ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রশ্নফাঁস রোধে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

প্রশ্নফাঁস রোধে-

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সমাজে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দেয়ায় সরকার এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সামনের মাসেই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেন ফাঁস না হয় সে লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। যার ভেতর রয়েছে আজ (রবিবার ২৭ জানুয়ারি) থেকে পুরো এক মাসের জন্য সব কোচিং সেন্টার বন্ধা রাখা শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এবার এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে। কেউ সেটি খোলেনি এটি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্য বছরের মতো এবারও সব সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে। বলা দরকার, এসএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য শুধু শিক্ষক নয়, অভিভাবকসহ সব মহলের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অতীতে এসএসসি পরীক্ষার সময়েও একটি রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী দিয়ে কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসএসসি পরীক্ষার সুষ্ঠু ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং সভায় জানানো হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গুজব রটনার বিরুদ্ধে তীক্ষ্ন গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। গত বছর সকল পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসমুক্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে। গুজব রটনা প্রতিরোধে বিটিআরসি ও তথ্য মন্ত্রণালয় কাজ করবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হবে। সরকারী এক হিসাবে দেখা গেছে, ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়। ওই সময় থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারী তথ্য অনুযায়ী ৮২ বার বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরি ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ২০১৪ সালের জেএসপি, পিএসসি, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ২০১৫ সালে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্নফাঁসের তথ্যপরিসংখ্যানে বেসরকারী হিসাবে সংখ্যা আরও বাড়বে। এর মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত, বাতিল ও তদন্ত কমিটি হয়েছে মাত্র ৩০টি পরীক্ষায়। তদন্ত কমিটি হোতাদের চিহ্নিত করে প্রশ্নফাঁস রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করেছে, যেগুলোর বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেয়া দরকার। প্রশ্নপত্রের জাল ছিন্ন করার কাজটি যে দুরূহ তাতে কোন সন্দেহ নেই। পরীক্ষার শেষ নেই; শুধু স্কুল-কলেজের পরীক্ষা তো নয়, আছে সংগঠন ও সংস্থার নানা পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষা। সে সরকারী হোক কিংবা হোক বেসরকারী। সমকালে সংস্কৃতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যত পরীক্ষা তত যেন ফাঁস। প্রশ্নপত্র ফাঁসের চোরাবালি থেকে কোন পরীক্ষাই যেন বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাতে ফাঁস লাগছে নীতিনৈতিকতার গলায়, দেশের সামনের পথ চলায়। সত্যি বলতে কি, দেশে এখন খুব কম পাবলিক পরীক্ষা আছে, যার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি! ফাঁস হয়েছে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র ফাঁস, অবৈধ পথে তা গ্রহণ ও সমস্যার সমাধান না হওয়া আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ার আলামত। আমাদের প্রত্যাশা, নতুন শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাঙ্গনে সুবাতাস বয়ে আনার জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট হবেন। প্রয়োজনে তাঁকে ইস্পাতদৃঢ় ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সকল জাল ছিন্ন করে এ দেশে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা চাই।
×