মাদক বাণিজ্যে রাঘববোয়াল
বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানচে আজ মাদকে ছেয়ে গেছে, মাদকের ভয়াল গ্রাস আজ কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ, ধ্বংস করে দিচ্ছে যুব সমাজকে। বাংলাদেশে মাদকের চাহিদা অনেক বেশি, তাই পাল্লা দিয়ে সরবরাহও অনেক। কিন্তু সরবরাহ যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি, তাহলে দিন দিন চাহিদা বেড়েই চলবে। বাংলাদেশকে মাদক পাচারের মাধ্যমও ধরা হয় এবং ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে তরল কোকেনের চালান ধরা পড়ে। আর এই চালান পাঠানো হয় বলিভিয়া থেকে। ১০৭ ড্রাম সানফ্লাওয়ার তেলের মধ্যে দুড্রাম কোকেন ছিল। পরে পরীক্ষা করেও কোকেন থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।
বাংলাদেশে কোকেন বিষয়ক অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। আর এসবে মাদকের শীর্ষে রয়েছে ইয়াবা। যেটা উত্তেজক মাদক হিসেবেও ধরা হয়। এছাড়াও হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিলের ব্যবহারও দেখা যায়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর উদ্ধার করেছে ৪৮ কেজি হেরোইন, ১৬ হাজার কেজি গাঁজা, দেড় লাখ বোতল ফেনসিডিল এবং ৫০ লাখ পিস ইয়াবা। এর বাইরে পুলিশ বিজিবি ও কোস্টগার্ডরা বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে। যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে সেটা বিক্রি হওয়া মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ মাদক ধরা পড়ে না।
বাংলাদেশেই শুধু ইয়াবা ট্যাবলেটেরই বিক্রি হয় ৪০ কোটির মতো। প্রতি ট্যাবলেটের দাম ২০০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের মাদকসেবীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারীও আছে। আমাদের দেশে মাদকের ব্যবহার কেন কমছে না এই প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। মাদক দ্রব্যের অবৈধ অর্থনীতির আকার এখন বেশ বড় । যদি বড় ব্যবসায়ী বলা হয়, তাহলে তেমন মাদক ব্যবসায়ী আছে পাঁচ হাজার। নেতা, পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাসহ অনেকেই জড়িত আছেন মাদক ব্যবসার সঙ্গে। বাংলাদেশে শুধু শহরেই নয়, গ্রাম এলাকাতেও দেখা যায় মাদকের ভয়াল থাবা। মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকারকে অবশ্যই কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে, মাদকের রুটগুলোতে টহল বাড়াতে হবে এবং যারা মাদকে আসক্ত সেসব যুব সমাজকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবেই আমরা জাতি হিসেবে মাদকমুক্ত একটি দেশ গড়তে পারব। আমাদের যুব সমাজও রক্ষা পাবে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে।
নন্দনকানন, চট্টগ্রাম থেকে