লাখো যুবকের প্রাণের সংগঠন, আলোকিত যুব সমাজ গড়ার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম, সর্ববৃহৎ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বপ্রথম যুব সংগঠন এই যুবলীগ। সুদীর্ঘ ৪৮ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ আজ ইতিহাসের অনন্য অধ্যায়। স্বাধীনতার পরপরই দেশগড়ার ক্ষেত্রে সেই তরুণ সমাজকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে চিন্তা থেকেই আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণিকে তরুণ প্রজন্ম সংগঠিত করে ‘যুবলীগ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। সেই থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ রচনার রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আত্মপ্রকাশ। অন্যভাবে বললে বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারি শেখ ফজলুল হক মণির আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পায়। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সদ্যস্বাধীন বাংলার যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয় শেখ মণির নেতৃত্বে। সেই থেকে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্য এবং সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ চার যুগে পদার্পণ করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আধুনিক কাঠামোয় পুনর্গঠন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আত্মপ্রত্যয়ী প্রগতিশীল যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে একটি যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা ছিল সময়ের দাবি। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্নির্মাণের কাজে বাঙালীরা ছিল দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ। ঠিক তখনই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে নবগঠিত জাসদ (অবিভক্ত) আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দেশের যুব সম্প্রদায়ের একটা অংশকে বিপথগামী করার চক্রান্ত শুরু করে। তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করাসহ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আবারও হুমকির মুখে ফেলতে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। এমন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে ও প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় দেশের যুব সমাজকে সুসংগঠিত সুশৃঙ্খল যুব শক্তিতে পরিণত করতে শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সালে ১১ নবেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রখর রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন যুবনেতা শেখ মণিরের হাত ধরে সেই থেকে মানবিক যুবলীগের পথচলা। প্রতিষ্ঠার পর দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলন ও সংগ্রামে যুবলীগ অবদান রেখে আসছে।
সময়ের হাত ধরে আজ যুবলীগের দায়িত্বে শেখ মণিরের বড় ছেলে। পিতার আদর্শিক চেতনায় যুবলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশপ্রেম ও সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় মানবিক যুবলীগের সুখ্যাতি অর্জনে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ কাজ করছেন। অর্থাৎ অতীতের সকল অনাকাক্সিক্ষত বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মণিরের প্রতিষ্ঠিত যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। বলা চলে, শেখ ফজলে শামস পরশের নেতৃত্বে এবার যুবলীগের নতুন যাত্রা শুরু। এই যাত্রায় পরশের পাশে তারুণ্যনির্ভর ত্যাগীরা যুবলীগকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৩ নবেম্বর অনুষ্ঠিত সংগঠনটির অষ্টম জাতীয় কংগ্রেসে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলামের প্রস্তাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলে শামস পরশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। দীর্ঘ এক বছর পর গত ১৪ নবেম্বর সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দেশব্যাপী চলমান অভিযানে ক্যাসিনো সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়ে যুবলীগের গত কমিটির অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতা বাদ পড়েছেন। গত এক বছরে নানা কল্যাণকর কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে মানবিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে পরশ-নিখিল পরিষদ। তাদের প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের যুবলীগ নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারী করোনা সঙ্কটে সারাদেশে যুবলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড দেশবাসীর আস্থা অর্জনে সামর্থ্য হয়েছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশের নির্দেশনায় মাঠ পর্যায়ে সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেছেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ অনেকেই। মানবিক কাজে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করায় সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জাতীয় সংসদে যুবলীগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
দেশের সঙ্কটকালীন যুবলীগের অবদান ইতিহাসের পাতায় পাতায়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’ দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের পাশাপাশি অপশক্তি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে বার বার রাজপথে রক্ত দিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। দেশবিরোধী সকল ষড়ষন্ত্র রুখে দাঁড়াতে, দেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণের স্বার্থে, সব সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুবলীগ বলিষ্ঠ ও জোরালো এবং আপোসহীন ভূমিকা রেখেছে। উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের হত্যার প্রতিবাদে ঘাতক বিরুদ্ধে আন্দোল করতে গিয়ে শহীদ হন বগুড়ার যুবলীগ নেতা আবদুল খালেক, চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা মৌলভী সৈয়দ আহম্মদসহ আরও অনেকে। ১৯৮৭ সালের ১০ নবেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, ১৯৯০ সালে বদর উদ্দিন আহমেদ শহীদ হন।
শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার লক্ষ্যে ও শেখ হাসিনাসহ নেতৃবৃন্দকে হত্যার চেষ্টা তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পরিকল্পিত ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে (এই হামলায় কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়), ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে লগি-বৈঠা আন্দোলন, ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লবে রাজপথে বলিষ্ঠ এবং জোরালো ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ১/১১ এর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের দেয়া মিথ্যা ও ষড়ষন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলে, তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুবলীগ অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলে। এ সময় বহু আওয়ামী যুবলীগের নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। ২০১৩ সালে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার কাজ শেষে দেশকে অস্থিতিশীল করার সকল ষড়ষন্ত্র এবং ৫, ৬ মে হেফাজতে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের আগুন বোমা, জ্বালাও সন্ত্রাসের দাঁত ভাঙা জবাব দিতে রাজপথে জোরালো অবস্থান নিয়েছিল যুবলীগ। আমি একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে খুব কাছ থেকে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম।
গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী গ্রহণ করে কর্মহীন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে মানবিক এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন যুবলীগ কর্মীরা। বিভিন্ন শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী, বেদে সম্প্রদায়সহ অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, সবজি, দুধ) ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে চল্লিশ লাখের বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা এবং করোনাভাইরাস সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও সাবান পৌঁছে দেয়া হয় প্রায় ১ কোটি জনসাধারণের পাশে ছিল যুবলীগ। এছাড়া করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এগিয়ে আসে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। শ্রমিক সঙ্কটে অসহায় কৃষক পরিবারের ধান কাটা কর্মসূচী ছিল মানবিক যুবলীগের অনন্য নিদর্শন। করোনা সঙ্কটকালীন ঘূর্ণিঝড় আমফান ও বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলায় যুবলীগ নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতাসহ জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান মানবিক যুবলীগের উদ্ভাবক যুব সমাজের অহঙ্কার শেখ ফজলে সামস্ পরশ এবং মাইনুল হোসেন খান নিখিল যুব সম্প্রদায়ের মানবিক পাঠশালা হিসেবে যুবলীগকে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছেন। এ কথা সত্য যে, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের মাঝে ট্রানজিট হলো যুবলীগ। যুবলীগ একটি প্ল্যাটফর্মের মতো কাজ করে এবং রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ব হওয়ার জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়। সেই প্রশিক্ষণ যুবলীগ থেকে পাচ্ছেন বলেই আজ অনেকে বড় বড় নেতা হয়েছেন। দেশের জন্য যুবলীগ থেকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। রাজনীতি করলে দেশকে ভালবাসতে হবে। যুবকদের অফুরন্ত শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের ভাবনায় যদি দেশের ভাবনা চলে আসে, তাহলে দেশ আর পিছিয়ে থাকবে না একজন কর্মী হিসেবে আমার সেই বিশ^াস রয়েছে। সেই পরীক্ষায় যুবলীগ আজ উত্তীর্ণ। তারুণ্যনির্ভর আজকের যুবলীগ হোক সকল কলুষমুক্ত এবং মানবিক কাজের সহায়ক ও নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়।
লেখক : সহ-সভাপতি
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