ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টরন্টোর চিঠি

চলে যায় বসন্তের দিন

শামীম আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

চলে যায় বসন্তের দিন

টরন্টোর চিঠি

গত শনিবার গিয়েছিলাম টরন্টোর বাইরে লন্ডন নামের একটি শহরে। এখানে প্রতিবছর দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিমান মহড়ার আয়োজন হয়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে। তিনদিনের আয়োজনে প্রায় ২০ হাজার গাড়িতে করে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। এখানে টিকেটের ধরনটা খুুব মজার। টিকেট বিক্রি হয় গাড়িপ্রতি। একেক গাড়িতে সর্বোচ্চ ৬ জন যাত্রী থাকতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার গাড়ি না থাকলে আপনি এই বিমান মহড়া চাইলেও দেখতে পারবেন না। এই পুরো আয়োজন হয় লন্ডন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর সাকুল্যে ১০ কিলোমিটারেরও অধিক জায়গা নিয়ে।

তাই গাড়ি ছাড়া আসলে এর নানা প্রান্তে গুছিয়ে আয়োজনটা দেখাও সম্ভব না। সারাবিশ্ব থেকে নানা ধরনের জঙ্গিবিমান আসে এই মহড়ায়। মানুষ প্রাণ খুলে দেখে। আমার আর বন্ধু শরীফের পরিবারের যাওয়ার সুুযোগ হলো নটর ডেমের আরেক বন্ধু বিপুলের বদান্যতায়। বিপুল দুই যুগ আগে কানাডায় পড়তে এসে এখানে থেকে গেছে। কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে এখন সে ও তার ব্যবসার অংশীদার মিলে কানাডার নানা জায়গায় প্রায় ২৩ টা ডোমিনেসের মালিক! ডোমিনেস কানাডার অন্যতম জনপ্রিয় পিৎসা হাউস। তারা লন্ডন বিমান মহড়ার অন্যতম স্পন্সরও বটে। ফলশ্রুতিতে বন্ধুতার সূত্রে দাওয়াত পেলাম এই মনোরম আয়োজনের ভাগীদার হতে। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে আয়োজন শুরুর আগে  লন্ডন শহরের আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান বি-২ এর আলতো করে ভেসে বেড়ানো দেখে। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না এই বিমান তার বুকে কত শত বোমা ধারণ করতে পারে যা অনেক ছোট দেশকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

যদিও টরন্টো থেকে যাওয়া আসায় প্রায় আড়াইশ’ কিলোমিটার গাড়ি চালাতে হলো কিন্তু বন্ধুদের সান্নিধ্যে ভাল একটা বিকেল কাটল সেদিন। আয়োজনস্থলে আরও দেখা হলো বিখ্যাত আলোকচিত্রক প্রীত রেজা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ছিলেন জনি ভাই। আসার সময় তার ছোট্ট মেয়ে হঠাৎ করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে বিদায় নিল যে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মনে হলো কতদিনের চেনা। আন্তরিকতার উষ্ণতা শিশুদের চাইতে বেশি আর কেইবা বোঝে!  
ভারতীয় ও পাকিস্তানী পত্রিকাগুলোয় এ সপ্তাহে একটা কৌতূহলোদ্দীপক খবর চোখে পড়ল। পাকিস্তানের বন্যা উপদ্রুত মানুষের জন্য বাংলাদেশ সরকার ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তা প্রত্যাহার করেছে। মূলত পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই ত্রাণ সহায়তা না নেবার জন্য তাদের সরকারকে বাধ্য করেছে।

তারা মনে করছে, বাংলাদেশ থেকে এই দান নিলে বহির্বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। প্রায় প্রতিটি পত্রিকার রিপোর্টের বক্তব্য একই। এই খবর বাংলাদেশের পত্রিকায় এসেছে আরও দুদিন পরে। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রাণের পরিমাণ যথেষ্ট নয় এটিও একটি বিবেচ্য বিষয় ছিল পাকিস্তানের কাছে! আমার কাছে পুরো বিষয়টি হাস্যাস্পদ মনে হয়েছে। বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কেমন আমরা তা জানি। সেটি আর ক্ষুণœ হবার কোন সুযোগ নেই। মূলত পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখনও ১৯৭১-এ আমাদের মুক্তিবাহিনীর কাছে ভয়াবহ পরাজয়ের লজ্জা মেনে নিতে পারেনি।

