গত বছরের প্রথম আসরে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল লাল-সবুজের পতাকা সুমন্নত রেখে ১-০তে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতেছিল। সেই উদ্দীপ্ত মনোবলে এবারও চ্যাম্পিয়ন ট্রফির দ্বিতীয় আসরে খেলতে গেল ভুটানে বাংলাদেশের উদীয়মান কিশোরীরা। নিতান্ত সাধারণ ঘর থেকে আসা লাল-সবুজের ফুলের স্তবক মারিয়া-তহুরা কিংবা মাহমুদাদের অনবদ্য দলীয় গতিময়তা প্রথম থেকে যে দুর্দান্ত পারদর্শিতায় দর্শক মাতিয়েছে শেষ অবধি সেখানে দৃশ্যমান হয় সুসংবদ্ধ ছন্দের পতন। টানা ৩ ম্যাচে অসামান্য খেলা উপহার দিয়ে কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের দল কিশোরীরা যেভাবে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে তা যেমন চমকপ্রদ, একইভাবে দর্শনীয়ও বটে। সূচনাটা হয় পাকিস্তানী নারী প্রতিপক্ষকে নিয়ে। মারিয়া-তহুরা এবং গোলরক্ষক মাহমুদার আধিপত্যে পাকিস্তানী ফুটবল নারীরা শুরু থেকেই নাজেহাল। ১৪-০তে বাঙালী নারীদের দাপটে অসহায় হয়ে পড়ে পাকিস্তানের কিশোরীরা। দর্শক মাতানো এই খেলায় মারিয়া-তহুরাদের চমক ছিল সাড়া জাগানোর। গোলরক্ষক মাহমুদারও কৃতিত্ব কম ছিল না। পাকিস্তানী স্ট্রাইকারদের গোলের ধারে-কাছে ঘেঁষতে না দেয়ার যে অভিনব পারদর্শিতা তাতেই পাকিস্তানীরা কাহিল হয়ে পড়ে। শেষমেশ ১৪-০তে পরাভূত করে বাঙালী তরুণীরা তাদের অসামান্য কৃতিত্ব দেশকে উপহার দেয়। পরবর্তীতে নেপালের সঙ্গেও জিতে যায় ৩-০তে। এ খেলায় অবশ্য মারিয়াদের রীতিমতো লড়াই করে জিততে হয়। সেমিফাইনালের শেষ খেলাতেও স্বাগতিক ভুটানকে ৫-০তে হারিয়ে দেয় গোলাম রাব্বানীর অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবলের কৃতী কিশোরীরা। এই অবধি লাল-সবুজের ফুলের সারিরা কোন গোলের মুখোমুখি হয়নি। দাপটের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে গোল দিয়ে সেই পর্যন্ত নিজেদের অপরাজেয় প্রমাণও করল। কিন্তু শেষ ভাল যার সব ভাল তার- এই অকৃত্রিম প্রবাদবাক্য আমাদের মেয়েদের চূড়ান্ত খেলার সব হিসাবকে গ-গোল করে দেয়। ধারাবাহিক সফলতায় আসে নিদারুণ ব্যর্থতা। আমাদের কিশোরীরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে এই চূড়ান্ত খেলায় জিততে ভারতকেও ৬৬ মিনিট ধৈর্য ধরতে হয়েছিল। ভারতের সুনিতা মা-ার গোলটি যখন হয় তখন খেলা শেষ হতে ২৫ মিনিট বাকি। ৩১ মিনিটেই ভারতের জয়ের স্বপ্ন আসতে পারত যদি গোলরক্ষক মাহমুদা তাতে বাদ না সাধত। বাংলাদেশও লড়াই করতে পিছপা হয়নি। হারজিতের খেলায় এক পক্ষকে পরাভূত হতে হয়। দুর্দান্ত খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একদিনের যে কোন খেলাকে বিবেচনায় আনা আসলে কঠিন। পেছনের অভিজ্ঞতাও তেমন কাজ দেয় না। কারণ ক্রিকেট-ফুটবল যাই হোক না কেন যেদিনের খেলা ফলাফলও হয় সেই মাত্রায়। প্রতিদিন একই রকম খেলা প্রদর্শন করা সম্ভব হয় না কারও পক্ষেই। তারপরও অভিনন্দন আমাদের কিশোরী খেলোয়াড়দের। বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে টানা ৩ ম্যাচে পরাভূত করে চূড়ান্ত খেলায় নিজেদের নিয়ে আসার জন্য রানার্সআপ হওয়াও তেমন কোন সহজ ব্যাপার ছিল না। আমরা আনন্দিত আমাদের কিশোরীরা প্রথম থেকে যে দাফটের খেলা প্রদর্শন করে দর্শক মাতিয়ে দিল সেই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জনের জন্য। সামনে সম্ভাবনাময় দিন তাদের খেলার জগতকে আরও দক্ষতার সঙ্গে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাবেÑ সেই প্রত্যাশায় গোটা জাতি।