ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য

ডাঃ কামরুল হাসান খান

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ৫ জুলাই ২০২২

চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্য

পদ্মা সেতু উদ্বোধন

গত ২৫ জুন সগৌরবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন সেতুর রূপকার এবং বাস্তবায়নকারী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাতিনি এজন্য দেশে-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন এবং সবাই তাঁর নেতৃত্বের ওপর পুনরায় আস্থা এবং নির্ভরশীলতা প্রকাশ করেছেনপদ্মা সেতু উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ যেমন আনন্দ উসব করেছেন, তেমনি একইভাবে জাতীয় প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন

গুটিকয়েক নেতা বাদে শেখ হাসিনার এই সাহসী চ্যালেঞ্জের বিজয়কে দেশের আপামর জনগণ অভিনন্দন জানিয়েছে, আনন্দ প্রকাশ করেছেপদ্মা সেতুকে যেমন একাত্তরের পরে সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করছেন, তেমনি পাশাপাশি একাত্তরের পরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ মনে হয়েছেএই মহান অর্জনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা যেমন বহুগুণ বেড়েছে, তেমনি তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাও বেড়েছে বহুগুণচলমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে জনগণের এই ঐক্যকে সঙ্গে নিয়ে এখন প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক শক্তি এবং সামাজিক শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ করা

২০০৫ সালের ৩০ এপ্রিল এমনি একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলসেদিন ছিল পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রথম জাতীয় কনভেনশনঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পেশাজীবীদের উপচেপড়া ভিড়সমস্ত প্রাঙ্গণে পেশাজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, সাধারণ মানুষের ভিড়পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল জাতীয় নেতা আসবেন, সে কারণে উসুক পেশাজীবী-জনতা-গণমাধ্যম

একে একে এলেন তকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা, ড. কামাল হোসেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণতন্ত্রী পার্টির আজিজুল ইসলাম খান, সাম্যবাদী দলের দীলিপ বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির জাকির হোসেন এবং জাতীয় পেশাজীবী নেতৃবৃন্দএক গভীর স্বপ্ন আর আশা নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলোপেশাজীবীদের পক্ষ থেকে তাদের দেশ রক্ষার ২১ দফা উত্থাপন করা হলো, যা হাত তুলে সমর্থন করলেন উপস্থিত সকল জাতীয় নেতাপেশাজীবী নেতৃবৃন্দের পর একে একে বক্তব্য রাখলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসকল  নেতা ২১ দফা সমর্থন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তকালীন খালেদা-নিজামী সরকারের পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন

প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য রাখেন ড. কামাল হোসেনতিনি তাঁর বক্তব্যে বলেনÑ ‘এটা আমাদের জীবনের শেষ যুদ্ধশুধু দেখে যেতে চাই তরুণদের জন্য কিছু রেখে যেতে পেরেছিআর এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনাআমি তাঁর নেতৃত্বে একজন স্বেচ্ছাসেবক হতে রাজি আছিতিনি আরও বলেন, অসাধারণ এই কনভেনশন জনগণের ভেতর বিবেক-বুদ্ধি জাগিয়ে পেশাজীবী রাজনৈতিক এবং গণমানুষের ঐক্য গড়ে তুলতে মাইলফলক হয়ে থাকবেবক্তৃতা শেষে ড. কামালকে শেখ হাসিনার পাশের আসনে বসানো হয়শেখ হাসিনা ও ড. কামাল হোসেন পাশাপাশি বসে হাস্যোজ্জ্বল মুখে নিজেদের মধ্যে অন্তরঙ্গ বাক্য বিনিময় শুরু করলে উল্লাসে ফেটে পড়েন উপস্থিত পেশাজীবী জনতা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে আমরা যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুতএই কনভেনশন জাতীয় রাজনীতিতে মাইলফলক হয়ে থাকবেআমরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওয়াদা করলাম এবং শপথ নিলামরাজনীতির সঙ্গে পেশাজীবীদের ঐক্য হলে কোন অপশক্তি টিকতে পারবে নাঅর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হবেআমি নেতৃত্ব চাই না, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চাইআওয়ামী লীগ সব সময় ঐক্যের পক্ষে ছিল, ঐক্যের পক্ষে আছে এবং ঐক্যের পক্ষে থাকবেআমি মৃত্যুভয়ে ভীত নইযতক্ষণ বেঁচে আছি জনগণের পক্ষে কাজ করে যাব