যেহেতু তারা মূলত পাকিস্তানের শাসক, তাই সরকারকে এই ধরনের বিভ্রান্তমূলক দিকনির্দেশনা দিয়ে মূলত তারা তাদের জনগণের প্রয়োজনীয়তাকেই ছোট করল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানকে সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে যথার্থ কাজই করেছিলেন। বিশ্বের যে কোন মানবিক সঙ্কটে তার যে নেতৃত্বদানকারী অবস্থান তা অতীতের শত্রুতার কারণে বাধাগ্রস্ত হয়নি। পাকিস্তান সরকারের এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত তাদের অপরিপক্বতাকে উৎকটভাবে উন্মোচিত করল। কিন্তু বাংলাদেশের যে সাহসীস্বরূপ, তাতে তা আদৌ কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
আমি কানাডায় লিবারেল পার্টিকে মৌন সমর্থন করি তাদের সহনশীলতা, সাম্যতা ও ন্যায়ের প্রতি আস্থামূলক রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে। এই দলের নেতা জাস্টিন ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী। আমি লিবারেল পার্টির সমর্থক হলেও মনে করি জাস্টিন ট্রুডো কানাডার মতো দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে সবসময় যথাযথ ভূমিকা নিতে সমর্থ নন। বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমরনীতিতে কানাডা দিন দিন শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কিন্তু এক সময়ের উন্নত ও প্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র যেমন যুক্তরাজ্য, রাশিয়ার ক্রমাবনতির মধ্য দিয়ে কানাডার মতো স্বল্পসংখ্যক রাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অবস্থান নেবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তা কানাডা পরিপূর্ণভাবে বুঝে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ধীরে ধীরে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে কানাডাকে তার আধিপত্য বাড়াতে যেমন দৃঢ় নেতৃত্বের দরকার, জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে তার অভাব বিদ্যবান বলে আমি মনে করি। তার ‘ঢ়ষবধংরহম ঢ়বৎংড়হধষরঃু’ টিভিতে দেখতে শুনতে ভাল হলেও এত শক্তিশালী একটি দেশকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট নয়। আমি জাস্টিন ট্রুডোকে তুলনা করি যুক্তরাজ্যের এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে। তুখোড় বক্তা, সুদর্শন, প্রত্যুৎপন্নমতি কিন্তু আসলে নিজের দেশের জন্য তেমন কার্যকরী নন, বরং টিভি চ্যানেল আর অন্য দেশের রাজনীতির চাইতে মুখপ্রিয়তাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া মানুষের জন্য তারা আকর্ষণীয় রাজনীতিক। যাই হোক, যুক্তরাজ্যের রানীর মৃত্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ কানাডাব্যাপী রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করেছিলেন।

তবে কানাডার প্রাদেশিক সরকারগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ফেডারেল সরকারের সব নির্দেশনা মানতে বাধ্য নয়। কানাডার সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য সারাদেশে এই ছুটি প্রযোজ্য হলেও এদেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশ অন্টারিও, যেখানে টরন্টো অবস্থিত, সেই প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচিত প্রধান, যাকে বলা হয় প্রিমিয়ার, অন্টারিওর সেই প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড বলেছিলেন, ‘অন্টারিও-টরন্টো সোমবার ছুটি উদ্যাপন করবে না, বরং অন্টারিয়ানরা চাইলে দুপুর ১টায় রানীর প্রতি সম্মান জানিয়ে নীরবতা পালন করতে পারে। এছাড়া অন্যান্য স্কুল কলেজে ও কর্মক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা এই দিন ছুটি না কাটিয়ে বরং নিয়মিত কাজ করবে ও রানীর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানবে। অন্টারিওর মাটির নিচের ট্রেন এইদিন দুপুুর ঠিক ১টায় রানীর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর বয়সের সমান ৯৬ সেকেন্ড যাত্রা বিরতি দেবে। ছুটি না কাটিয়েই অন্টারিয়ানরা এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করবে।’

ডাগ ফোর্ড ও প্রাদেশিক সরকার আরও বলেছিল, এই ছুটি পালন করে প্রদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থনৈতিক ক্ষতি হতো যা তারা করতে দিতে পারে না। উল্লেখ্য, ডাগ ফোর্ড লিবারেল পার্টির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল কনজার্ভেটিভ পার্টির একজন শক্তিশালী নেতা এবং অনেকে ধারণা করে তিনি ২০২৫-এ ট্রুডোর বিপক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করবেন। করোনার সময়ে ডাগ ফোর্ড জনগণের আস্থা অর্জন করেন এবং কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া প্রাদেশিক নির্বাচনে ট্রুডোর দলকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। উল্লেখ্য, এতদিন ধারণা করা হচ্ছিল জাস্টিন ট্রুডো তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবার লড়াইয়ে থাকবেন না এবং এই কারণে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে নিয়োগ দিয়ে তাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করছিলেন। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড জাতিসংঘের মহাসচিব পদের নির্বাচনে আগ্রহী এবং তিনি যদি এই বছরের শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হন, সেইক্ষেত্রে লিবারেল পার্টির দুর্গতি ঠেকাবার শেষ চেষ্টা হিসেবে ২০২৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে আরেকবার ট্রুডোকে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে দেখা যাবে।

