ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটপাথ দখল

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১৬ নভেম্বর ২০১৬

ফুটপাথ দখল

মহানগরীর ফুটপাথ সম্পর্কে কোন ঢাকাবাসী যদি দার্শনিকসুলভ প্রশ্ন করেন- ফুটপাথ তুমি কার- তবে বিস্ময়ের কিছু থাকে না। ফুটপাথ কি পথিকের বা পথচারীর? নাকি হরেক রকম ব্যবসায়ীর? সম্প্রতি জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ঢাকার পুটপাথের বিচিত্র আখ্যান। পথচারীদের ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছেন প্রভাবশালীরা। সড়কে গ্যারেজ, গাড়ি মেরামত কিছুই বাকি নেই। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুটপাথগুলোতে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও ওই জায়গার ভাড়া দিতে হচ্ছে। কোথাও দৈনিক বা কোথাও মাসিক ভিত্তিতে। গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, জিপিও, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, দিলকুশা, ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ বহুকাল থেকে হরেক পণ্যের স্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। ফুটপাথ দিয়ে চলাচল দুঃসাধ্য। ঢাকার সড়ক ও ফুটপাথের বিড়ম্বনা এবং অব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি হয়। কখনও কখনও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। অব্যবস্থা নিরসনে কিছু উদ্যোগ গৃহীত হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শক্তপোক্ত থাকে। কিছুদিন পর আবার সেই পুরনো দশা। সারা বছরই রাজধানীর রাজপথের যে রূপ তা অত্যন্ত অসুস্থ ও বিড়ম্বনাময়। বিশেষত যানজট ঢাকার নাগরিক জীবনের বড় দু’তিনটি সমস্যার অন্যতম। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের দৈনিক দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় দিনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। যানজট নিরসনে সরকার স্বতন্ত্র মেট্রোপলিটন কর্তৃপক্ষ করতে চলেছে- এমন খবর ছিল স্বস্তিদায়ক। এতে সড়কের শৃঙ্খলা কিছুটা ফিরিয়ে আনা যাবে বলে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। রমজানে আমরা দেখেছি গুলিস্তানের ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে গিয়ে ঘটে গিয়েছিল তুলকালাম কা-। ফুটপাথের হকারদের সঙ্গে বিপণি বিতানের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকায় তখন সাময়িক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। গ্রেফতার হন বহুজন। ঢাকার ফুটপাথকে দখলমুক্ত করতে হলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কোন বিকল্প নেই, এ কথা আমরা আগেও বলেছি। প্রথম প্রথম কিছু সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক। নিয়মিতভাবে ফুটপাথ দখলমুক্ত করার অভিযান পরিচালনা করা হলে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে কঠোরতা দেখাতে পারলে রাজধানীর ফুটপাথ আবারও পথচারী চলাচল উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। দিন কয়েক আগে আবারও রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাথের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের পর মেয়র ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে শহরের ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চলবে- ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা নির্দিষ্ট একটি এলাকায় শুধু নয়, পুরো রাজধানীর বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাথ পুনরুদ্ধারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কথা হচ্ছে অবৈধ হকারদের উচ্ছেদ করা ন্যায়সঙ্গত, যদিও তাদের জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না। হকার পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে একবার হলিডে মার্কেট চালু করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। তখন সরকারী ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় হকারদের ব্যবসা করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর অধিকাংশই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে এসব হলিডে মার্কেট চালু হলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা অস্থায়ীভাবে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।
×