ঐক্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে উপস্থিত পেশাজীবী জনতা দীর্ঘক্ষণ করতালিতে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের বিশাল মিলনায়তন প্রকম্পিত করে তোলেএ সময় শেখ হাসিনা ও ড. কামাল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাসিমুখে করতালি দিতে থাকেনজনতার উল্লাস ধ্বনির মধ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দুচারদিনের মধ্যে ঐক্যের ব্যাপারে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথকভাবে এবং একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবেমুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এ ঐতিহাসিক ঐক্যের সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশেসেদিন গণমাধ্যমে এবং পরেরদিন সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়ে ওঠে এই ঐতিহাসিক ঘটনা, যাকে বলা হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড়

দেশের মানুষ এতে উদ্বুদ্ধ হয়, সাহিত হয় এবং নতুন করে আশায় বুক বাঁধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের স্বপ্নেদেশে-বিদেশে আলোড়িত হয় এ ঘটনা এবং পত্রিকাগুলো ধারাবাহিকভাবে সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় লিখতে থাকেদীর্ঘ ১৫ বছর পর এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে পেশাজীবী-জনতার মুহুর্মুহু করতালি ও দীর্ঘ হর্ষধ্বনির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের শপথ নিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় ঐক্যমঞ্চের সভাপতি ড. কামাল হোসেন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে তকালীন বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে চলছিল নজিরবিহীন সন্ত্রাস, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি, অব্যবস্থা, নৈরাজ্য, হত্যা, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান, নারীর প্রতি বৈষম্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, প্রশাসনের নগ্ন দলীয়করণআর এমনি এক সর্বগ্রাসী হতাশাজনক পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শক্তিকে বিকল করতে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয় একুশে আগস্টের পৈশাচিক গণহত্যা- কালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়েএতে শহীদ হন আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী

দেশের সেই রক্তস্থা¯œাত ক্রান্তিলগ্নে জনগণের সচেতন অংশ হিসেবে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিসক, অর্থনীতিবিদ সমন্বয়ে গণতন্ত্র ও প্রগতির পক্ষের সকল জাতীয় পেশাজীবী সংগঠন মিলিত হয়ে ২০ ও ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৪ তারিখে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ গঠন করেনশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে সামনে রেখে ১৩ ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদআত্মপ্রকাশ করে

ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদকে কনভেনর এবং ডাঃ কামরুল হাসান খানকে সদস্য সচিব করে ও দেশের জাতীয় পেশাজীবী নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করে ৬৩ সদসের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়এতে গোটা দেশের পেশাজীবীদের মধ্যে ব্যাপক উসাহ লক্ষ্য করা যায়স্বতঃস্ফূর্তভাবে গঠিত হতে থাকে জেলায় জেলায় পরিষদের কমিটিএরপর দীর্ঘ সভা, আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে জাতীয় দাবিসহ পেশাজীবীদের ২১ দফা দাবি প্রণয়ন করা হয়পেশাজীবীদের ২১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং উন্নয়নের বিকাশ সাধিত হবেসংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে পেশাজীবীদের ২১ দফা উপস্থাপন করা হয় এবং সরকার, বিরোধী দল ও জনগণের সমর্থন আহ্বান করা হয়

২১ দফার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিসহ ৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন, সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ সকল হত্যাকা-ের বিচার, বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, স্বাধীন, নিরপেক্ষ, কার্যকর ও মর্যাদাবান নির্বাচন কমিশন, পেশাভিত্তিক জনপ্রশাসন, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী কার্যকর স্থানীয় সরকার গঠন, নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, প্রকৌশল বিভাগগুলোতে যথাযথ নীতিনির্ধারণ এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ

পেশাজীবী সংগঠনগুলো তাদের পেশার দাবি আদায়ের আন্দোলনে কোন ধরনের সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হতে বাধ্য হয়পরিষদ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং তকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, ড. কামাল হোসেন, ১১ বাম দল, জাসদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্নভাবে আলোচনা করেএ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করাযার ফল হচ্ছে ৩০ এপ্রিল ২০০৫

