ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণচোরাদের মুখোশ উন্মোচন

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ০০:০৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বর্ণচোরাদের মুখোশ উন্মোচন

-

বিশ্বকবি রবিঠাকুরের ‘ন্যায়দন্ড’ কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উপস্থাপনে নিবন্ধের সূচনা করছি। ‘ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,/ হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা তোমার আদেশে।/ যেন রসনায় মম সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম তোমার ইঙ্গিতে।/ যেন রাখি তব মান তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান ॥/ অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/ তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে॥’ অত্যন্ত স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বল্প সংখ্যক অপরাধীর বিচার-বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। এতে জাতি শুধু কলঙ্কমুক্ত হয়নি, বিশ্ববাসীসহ সমগ্র মানবিক সমাজ হয়েছে অপরিসীম অনুপ্রাণিত। জাতি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রমাণ করেছে কোন অন্যায়-অবিচার কখনও নন্দিত হতে পারে না, তীব্র ঘৃণার বহির্প্রকাশে সমাজকে কলুষমুক্ত করার দৃষ্টান্তই সভ্যতার মৌলিক স্মারক। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য উল্লেখ্য, হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্র তৈরি-অপকৌশল প্রণয়ন-বাস্তবায়নের আড়ালে ক্ষমতা-অর্থলিপ্সু মানবরূপী দানবেরা বরাবরই আড়ালে থেকে যাচ্ছে। খুনী মোশতাক গংয়ের বশংবদরা অত্যধিক বংশ বিস্তার করে অভিশপ্ত নাগ-নাগিনীর ভয়ঙ্কর ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। এসব নিকৃষ্ট কুশীলবকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা না হলে এই বিচারকার্য পরিপূর্ণতা পেতে পারে না।  
জনশ্রুতিমতে, প্রতারণা-জালিয়াতি-মিথ্যাচার-ছলচাতুরী-অভিনয়শৈলী ও অবৈধ-অনৈতিক অর্থ লেনদেন-তদ্বির-লবিং বাণিজ্যের বদৌলতে শিক্ষা-উচ্চশিক্ষাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ সংস্থাসমূহ নষ্টদের দখলে প্রায় বশীভূত। এসব ঘৃণ্য অপরাধীর বিভিন্ন পদ-পদায়ন ও পদক আদায়ে কদর্য পারদর্শিতা সম্পর্কে দেশের সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশের আকাশচুম্বী উন্নয়ন মাইলফলক স্থাপন দেশ-জনগণকে বিশ্বপরিমন্ডলে উঁচুমাত্রিকতার মর্যাদায় সমাসীন করেছে। দেশপ্রেমিক-সৎ ও যোগ্য চৌকস ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও সত্য-বস্তুনিষ্ঠ-নিরপেক্ষ বিচার-বিশ্লেষণে মুখোশধারী বর্ণচোরাদের দেশবিরোধী অব্যাহত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র উন্মোচন অতীব জরুরী। দেশে অরাজক-অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্ধকারের পরাজিত শক্তিরা দেশকে পাকিস্তানী শাসনামলের ভয়াবহ অনগ্রসরতায় নিপতিত করতে তৎপর রয়েছে। অতিসম্প্রতি সম্মানিত একজন প্রাক্তন মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদের জাতীয় সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে এটি সহজে অনুমেয় যে, বঙ্গবন্ধুকন্যার জীবননাশের ষড়যন্ত্রও জোরদার হচ্ছে। বোকার স্বর্গে বসবাসকারী এসব দুর্বৃত্তের দিবাস্বপ্ন নস্যাৎ করতে  দেশের আপামর জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ।
হতদরিদ্র-দরিদ্র-নিম্ন মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্তের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ সমগ্র দেশের শহর-নগর-প্রান্তিক জনপদে নানামুখী আর্থ-সামাজিক প্রকল্পের সুফল ভোগ করছে। হাতেগোনা মাত্র ১০-১২ জন সিন্ডিকেট সদস্যের অশুভ অপতৎপরতায় রাষ্ট্রের সমুদয় সম্পদ করায়ত্ত করে দেশ-জনগণকে জিম্মি করার উদ্ভট পদচারণা সর্বত্রই পরিলক্ষিত হওয়ার প্রবল গুঞ্জন রয়েছে। সততা-যোগ্যতার শীর্ষে দুঃসময়ের সকল কান্ড‍ারীদের  কোণঠাসা করে ব্যক্তিস্বার্থে তারা যেকোন ধরনের অঘটন ঘটাতে পারঙ্গম। দেশে-বিদেশে এসব দুর্বৃত্তের অপকর্মের শেকড় এত বেশি গভীরে প্রোথিত যে, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ দুরূহ হয়ে পড়েছে। ন্যূনতম বিরুদ্ধাচরণ বা তাদের বিপক্ষে যায় এমন সব মন্তব্য-লেখালেখি-মত প্রকাশে সাহসিক ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে দিয়ে অহেতুক হয়রানি-নির্যাতন-নিপীড়নের ব্যবস্থাও তাদের কুক্ষিগত। প্রাসঙ্গিকতায় মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কর্তৃক কুমিল্লা সেনানিবাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রাঙ্গণে ব্যাচ পাসিং আউট প্যারেডে ১১ জানুয়ারি ১৯৭৫ তারিখ প্রদত্ত ভাষণের তাৎপর্য বর্তমান প্রজন্মের বোধে বারংবার স্পন্দিত করা আবশ্যক।
উক্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এত রক্ত দেয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয়নি। এখনও ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরি বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী। কিন্তু আর না, বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। .......... বিদেশ থেকে ভিক্ষে করে আমাকে আনতে হয়। আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে তা লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু ইমারজেন্সি দেই নাই। এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যদি ২৫ বছর এই পাকিস্তানী জালেমদের মধ্যে জিন্নাহ থেকে গোলাম মোহাম্মদ. চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করতে পারি আর আমার ত্রিশ লাখ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয় ইনশাআল্লাহ পারব। এই বাংলার মাটি থেকে এই দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর, এই মুনাফাখোরি, এই চোরাকারবারিদের নির্মূল করতে হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করুক।’
আমদের সকলের জানা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বীয় নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন দেশের মাটিতে পদার্পণ করে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১২ জানুয়ারি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হন।