এখানে বলে রাখা দরকার, বর্তমানে কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা ডাগ ফোর্ড নন। প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে হলে দলীয় প্রধান হতে হয়। আমার ধারণা, ২০২৫ সালের নির্বাচনের আগেই ডাগ ফোর্ড বর্তমান নেতাকে প্রতিস্থাপিত করবেন। শক্তিশালী নেতা হিসেবে ইতোমধ্যে ট্রুডোর ছুটির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ডাগ ফোর্ডের সিদ্ধান্ত ফেডারেল সরকারের মুখে চপেটাঘাতের শামিল এবং জনগণের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাগ ফোর্ডের আরেকটি রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার ফসল বলেই মনে হচ্ছে।
ট্রুডো ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সর্বাধিক আলোচিত নেতৃত্ব ও রানী এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। সেখানে ছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তবে বিশ্বের এত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তা বজায় রেখে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে নিতে বাস ব্যবহার করা হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষেত্রে। যুক্তরাজ্য, রাজতন্ত্র ও সবধরনের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিজস্ব সাজসরঞ্জাম, সাঁজোয়া বহর ও শতাধিক উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে একটি অগ্রগামী দল যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল। এছাড়া বেসামরিক পোশাকে আরও সহস্রাধিক নিরাপত্তাকর্মী জো বাইডেনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা যায়। ইউক্রেন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।
বিশ্ব যখন রাজতন্ত্রের ধারক ও বাহক রানীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিল, সেই ঐতিহাসিক মুুুহূর্তে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সাফ ফুটবলের ফাইনালে নেপালের নারী ফুটবল দলকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে এখন সাফ চ্যাম্পিয়ন। অসামান্য এই জয়ে উদ্ভাসিত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন, বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলকে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য শুভেচ্ছা, অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশের নারীরা  সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বে আসুক। অবশ্য বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ খারাপ। এর আগে আমরা দেখেছি, তারা দেশে ফেরার পর খুব সাধারণ বাসে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তাদের ঘরে ফেরে।

ফুটবল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা হয়ত বলবেন, নারী ফুটবলে কারও আগ্রহ নাই, এখানে স্পন্সর নাই, টাকা না আনলে আমরা টাকা খরচ করব কোথা থেকে। তাদের কথা ঠিক। কিন্তু কথার মধ্যে প্রচুর  কিন্তু আছে। গত ১৫ বছর ধরে বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা সালমান খান। এক বছর থেকে আরেক বছরে কিছুটা এদিক-ওদিক হলেও গড়পড়তায় সালমান খান সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নেন অক্ষয় কুমার। তৃতীয় সর্বোচ্চ আমির খান এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান শাহরুখ খান। এটি বিচ্ছিন্ন কোন বছরের হিসাব নয়, টানা ১৫ বছরের গড় এবং বেশিরভাগ বছরের নিয়মিত চিত্র। অথচ সালমান খান, আমির খান বা অক্ষয় কুমারের বার্ষিক আয় এক করলেও শাহরুখ খানের একার আয় তাদের সম্মিলিত আয়ের চাইতে বেশি, যদিও তার পারিশ্রমিক অন্যদের চাইতে কম। কেন? কারণ, শাহরুখ খান নিজেকে একটা ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন।

অনেক কর্পোরেট হাউসও শাহরুখ খানকে ব্র্যান্ডে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। আমাদের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কথাই চিন্তা করেন। বিসিবি থেকে তিনি যে পারিশ্রমিক পান, তার চেয়ে অনেক বেশি পান সম্ভবত তার বিজ্ঞাপন ও ব্যবসা খাত থেকে। সাকিব আল হাসানের নিজের কর্ম ও বাংলাদেশের কর্পোরেট জগত এই ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলেরও একটা ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করতে হবে। সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এবার হয়ত সেই ক্ষেত্রটা তৈরি হবে। এই দল দেশে ফেরার পর তাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় সংবর্ধনা দেয়া হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে দেখা করবেন, এবার তাদের ঘরে ফেরা আগের বারের মতো হবে না, তারা যাতে নিয়মিত সুযোগ-সুবিধা পায়Ñ এমনটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের বড় বড় ব্যাংক, বীমা, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কেন নারী ফুটবল দলের স্পন্সর হয় না? কেন সারাদেশে নারীদের জাতীয় ফুটবল লীগ হয় না? কেন ঢাকায় নারী প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় না? আর হলেও আমরা কেন জানি না? নিশ্চয় স্পন্সরশিপের অভাবে? ছেলেদের ফুটবলেও তো এখন আর দর্শক হয় না, তারপরেও তারা যদি স্পন্সরশিপ পায়, তাহলে নারী ফুটবল দলেরও পাওয়ার কথা। এই বিষয়ে বেসরকারী খাত এগিয়ে আসবে বলে আমি আশা করি।