সকল রাজনৈতিক দল পেশাজীবীদের ২১ দফা দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় এবং পরে ১৪ দলের ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহারের ৯ দফায় পেশাজীবীদের ২১ দফা বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সুপ্রীমকার্ট আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিসক), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ আত্মপ্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তকালীন সরকারের প্রতিটি গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, গোলটেবিল বৈঠক, অবস্থান কর্মসূচী, বিবৃতি প্রদান, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করে আন্দোলন গড়ে তোলে

২ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা-ের প্রতিবাদে দেশের পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদদের এক বিশাল সমাবেশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়এটাই ছিল পরিষদের প্রথম উন্মুক্ত সমাবেশ১৪ দলকে সুসংহত রাখতে পরিষদ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে- জাতীয় শোক দিবস, ইফতার পার্টি, গণতন্ত্রের সেমিনারবিচারপতি কে এম হাসানের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী, কালীন রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য

২৮ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে বিএনপি-জামায়াত সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তরের দিনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ ও সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন যৌথভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ আয়োজন করে এবং সভা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নাগরিক মঞ্চস্থাপন করে যেখানে দিনব্যাপী পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ বক্তব্য রাখেনপরেরদিন থেকে ১/১১-এর পূর্ব পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজপথে পেশাজীবী-নাগরিক সমাবেশ করা হয়

প্রতিদিন রাজনৈতিক-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের বক্তৃতায় মুখরিত থাকত সমাবেশমাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানদফায় দফায় মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল শাহবাগ চত্বর থেকে হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব হয়ে পুরানাপল্টন মোড় পর্যন্ত

১/১১-এর পরও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ বসে থাকেনিযদিও ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদকে আর পাওয়া যায়নিড. কামাল হোসেন ৩০ এপ্রিলে জাতিকে দেয়া কথা রাখলেন নাতখন আরও বেশি বেগবান হয় পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কর্মকাণ্ড- হয়ে উঠে পেশাজীবী এবং রাজনীতিবিদের মূল প্ল্যাটফরমপ্রেসক্লাবের ভেতর-বাইরে পরিষদের সকল কর্মকা- পরিচালিত হতো প্রতিনিয়ত

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিষদ দেশব্যাপী দীর্ঘ সময় বিশেষ কর্মসূচী পালন করে৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ৬৬, ’৬৯, ’৭০-এর নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ৭৫ পরবর্তী পরিস্থিতিতে, ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে, ’৯৬-এর ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলনে, ১/১১-এর পরবর্তী সময়সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ দেশের পেশাজীবীদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা

বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কেবাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছেপেশাজীবীদের অধিকাংশ দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সরকার পরিচালনায়ষড়যন্ত্র থেমে নেই, পাশাপাশি থেমে নেই পেশাজীবীদের ভূমিকাযখনই প্রয়োজন হয় রাজপথে নেমে আসে পেশাজীবী সমাজ তাদের নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পাহারাদার হিসেবে

দেশে-বিদেশে আবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, ষড়যন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধেবাংলাদেশের হাজার বছরের সামাজিক রীতি-নীতি, সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিনাশ করা যাবে না, হয়ত সাময়িকভাবে অস্থিতিশীল করতে পারেবাংলার সমাজ কখনও মৌলবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দেবে নাযখন বাংলার তরুণ প্রজন্ম রুখে দাঁড়ায়, যখন মুক্তিযুদ্ধের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয় তখন স্বাধীনতাবিরোধী ধর্ম ব্যবসায়ী অপশক্তি পালিয়ে যায়

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রগতিশীল শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায়উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে কার্যকর সুশাসন এবং কঠোরভাবে দুর্নীতি দমন এখন সময়ের দাবি

পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে মানুষের মধ্যে যে ঐক্য লক্ষ্য করা গেছে সে ঐক্যকে ধরে রেখে এখন সময় দেশের সকল প্রগতশীল নেতা এবং দলকে ঐক্যবদ্ধ করাআগামী নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে দেশে-বিদেশে নানা তপরতা, নানা ষড়যন্ত্রএ অপতপরতা মোকাবেলা করার জন্য আবার নতুন করে চাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-ছাত্র সংগঠন-শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ইস্পাত দৃঢ় ঐক্যএকটি উন্নত, সুস্থ, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব

 

লেখক : অধ্যাপক, সাবেক উপাচার্য,

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

×