ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

কৃষি শুমারি

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কৃষি শুমারি

দেশে পঞ্চমবারের মতো কৃষি শুমারি পরিচালনা হচ্ছে। শনিবার ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে কৃষি শুমারি-২০১৮। বিশ্বখাদ্য ও কৃষি সংস্থার ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম ফর দ্য সেনসাস অব এ্যাগ্রিকালচার ২০২০-এর নির্দেশনা অনুযায়ী এই শুমারি পরিচালনা হচ্ছে। সারাদেশের এক লাখ ৬৭ হাজার ছয়টি এলাকায় গণনা কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে। এতে অংশ নেবেন এক লাখ ৩৮ হাজার ৮১৫ জন গণনাকারী। এর বাইরেও থাকছেন আরও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী। ১৬ কোটির বেশি মানুষের এই মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশের অগ্রসরে সবচেয়ে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জিত হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমির বিপরীতমুখী চাপ থাকা সত্ত্বেও উন্নতি থেমে নেই। বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্যশস্য উৎপাদন স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২-৭৩ সালের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে। ধানের উৎপাদন তিনগুণ, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ ও ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশগুণ। এমনকি ধান, গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে কৃষিখাতের অবস্থা ও অবদান সন্ধানে কৃষি শুমারি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতি দশ বছর পরপর এই শুমারি হয় শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে। এ শুমারির মাধ্যমে কৃষি খাতে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাতগুলোর পরিবার পর্যায়ে কৃষি খামারের সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করে সঙ্কলন ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবে। সেই সঙ্গে এ খাতে দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে; সে চিত্রও ওঠে আসবে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এ শুমারি পরিচালিত হবে। যাতে শস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কে সম্যক তথ্য অবহিত হওয়া যাবে। এ তথ্য থেকেই পরবর্তী অগ্রগতির কার্যক্রম ও পরিকল্পনা গ্রহণ সম্ভব হবে। দেশব্যাপী একটি শুমারি পরিচালনা করা কঠিন কাজ। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনও বাড়ছে। চাহিদার সমান উৎপাদনও হচ্ছে। শুমারির মাধ্যমে আগের তুলনায় দেশের কোন্ খাতে অগ্রগতি হয়েছে তার চিত্র পাওয়া যাবে। শুধু বৃদ্ধির উৎপাদন নয়, এর সঙ্গে যন্ত্রপাতি, সেচসহ সার্বিক বিষয়ে প্রকৃত চিত্র মিলবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কী সম্পদ আছে, কী ঘাটতি আছে, এসবের সঠিক তথ্য থাকলে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করতে সহজ হবে। এছাড়া কৃষি খাতের কাঠামোগত পরিবর্তন সংক্রান্ত উপাত্ত, ভূমি ব্যবহার, চাষের প্রকার ও ফসল বৈচিত্র্যের পরিসংখ্যান, সেচ, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত উপাত্ত থাকবে। দেশের সব সাধারণ থানা (পরিবার) এবং কৃষিবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক থানায় শুমারি পরিচালিত হবে। তালিকায় মোট পরিচালনাধীন জমির পরিমাণ, হাঁস, মুরগি, গরু ছাগল ও মহিষ ইত্যাদির সংখ্যা এবং খানা, মৎস্য চাষ ও মৎস্য শিকারে জড়িত কি-না এ বিষয়ক তথ্য থাকবে। বাংলাদেশে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে কৃষি খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ জীবনে দারিদ্র্য দূরীকরণ জাতীয় পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। সরকারের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে কৃষি জমির পরিমাণ, জমির ব্যবহার, কৃষক, শস্য উৎপাদন, মৎস্য উৎপাদন এবং প্রাণী সম্পদ বিষয়ে আহরিত তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। পঞ্চম এই কৃষি শুমারিতে সঠিক তথ্য সন্নিবেশিত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পরিকল্পনা গ্রহণ। প্রকল্প বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি গ্রহণ করা না হলে বিপর্যয় ঘটতে বাধ্য, যা কোনভাবে কাম্য নয়।
×