দেশের মাটি, মানুষ, পরিবেশ ও প্রকৃতির গভীর ভালবাসায় দেশ পুনর্গঠনে নিবিড় মনোনিবেশ করেন। স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণভাবে অর্থবহ করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অপরিমেয় সাফল্যগাঁথায় অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে বাংলাদেশ যখন নতুন অভিযাত্রায় পদার্পণ করেছিল, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার হিংস্র কৌশলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয় সভ্যসমাজের ইতিহাসে সর্বনিকৃষ্ট, নৃশংস ও বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ।
উপরোল্লেখিত ভাষণে বর্ণিত দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মুনাফাখোর ও চোরাকারবারিরা অশুভ পরাজিত শক্তির যোগসাজশে মূলত ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধু-বঙ্গবন্ধু পরিবারভুক্ত সকল সদস্যকে নিয়ে কিছু না কিছু মিথ্যা-বানোয়াট-ভিত্তিহীন কুৎসা রটনায় নিয়োজিত ছিল। তারা ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তিকে ‘গোলামির’ জিঞ্জির হিসেবে শুধু আখ্যায়িত করেনি, নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের আচ্ছাদনে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির হীন উদ্যোগও গ্রহণ করে তারা। অধিকন্তু যথাসময়ে খাদ্যশস্যের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে বাজারে চালের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য, স্বল্পমেয়াদী ঋণ গ্রহণে সমস্যা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী বিশ্ব সম্প্রদায়ের অসহযোগিতায় ১৯৭৪ সালে চলমান দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা আরও জটিল করে তোলে। এই ক্ষেত্রে কিউবায় বাংলাদেশের পাট রফতানির নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ২ মিলিয়ন টন খাদ্য সহায়তা প্রদানে ধীরগতি কারও অজানা নয়। ১৯৭৫ সালের ৭ জুন রাজনীতিবিদ-শিক্ষক-সৈনিক-আমলাসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’-এর কাঠামো ঘোষণা করে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে বঙ্গবন্ধুর ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ কর্মসূচী গ্রহণে স্থিতিশীলতার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছিল। পাপিষ্ঠদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ সম্ভবপর নয়। ফলে সময়-পরিস্থিতি-অসহনীয় জনদুর্ভোগের কৃত্রিম সঙ্কটের বৈরী প্রচারে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ক্ষেত্র সৃষ্টির নীলনকশা প্রণীত হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন দায়িত্বশীল রাজনীতিক ব্যক্তিত্বের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যায় খুনী মোশতাক গং-সহযোগী সেনা কর্মকর্তা-নষ্টধারার কথিত উগ্র ডান-বামপন্থীসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন দিবালোকের মতো সত্য-প্রমাণিত। হত্যাকা-ের এক মাস আগে থেকে প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের মার্কিন দূতাবাসে যাতায়াতের প্রমাণ ২০০৫ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের পাঠানো বিভিন্ন তারবার্তার গোপন দলিলে পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টারের পাঠানো তারবার্তা (সিক্রেট ডকুমেন্ট নম্বর ২১৫৮) অনুযায়ী ১৯৭৪ সালের ১৩ মে কর্ণেল ফারুক উচ্চতম পর্যায়ের বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চায়। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যসূত্র মতে ১৯৯২ সালে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফারুক স্বীকার করে যে, ১৫ মাস ধরে সে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা গুছিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করে খোলামেলা আলোচনাও করে। অভ্যুত্থান বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পরিকল্পনা শুনে জিয়া সশরীরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে অস্বীকার করে, কিন্তু তাদের নিজেদের মতো করে এগিয়ে যওয়ার নির্দেশনা দেয়। অপরপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেসামরিক নেতৃত্বকে রাষ্ট্রপতির পদে রাখার জন্য খন্দকার মোশতাকের সঙ্গেও তারা এ বিষয়ে বৈঠক করে। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য মোশতাকও তাদের চূড়ান্ত পরিকল্পনায় সহমত পোষণ করে।    
সম্প্রতি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে বিভিন্ন মহল কর্তৃক একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের জোরালো দাবি উত্থাপিত হয়েছে।