আমি নিশ্চিত, ঢাকায় যদি ঠিকমতো নারী ফুটবল লীগ আয়োজন করা যায়, সেখানে দর্শক বেশি হবে, অন্তত পুরুষদের ফুটবলের চেয়ে বেশি হবে। দরকার হলে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশের নারী ফুটবল দলগুলোকে নিয়ে ঢাকার মাঠে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতা হতে পারে। স্পনসরদের এগিয়ে আসতে হবে। আর যখন বেসরকারী খাত এগিয়ে আসে না, তখন সরকারকে সক্রিয় হতে হয়। সরকার হয় নিজেদের প্রতিষ্ঠান যেমন বিমান বাংলাদেশ, পর্যটন বাংলাদেশ ইত্যাদির মাধ্যমে এমন পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে। অথবা বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করতে পারে, তারা যেন এই খাতে বিনিয়োগ করে। সরকারের কাজই হচ্ছে দেশের স্বার্থে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।
এদিকে পাতা ঝরার সময় এসেছে টরন্টোতে। দুপুর বেলা ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর হার্ট হাউসে যাবার পথে কুইন্স পার্কে হঠাৎই থমকে দাঁড়িয়ে দেখতে হয় পাতার রঙের খেলা। আমি নিজেকে বলি, মানুষই কেবল রঙ পাল্টায়, পাতার যে পরিবর্তন তা হয় তার মনে। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ে। ছাতা না খুললেও চলে, তবুও খুলতে কোন মানা নেই। রবিবার দুপুরের এই সময়টা পার্কে মানুষের দেখা পাওয়া ভার। দু’চারজন ছিন্নমূল মানুষ পার্কের বেঞ্চিতে মাথা এলিয়ে ঝিমুচ্ছে। কিছু প্রেমিকযুগল বিচ্ছিন্নভাবে এদিক ওদিক ওক কাঠের বেঞ্চিতে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে।

তাদের সঙ্গে হয় কুকুর, নাহলে বাইসাইকেল। কুকুরদের এবেলা আনন্দের সীমা নেই। তারা ছুটে বেড়ায় কাঠবেড়ালের পিছে, মিথ্যা ক্লান্তিতে জিভ বের করে সবুজ ঘাসে গড়াগড়ি খায়। শতবর্ষী হার্ট হাউসের মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ পেরিয়ে জিমে পৌঁছে দেখা যায়, অল্প কিছু শিক্ষার্থী শারীরিক কসরত করছে এদিক ওদিক। নতুন বছরে প্রায় ৩ বছর পরে ক্যাম্পাসে এসেছে হাজার হাজার জ্ঞানপিপাসু। অন্যদিন জিমের যন্ত্রগুলোর আশপাশে জায়গা পেতে ভিড় ঠেলতে হলেও শনি, রবিবারে অত চাপ নেই। এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখাটা যেমন করে খুব মনোযোগ দিয়ে, তেমনি ছুটির দিনগুলোকে উপভোগ করতে জানে তারা ঠিক ঠাক। তাই আমার মতো মধ্যবয়সী গবেষক আর অল্প  তরুণী দেখা যায় ট্রেডমিলে ছুটছে কীসের আশায় কে জানে।

কিছুটা এগিয়ে নিট্রো কমপাউন্ড প্রেসের সামনে পৌঁছে গেলে মুচকি হেসে স্বাগত জানায় প্রতিদিন দেখা হওয়া এক অদ্ভুত সুন্দর তরুণী। ওজন টানতে টানতে আমরা মনে মনে কথা বলি। বাইরে লিলুয়া বাতাস। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসে। কাছেই এক গির্জায় ঘণ্টা বেজে পৃথিবী ঘুমুতে যায়। তরুণী হেসে এগিয়ে আসে, আমিও মুচকি হাসি। পৃথিবী জানান দেয় বাইরে কিছু গাছে ফুল ফুটছে। ওদিকে সময়কে হার মানিয়ে চলে যায় বসন্তের দিন।

২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
টরন্টো, কানাডা

×