিত করে। দেশ-বিদেশে শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার মেধা ও দূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। সবক্ষেত্রে তিনি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা দেশ ভারত এবং এর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের কতিপয় আওয়ামী রাজনৈতিক নেতা এবং ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধা ওই সময়ে ভারতে আশ্রিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ রাজনীতিক অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে ভারত সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনরূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার বিষয়টি ছিল শেখ হাসিনার চিন্তা, ভাবনার বিপরীত বিষয়। পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত দর্শন- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার এবং রাজনৈতিক দলে নেতা-নেতৃত্ব পরিবর্তনে তিনি সততায় আস্থাশীল।
১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বার্ষিক সম্মেলনে ডেলিগেট সেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন সংগঠনের শতভাগ জননন্দিত সভাপতি ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’। দলনেতা হিসেবে তার জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

×