এই ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টে রিট আবেদনও করা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় আপীল বিভাগের বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রকারী কুশীলবদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের তাগিদ দিয়েছেন। কমিশন গঠনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচারপতি মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, ‘কমিশন গঠন হলে এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত বের হয়ে আসবে এবং ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।’ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘একটি কমিশন হওয়া উচিত। কারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, দেশী-বিদেশী কারা সম্পৃক্ত ছিল একটি কমিশনের মাধ্যমে এটি উদ্ঘাটিত না হলে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে না যে, সেদিন কী ঘটেছিল। শারীরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে কয়েকজন সামরিক বাহিনীর লোক। তাদের বিচার হয়েছে, ফাঁসি হয়েছে। এটাই কী যথেষ্ট? ইতিহাসকে সঠিক পথে আনার জন্য আমার মনে হয় আমি যে প্রস্তাব রেখে গেলাম সরকার এটি বিবেচনা করবে।’
পরশ্রীকাতর-দেশবিরোধী-সুবিধাভোগী বিদেশী এসব অনুচর হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ-আবিষ্কার করার ব্যর্থতার কুৎসিত চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে এখনও দেশব্যাপী নানামুখী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করে চলছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শহীদ দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালী যখনই এগিয়ে যেতে থাকে তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। দেশের একটি শ্রেণী সেই অতীতকাল  থেকেই পরাধীন হয়ে থাকতে চায়। এদেশেই একটি শ্রেণী আছে যারা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই টিকে থাকতে চায়। তারা পরাধীন হয়ে থাককে পছন্দ করে। এদেশের গৌরব-সমৃদ্ধি-উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না। আমার অবাক লাগে তাদের চিন্তাধারা দেখে।’ বঙ্গবন্ধুর লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘বাংলাদেশের মাটি উর্বর, এখানে ফসলের সঙ্গে পরগাছাও জন্মায়। তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। সমাজে আগাছা থাকবেই। তাদের কী করে সরাতে হবে, তা বাঙালীকেই ভাবতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ সত্যবাদিতার পরিচায়ক উল্লেখ্য, বক্তব্যের আলোকে বাঙালী জাতিরাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক খুনী-বর্ণচোরাদের মুখোশ উন্মোচন ও এদের বিরুদ্ধে যথার্থ বিচার কার্যক্রম দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু-সম্পন্ন করার বুকভরা প্রত্যাশায় জাগ্রত রয়েছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

×