কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সমাবর্তন। স্নাতক উত্তীর্ণ কৃতী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে উচ্চ শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার সারগর্ভ বক্তব্যে উঠে আসে বিশ্ববিদ্যালয় অবাধ ও মুক্ত জ্ঞানচর্চা এবং মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের তীর্থস্থান। আর একটি যোগ্য মানবজাতি তৈরিতে উচ্চ শিক্ষার পীঠস্থানগুলো ঐতিহ্যিক ও সময়ের যৌক্তিক আবেদনে আধুনিক বিশ্বমানের বিদ্যার্জনকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সঙ্গত কারণেই অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাও তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশমান যুগে সব ধরনের জ্ঞানচর্চায় নিজেদের গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। ফলে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী শক্তির নব আবিষ্কারে সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক জগতকেও আয়ত্তে আনতে উদ্যোগী হয়। গুণগত মানসম্পন্ন জ্ঞানচর্চা শুধু বিশ্ব পরিসরই নয়, আধুনিক সম্ভাবনাময় কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ তৈরিতে যুগান্তকারী অবদান রাখবে বলে রাষ্ট্রপতি দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন।
দেশের আগামীর ভবিষ্যত তরুণ প্রজন্মকে যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সেটা আরও গতিশীল করে আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ানোও সময়ের দাবি। তেমন সুচিন্তিত লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। দক্ষ ও আধুনিক মানব সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে যা সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে। তারুণ্যের জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে উন্নত দেশ গড়ার নিয়ামক শক্তি। সেখানে দেশপ্রেম, নীতি-নৈতিকতা, আদর্শনিষ্ঠতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতাকেও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করা জনস্বার্থেই জরুরী। অন্যায়-অবিচার আর দুর্নীতি প্রতিরোধে দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে পারে দেশের ভাবী প্রজন্ম। সত্য আর ন্যায়-নিষ্ঠতাকে সমুন্নত রাখতে প্রাসঙ্গিক সমস্ত কর্মপরিকল্পনাও সকলের দায়বদ্ধতা।
সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশে বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেনÑ কৃষিতে বিপ্লব জাগরণের মধ্য দিয়ে বাঙালীর আর এক সংগ্রাম শুরু হলো। সেটা ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির কথা। আরও বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। তেমন আদর্শিক বোধ থেকে দেশের মাটি ও মানুষের কথা ভেবে তাদের জীবন মান উন্নয়নের ব্যাপারটিও সামনে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের শিকড় বাংলার মাটি আর মানুষের মধ্যেই গ্রথিত। সে জায়গা থেকে তাদের পাশেও দাঁড়াতে হবে অর্জিত জ্ঞান আর সমৃদ্ধ তথ্যপ্রযুক্তির নিবিড় সহযোগে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আধুনিক জয়যাত্রা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃশ্যমান হচ্ছে। তাকে আরও বেগবান করে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে আয়ত্তে আনতে হবে। সেখানে উচ্চ শিক্ষা, উচ্চতর গবেষণা এবং শিক্ষার্থীর মেধা ও মনন বিকাশে সমন্বিত হবে বিশ্বমানের জ্ঞান সাধনা বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করে জনকল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে শুধু ব্যক্তি স্বার্থে নয়, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাক্সিক্ষত কল্যাণেও। দেশটা যেমন নিজের, একইভাবে সকলেরও। সঙ্গত কারণেই সর্বজনীন কল্যাণ কামনায় প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার্থীরা তাদের কর্তব্যনিষ্ঠার প্রমাণ দেবে সচেতন শুভকর্মে।